স্কিটসোফ্রিনিয়া
স্কিসোফ্রিনিয়া (ইংরেজি: Schizophrenia, /[অসমর্থিত ইনপুট: 'icon']ˌskɪts[অসমর্থিত ইনপুট: 'ɵ']ˈfrɛniə/ বা /ˌskɪts[অসমর্থিত ইনপুট: 'ɵ']ˈfriːniə/) একটি মানসিক ব্যাধি; একে প্রায়শঃ সিজোফ্রেনিয়া উচ্চরণ করা হয়৷ এ রোগের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে চিন্তাধারা এবং অনুভূতির প্রকাশের মধ্যে সঙ্গতি থাকে না৷[1] এর লক্ষণগুলো হলো উদ্ভট চিন্তা, বিভ্রান্তিকর বা অলীক কিছু দেখা, অসঙ্গতিপূর্ণ কথাবার্তা এবং অন্যরা যা শুনতে পায় না এমন কিছু শোনা। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিক বা কর্মক্ষেত্রে সচারচর অক্ষমতাজনিত অসুবিধার সম্মুখীন হন৷[1][2] স্কিটসোফ্রিনিয়ার লক্ষণগুলি সাধারণত বয়ঃপ্রাপ্তির সময় দেখা দেয় এবং দীর্ঘ দিন স্থায়ী হয়৷[2][3]
স্কিসোফ্রিনিয়া | |
---|---|
![]() একজন স্কিটসোফ্রিনিয়া আক্রান্ত রোগীর সূচীকর্ম করা কাপড় | |
শ্রেণীবিভাগ এবং বহিঃস্থ সম্পদ | |
বিশিষ্টতা | মনোরোগবিদ্যা |
আইসিডি-১০ | F২০ |
আইসিডি-৯-সিএম | ২৯৫ |
ওএমআইএম | ১৮১৫০০ |
ডিজিসেসডিবি | ১১৮৯০ |
মেডলাইনপ্লাস | ০০০৯২৮ |
ইমেডিসিন | med/2072 emerg/৫২০ |
পেশেন্ট ইউকে | স্কিটসোফ্রিনিয়া |
মেএসএইচ | F03.700.750 (ইংরেজি) |
বংশগতি, শৈশবের পরিবেশ, নিউরোবায়োলজি এবং মানসিক ও সামাজিক প্রক্রিয়াসমূহ এ রোগের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসাবে প্রতিভাত হয়৷[4] কিছু উত্তেজক মাদক এবং ওষুধ এ রোগের উপসর্গগুলোর আবির্ভাব বা এদের আরও গভীর করে বলে প্রতিয়মান হয়৷ বর্তমানে এ রোগের গবেষণায় নিউরোবায়োলজির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে, যদিও এখনো কোন একক জৈব কারণ শনাক্ত করা যায়নি৷ এই রোগের সম্ভাব্য বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ সমষ্টি এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে যে, আদৌ এটি একটি একক ব্যাধি না একাধিক পৃথক উপসর্গের সহাবস্থান৷ স্কিটসোফ্রিনিয়া শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দমূল skhizein (σχίζειν, "to split" বা “দুভাগ করা”) এবং phrēn, phren- (φρήν, φρεν-; "mind" বা “মন”) থেকে৷ এমন নামকরণ সত্ত্বেও স্কিটসোফ্রিনিয়া বলতে আদপে “দ্বিখন্ডিত মন” বুঝায় না; যদিও অনেক সময় সাধারণ মানুষ এটিকে ডিসোসিয়েটিভ আইডেনটিটি ডিজর্ডার (যা মাল্টি পারসনালিটি ডিজর্ডার বা স্প্লিট পারসোনালিটি নামেও পরিচিত) এর সাথে গুলিয়ে ফেলে; প্রকৃতপক্ষে এদুটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাধি৷
সারাবিশ্বের ০.৩–০.৭% মানুষ এ রোগে আক্রান্ত৷[5] ২০১৩ সালে আনুমানিক ২৩.৬ মিলিয়ন চিকিৎসাপ্রার্থী ছিল।[6] আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার পর্যবেক্ষণ ও অতীত কর্মকান্ড পর্যালোচনার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়৷ এক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, যেমন - দীর্ঘ সময় ধরে বেকারত্ব, দারিদ্র, আবাসনহীনতাকে প্রধান কারণ বলে গণ্য করা হয়।[3][7]
লক্ষণ
বহু আলোচিত এবং বিতর্কমূলক স্কিজোফ্রেনিয়া (schizopherenia) রোগের প্যাথোফিজিওলজি নিয়ে আলোচনায় আসছি। পাঠ্যপুস্তকে স্কিজোফ্রেনিয়া রোগের মধ্যে অনেক ধরনের রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং তাদের বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে; যথা প্যারানয়েড স্কিজোফ্রেনিয়া, ক্যাটাটনিক স্কিজোফ্রেনিয়া, সিম্পল স্কিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি। এই রোগীরা সকলেই প্রায় বাস্তববিমুখ অথবা বাস্তবজগত থেকে বিচ্ছিন্ন। কারও কারও কথাবার্তায় প্রথম থেকেই স্বাভাবিকতা ও বাস্তববিমুখীনতার পরিচয় পাওয়া যায়। হ্যালুসিনেশন এবং ডিলিউশান যাদের থাকে তাদের সাধারণ মানুষই অস্বাভাবিক এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে উন্মাদ বলে বুঝতে পারে। আবার এখানে নিজ নিজ বুদ্ধি, বিশ্বাস এবং সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা বিশেষ করে বাড়ির লোকেরা, এই অস্বাভাবিকতাকে এক ধরনের বৈশিষ্ট্য বলে ভাবতে পারেন। আমাকে রোগী যদি বলে ‘আমাকে আমার বন্ধু, এক গুনিনের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। সেই গুনিন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে