সেনাপতি দিঘি
সেনাপতি দিঘি বাংলাদেশের মাদারিপুর জেলার আমড়াতলা ও খাতিয়াল গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত মানবসৃষ্ট দিঘি। মাদারীপুর জেলার ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে সেনাপতি দিঘি অন্যতম। তটভূমিসহ সেনাপতি দিঘির আয়তন ৬০,৭০৩ বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য ২৮৮ মিটার ও প্রস্থ ১৫৭ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার। ১৬৬৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুঘল আমলে শায়েস্তা খাঁর বড় ছেলে বুজুর্গ উমেদ খাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি ইসলাম খাঁ এই দিঘি খনন করেন। প্রায় সাড়ে ৩শ’ বছর ধরে নিজ মহিমায় কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে।[1]
সেনাপতি দিঘি | |
---|---|
অবস্থান | মাদারিপুর |
স্থানাঙ্ক | |
ধরন | কৃত্রিম জলাশয় |
অববাহিকার দেশসমূহ | বাংলাদেশ |
সর্বাধিক দৈর্ঘ্য | ২৮৮ মিটার |
সর্বাধিক প্রস্থ | ১৫৭ মিটার |
পৃষ্ঠতল অঞ্চল | ৬০,৭০৩ বর্গমিটার |
গড় গভীরতা | ১০ মিটার (প্রায়) |
জনবসতি | মাদারিপুর |
অবস্থান
মাদারিপুরের কালকিনি উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের আমড়াতলা ও খাতিয়াল গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে সেনাপতির দিঘির অবস্থান। প্রায় ১৫ একর ভূমির এই দিঘি। মাদারিপুর শহরের ইটেরপুল থেকে দক্ষিণ দিকে গগনপুর বাজার গিয়ে পশ্চিম দিকে রাস্তা দিয়ে সোজা রাস্তার শেষ প্রান্তে এই দিঘিটি অবস্থিত।[2]
ইতিহাস
ঐতিহাসিকদের মতে, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের (রাজত্বকাল: ১৬৫৮-১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দ) আমলে সুবেদার শায়েস্তা খাঁর নেতৃত্বে মগ জলদস্যুদের বিতাড়িত করার জন্য তার বড় ছেলে বুজুর্গ উমেদ খাঁ ২৮৮টি নদীতে অভিযান পরিচালনা করেন। বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে মগ জলদস্যুদের বিতাড়িত করে তার সেনাবাহিনীর একটি অংশ চন্দ্রদ্বীপ-বাকলা (বর্তমান বরিশাল) অঞ্চলে অভিযান চালায়। সেখান থেকে মগ সৈন্যদের বিতাড়িত করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ঢাকা যাওয়ার পথে বর্তমান মাদারিপুর জেলার কালকিনি উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান আমড়াতলা ও খাতিয়াল এলাকায় কিছুদিন অবস্থান করে। ওই সময় পানি ও জলের অভাব মেটানোর জন্য বুজুর্গ উমেদ খাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি ইসলাম খাঁর সেনাবাহিনী এ দিঘিটি খনন করে বলে এর নাম হয় ‘সেনাপতির দিঘি’। আবার কারও কারও মতে, এ অঞ্চলের পানিতে লবণাক্ততা বেশি থাকায় মিষ্টি পানির প্রয়োজনে তার সেনাবাহিনী এ দিঘিটি খনন করে।[1]
লোককথা
এই দিঘি নিয়ে প্রচলিত আছে বিভিন্ন লোককথা। কথিত রয়েছে, দিঘি খননের পর পানি না ওঠায় সেখানে ঘৌড়দৌড় হয়। ঘৌড়দৌড়ের একপর্যায়ে দিঘির দক্ষিণ দিক থেকে পানি উঠতে শুরু করে এবং মুহূর্তের মধ্যে দিঘিটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আরও কথিত রয়েছে, ওই সময় দিঘির কাছে অনুষ্ঠানাদির জন্য থালা-বাসন চাইলে রাতে তা দিঘির পাড়ে উঠে থাকত। অনুষ্ঠান শেষে সেখানে রেখে গেলে পরদিন সকালে সেখানে আর তা দেখা যেত না। আমড়াতলা গ্রামের কাজী আবদেলের মেয়ের বিয়ের সময় দিঘির কাছে থালা-বাসন চাওয়া হয়। যথারীতি থালা-বাসন দিঘির পাড়ে পাওয়া যায়। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে আবদেল কাজীর স্ত্রী বরু বিবি একটি কাঁসার বাটি ছাইয়ের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল। পরের দিন ওই গৃহিণী পাগল হয়ে যায় এবং দীর্ঘকাল অসুস্থ থাকার পর তিনি মারা যান। পরবর্তী আর কোন অনুষ্ঠানে থালা-বাসন চাইলে দিঘিতে আর থালা-বাসন ভেসে উঠত না। দিঘির পশ্চিম পাশে যেখানে খাতিয়াল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় তার সামনে প্রকা- এক বটগাছ ছিল। সেই বটগাছে প্রচুর হনুমান বসবাস করত। বটগাছ ও হনুমানকে দেবতা ভেবে হিন্দুরা দিঘিতে গোসল করে এই বটগাছের নিচে এসে পুজো দিত। এখনও হিন্দু-মুসলমান অনেকেই মনে করেন দিঘিটির প্রাণ আছে। রোগ মুক্তির জন্য হিন্দু-মুসলমান মহিলারা দিঘিতে গোসলের মানত করে।[1]
তথ্যসূত্র
- "The Daily Janakantha"। oldsite.dailyjanakantha.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২২।
- travelnews; travelnews (২০১৯-০৫-২৪)। "সেনাপতি দিঘি"। Travel News Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২২।
আরও দেখুন
- শকুনি দীঘি
- রামসাগর
- কমলারাণীর দীঘি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দীঘি
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিভ্রমণে সেনাপতি দিঘি সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে। |