সিঁদুর

সিঁদুর (বা সিন্দূর) একপ্রকার রঞ্জক পদার্থ। এটি সাধারণত মেয়েদের সিঁথিতে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত অবধি প্রসারিত টীকা বা কপালে টিপের আকারে ব্যবহৃত হয়। হিন্দুধর্মে সিঁদুর বিবাহিতা নারীর প্রতীক। অবিবাহিত মেয়েরা সিঁথিতে সিঁদুর পরে না, কপালে সিঁদুরের টিপ পরে। বিধবাদের সিঁদুর ব্যবহার শাস্ত্রমতে নিষিদ্ধ। হিন্দুদের পূজানুষ্ঠানের সময়ও সিঁদুর ব্যবহৃত হয়।

সিঁদুর

সিঁদুরের ইতিহাস অতি প্রাচীন বলে ধারণা করা হয়। হিন্দু ধর্মমতে এটি স্বামীর দীর্ঘজীবন বয়ে আনে বলে বিবাহিত হিন্দু নারীরা সিঁদুর ব্যবহার করেন। এর রঙ লাল, কারণ এটি শক্তি ও ভালোবাসার প্রতীক। হিন্দু বিবাহের সময়ে একজন নারীর প্রথম কপালে সিঁদুর দিয়ে চিহ্ন আঁকা হয়।[1][2]

বৈবাহিক আচার

হিন্দু মতে বিবাহের সর্বশেষ শাস্ত্রীয় রীতি হল বর (স্বামী) কর্তৃক কন্যার (নববধু) কপালে সিঁদুর লেপন। বাঙালি হিন্দু নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় পুরো বৈবাহিক জীবনে সিঁদুর পরে থাকেন।

সিঁদুর খেলা

সিঁদুর খেলা

সিঁদুর খেলা পূজা সংশ্লিষ্ট একটি বাঙালি হিন্দু সংস্কার। পূজার প্রতিমাকে সিঁদুর দিয়ে বরণ করে নেয়ার পর এই খেলা শুরু হয়। ভুরিভোজনের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।

গণগোর ব্রত

ভারতের রাজস্থানে সিঁদুরের দোকান

এই ব্রতে সিঁদুর পরানোর চল আছে। হিন্দু পূরাণে আছে সাধারণ মহিলাদের ওপর পার্বতী সিঁদুর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এরপর কুলীন স্ত্রীরা পূজার জন্য এলে পার্বতী নিজ আঙ্গুল চিরে রক্ত দিয়ে এদের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিয়েছিলেন। [3]

নৃতত্ত্ব

হিন্দু নারীর সিঁদুর পরা নিয়ে সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ব ভিন্ন কথা বলে। সেই বিদ্যার বিশেষজ্ঞদের মতে, লাল বর্ণের সিঁদুর কপালে ধারণ করার অর্থ জড়িয়ে রয়েছে আদিম উর্বরাশক্তির উপাসনার মধ্যে। হিন্দু ধর্ম বলে আজ যা পরিচিত, তার উৎস এক টোটেমবাহী কৌম সমাজে। সেখানে গাছ, পাথর, মাটি ইত্যাদিকে প্রাকৃতিক শক্তির প্রতীক বলে মনে করত। আর তাদের কাছে লাল রংটি ছিল সৃষ্টির প্রতীক। সেই আদিম কাল থেকেই লাল সিঁদুরকে ভারতীয়রা বেছে নেন তাদের একান্ত প্রসাধন হিসেবে। বিবাহিতা মহিলাদের ললাটে কুঙ্কুম তাদের সন্তানধারণক্ষম হিসেবেই বর্ণনা করে। তার বেশি কিছু নয়।[4]

শাস্ত্র অনুযায়ী, লাল কুঙ্কুম শক্তির প্রতীক। মানব শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেবতা অবস্থান করেন। ললাটে অধিষ্ঠান করেন ব্রহ্মা। লাল কুঙ্কুম ব্রহ্মাকে তুষ্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া, কপালের ঠিক মধ্যভাগে সূর্যালোক পড়ার ব্যাপারটাকে আটকাতেও সিঁদুর ব্যবহৃত হয় বলে ধারণা করা যায়।

কপালে সিঁদুর প্রয়োগেরও কিছু বিধি ও ফলনির্দেশ শাস্ত্র প্রদান করে। জানা যায়, তর্জনি দিয়ে সিঁদুর পরলে শান্তি পাওয়া যায়। মধ্যমা দিয়ে ধারণ করলে আয়ু বৃদ্ধি পায়। প্রাচীন কালে হলুদ গুঁড়ো দিয়ে সিঁদুর তৈরি হত। তার পরে তাতে লাল কালি মিশিয়ে রাঙিয়ে তোলা হত। কুঙ্কুমচর্চার কেন্দ্রবিন্দুটি হল আজ্ঞাচক্র। এখানে সিঁদুর প্রয়োগে আত্মশক্তি বাড়ে। নারীকে ‘শক্তি’ হিসেবেই জ্ঞান করে হিন্দু পরম্পরা। কুঙ্কুম বা সিঁদুর তাদের আজ্ঞাচক্রে প্রদানের বিষয়টি সেই কথাটিকেই মনে করিয়ে দেয়।

তথ্যসূত্র

  1. Ahearn, Laura M (২০০১)। Invitation to love: Literacy, Love Letters, & Social Change in Nepal। University of Michigan : Michigan। পৃষ্ঠা 95।
  2. Selwyn, Tom (১৯৭৯)। "Images of Reproduction: An Analysis of a Hindu Marriage Ceremony"। JSTOR14 (4): 684–698। অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  3. "Bengali Webdunia"। ২৫ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০০৯
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৯ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৯

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.