কী যেন বলল! তার পর থেকে তার কণ্ঠস্বর আমি সব সময় শুনতে পাচ্ছি’, এই রকম অস্বাভাবিক কথাবার্তাও রোগীর আত্মীয়-স্বজন কোনও কোনও সময় স্বাভাবিক বলে মনে করেন। কারণ তারা তুকতাক, মারণ উচাটন বশীকরণ ইত্যাদির ক্রিয়াকলাপে বিশ্বাসী। আবার দু-এক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনও এক দিকে রোগীর অসাধারণ ব্যুৎপত্তি অথবা জ্ঞান বাড়ির লোকেদের বিস্মিত করে; তারা রোগীকে জিনিয়াস মনে করে গর্বিত রোধ করেন। খুব অপ্রাসঙ্গিক হবে না যদি এখানে বলি যে বেশ কিছু পণ্ডিতের ধারণা যে জিনিয়াস (genius) এবং উন্মত্ততার মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক আছে। এ আলোচনার মধ্যে আমরা বর্তমানে যাচ্ছি না। তবে স্কিজোফ্রেনিক রোগীদের মধ্যে বুদ্ধিমান এবং অতি সংবেদনশীলদের সংখ্যা বেশি — এ কথা বললে বোধহয় খুব ভুল বলা হবে না।
আলামত
আলামত সমূহ এপিসোডিক বা হঠাৎ ঘটে থাকতে পারে।
১. অসংলগ্ন আচরণ।
২. এলোমেলো এবং সংযোগবিহীন চিন্তা ও তার বহিঃপ্রকাশ।
৩. জীবন এবং তার সংশ্লিষ্ট কাজের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলা।
৪. অডিটরি হ্যালুসিনেশন দেখা।
ধরণ
আমেরিকান সাইকিয়াটিক এসোসিয়েশন (এপিএ) সিজোফ্রেনিয়াকে নয়টি ভাগে বিভক্ত করেছে।এগুলো হলোঃ- ১. সরল টাইপ ২. হেবিফ্রেনিক টাইপ ৩. ক্যাটাটনিক টাইপ ৪. প্যারানয়েড টাইপ ৫. আনডিফারেনসিয়েটেড টাইপ ৬. শৈশব টাইপ ৭.সিজো-অ্যাফেকটিভ টাইপ ৮.তীব্র-মিশ্র টাইপ ৯.দীর্ঘস্থায়ী মিশ্র টাইপ
নিরাময়
চিকিৎসার প্রধান মাধ্যম হল এন্টিসাইকোটিক ওষুধ, যা মূলত ডোপামিন (এবং কখনও কখনও স্টেরোটোনিন) গ্রহণ কার্যক্রমকে অবদমিত করে। সেই সাথে মনোচিকিৎসা এবং বৃত্তিমূলক ও সামাজিক পুনর্বাসনও চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বেশি গুরুতর ক্ষেত্রে, যেখানে নিজের এবং অন্যদের প্রতি ক্ষতির ঝুঁকি থাকে - সেখানে রোগীর অনিচ্ছা থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন হতে পারে, যদিও হাসপাতালে থাকার মেয়াদ এখন আগের থেকে কম হয় এবং হাসপাতালে যেতেও হয় আগের থেকে অনেক কম।তবুও রোগীর বিপজ্জনক কিছু করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে।
এই ব্যাধি মূলত চেতনাকে আক্রান্ত করে বলে ধারণা করা হয়, কিন্তু এটা একই সাথে প্রায়শই আচরণ এবং আবেগ গত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা বৃদ্ধি করে।
তথ্যসূত্র
- "Schizophrenia Fact sheet N°397"। WHO (ইংরেজি ভাষায়)। সেপ্টেম্বর ২০১৫। ১৮ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৮।
- "Schizophrenia"। National Institute of Mental Health (ইংরেজি ভাষায়)। জানুয়ারি ২০১৬। ২৫ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৮।
- van Os J, Kapur S (আগস্ট ২০০৯)। "Schizophrenia" (PDF)। Lancet। 374 (9690): 635–45। doi:10.1016/S0140-6736(09)60995-8। PMID 19700006। ২৩ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা (PDF)।
- Global Burden of Disease Study 2013 Collaborators; Barber, Ryan M; Bell, Brad; Bertozzi-Villa, Amelia; Biryukov, Stan; Bolliger, Ian; Charlson, Fiona; Davis, Adrian; Degenhardt, Louisa; Dicker, Daniel; Duan, Leilei; Erskine, Holly; Feigin, Valery L; Ferrari, Alize J; Fitzmaurice, Christina; Fleming, Thomas; Graetz, Nicholas; Guinovart, Caterina; Haagsma, Juanita; Hansen, Gillian M; Hanson, Sarah Wulf; Heuton, Kyle R; Higashi, Hideki; Kassebaum, Nicholas; Kyu, Hmwe; Laurie, Evan; Liang, Xiofeng; Lofgren, Katherine; Lozano, Rafael; ও অন্যান্য (আগস্ট ২০১৫)। "Global, regional, and national incidence, prevalence, and years lived with disability for 301 acute and chronic diseases and injuries in 188 countries, 1990-2013: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2013"। Lancet (ইংরেজি ভাষায়)। 386 (9995): 743–800। doi:10.1016/S0140-6736(15)60692-4। PMID 26063472। পিএমসি 4561509
। - Foster A, Gable J, Buckley J (সেপ্টেম্বর ২০১২)। "Homelessness in schizophrenia"। The Psychiatric Clinics of North America (ইংরেজি ভাষায়)। 35 (3): 717–34। doi:10.1016/j.psc.2012.06.010। PMID 22929875।