সৈয়দ ফারুক রহমান

লেফট্যানেন্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান (মৃত্যুঃ ২৮ জানুয়ারি ২০১০) ছিলেন একজন বাংলাদেশী সামরিক অফিসার যিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ছিলেন। ফারুক একদল জুনিয়র সামরিক অফিসারকে নেতৃত্ব দেন যারা শেখ মুজিবের শাসন উৎখাত করে খন্দকার মোশতাক আহমেদকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।

চক্রান্ত

মেজরের পদধারণ করে ফারুক একদল জুনিয়র অফিসারদের সংগঠন করেন যারা বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনে ক্ষুণ্ন ছিল। চক্রান্তকারীরা শেখ মুজিবকে দুর্নীতি, স্বজনশপ্রীতি, একনায়ক হিসেবে শাসন এবং তার ভারতপন্থী ও সোভিয়েতপন্থী শাসনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে সমালোচনা করে। সিনিয়র কেবিনেট মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদের গোপন সমর্থনে ফারুক একটি সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা ও অবশেষে পরিচালনা করেন। যার ফলস্বরূপ, মুজিবের দুই কন্যা, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া মুজিব ও তার পরিবারের সকলে নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের পরে তৎক্ষণাৎভাবে অফিসাররা খন্দকার মোশতাক আহমেদ কে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত করে।[1]

ইনডেমনিটি

রাষ্ট্রপতি হিসেবে খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন যার ফলে শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারকার্যকে নিষিদ্ধ হয়। ফারুক লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুথানে নতুন সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত ক্ষমতাবান অবস্থানে অধিষ্ঠিত থাকেন। আবার, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মোশাররফের বিরুদ্ধে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। জিয়া সৈয়দ ফারুক রহমান ও মুজিবের অন্যান্য হত্যাকারীদের সশস্ত্র বাহিনী ও কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলের নানা পদে অধিষ্ঠিত করেন। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের অধীনে জাতীয় সংসদ ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশকে সংসদের একটি সরকারি আইনে রূপান্তরিত করে।

১৯৮০ এর দশকে ফারুক সেনাবাহিনী থেকে অপসৃত হন এবং অবসরে যান। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ফারুক বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ভারতের আসামের ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের সাথেও জড়িত ছিলেন।[2][3]

বিচারকার্য ও মৃত্যুদন্ড

১৯৯৬ সালে মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করলে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন।তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার অধীনে ইনডেমিনিটি আইন নাকচ করা হয় এবং মুজিব ও তার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের একটি মামলা আরম্ভ হয়। ১৯৯৮ সালে ঢাকা হাইকোর্ট সৈয়দ ফারুক রহমানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করে। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার মুজিব হত্যা মামলার কার্যক্রম ধীর করে ফেলে।২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় গেলে আদালতে মামলা পুনরায় শুরু হয়।২০১০ সালের ২৮শে জানুয়ারি ফারুক ও মুজিব হত্যার অন্যান্য চক্রান্তকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।[4][5][6]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Newton, Michael (২০১৪-০৪-১৭)। Famous Assassinations in World History: An Encyclopedia [2 volumes] (ইংরেজি ভাষায়)। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 15। আইএসবিএন 9781610692861।
  2. Maitra, Kiranshankar (২০১১-০৯-১৫)। Nagaland : The Land of Sunshine (ইংরেজি ভাষায়)। Anjali Publishers। পৃষ্ঠা 129। আইএসবিএন 9788189620929।
  3. Maitra, Kiran Shankar (১৯৯৮-০২-০৪)। The Nagas rebel and insurgency in the North-East (ইংরেজি ভাষায়)। Vikas Pub. House। পৃষ্ঠা 165।
  4. "Bangladesh executes Mujib killers"। BBC। ২৭ জানুয়ারি ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১০
  5. "BNP demands fresh investigation into the assassination of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-০১
  6. "Bangladesh Supreme Court Verdict: Bangabandhu Murder Case- Justice delayed but not denied | Asian Tribune"www.asiantribune.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-০১
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.