সালোকসংশ্লেষ

সালোকসংশ্লেষ শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ photos (অর্থ: আলোক; এখানে সূর্যালোক) ও synthesis (অর্থ: সংশ্লেষণ, বা তৈরি করা) এর সমন্বয়ে গঠিত। আবার সালোকসংশ্লেষ কথাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,সালোক শব্দটির অর্থ হলো--সূর্যালোকের উপস্থিতি এবং সংশ্লেষ শব্দটির অর্থ—কোনো কিছু উৎপাদিত হওয়া। এক কথায় সালোকসংশ্লেষ এর অর্থ দাঁড়ায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে রাসায়নিক সংশ্লেষ।যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবুজ উদ্ভিদ কোষে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে, পরিবেশ থেকে গৃহীত কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) ও মূল দ্বারা শোষিত জলের বিক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্যের সংশ্লেষ ঘটে এবং গৃহীত কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমপরিমাণ অক্সিজেন প্রকৃতিতে নির্গত হয়, তাকে সালোকসংশ্লেষ বলে। এই প্রক্রিয়ায় সজীব উদ্ভিদকোষে উপস্থিত ক্লোরোফিল নামক রঞ্জক আলোকশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং তা উৎপন্ন শর্করাজাতীয় খাদ্যের মধ্যে স্থিতিশক্তি রূপে সঞ্চিত রাখে। এই শক্তি পরবর্তীকালে স্বভোজী উদ্ভিদ দ্বারা অথবা শাকাহারী প্রাণীদের গৌণ পুষ্টিতে সাহায্য করে। সবুজ উদ্ভিদ ছাড়া কিছু জীবাণু এবং কিছু আদ্যপ্রাণীর মধ্যেও এই প্রক্রিয়া পরিদৃষ্ট হয়। যে শারীরবৃত্তিয় জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়ায় কিছু জীবাণু, আদ্যপ্রানী ও ক্লোরোফিল যুক্ত সজীব কোশে (উদ্ভিদ) সূর্যালোকের উপস্থিতিতে, পরিবেশ থেকে গৃহিত কার্বন ডাই অক্সাইড ও মূলরোম দ্বারা শোষিত জলের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সরল শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপন্ন হয় ও কার্বন ডাই অক্সাইডের সমপরিমান অক্সিজেন উত্পন্ন হয় এবং সৌরশক্তির আবদ্ধ ঘটে, তাকে বা সেই প্রক্রিয়াকে সালোকসংশ্লেষ বলে।

পাতা উদ্ভি্দের সালোকসংশ্লেষণের প্রধান স্থান
সালোকসংশ্লেষের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া।

সমুদ্রে সালোকসংশ্লেষণকারী জীব

সমুদ্রে সালোকসংশ্লেষণকারী উদ্ভিদ

কয়েক প্রকার ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল ও উচ্চশ্রেণীর উদ্ভিদ, যাদের সালোকসংশ্লেষণকারী রঞ্জক পদার্থ থাকে, তারাই সালোকসংশ্লেষ করতে সক্ষম। মূলত পাতায় সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া সংঘটিত হলেও কিছু উদ্ভিদের মূল বা কান্ডেও এটি হতে পারে।

  • সমুদ্রে সালোকসংশ্লেষণকারী মূল: গুলঞ্চের আত্তীকরণ মূল, পটলের মূল, অর্কিডের বায়বীয় মূল (ভেলামেন)।
  • সমুদ্রে সালোকসংশ্লেষণকারী কান্ড: ফনীমনসা, বাজবরণ ও অন্যান্য উদ্ভিদের সবুজ কান্ড।

সালোকসংশ্লেষণকারী প্রাণী

যদিও সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া সবুজ উদ্ভিদে ঘটে, তবুও কয়েকটি এককোষী প্রাণী, যেমন-- ইউগ্লিনা, ক্রাইস‍্যামিবা প্রভৃতিতে ক্লোরোফিল থাকায় সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি হয়।

  • যেসব উদ্ভিদে ক্লোরোফিল থাকে না তারা সালোকসংশ্লেষে অক্ষম। ছত্রাকজাতীয় উদ্ভিদে ক্লোরোফিল বা সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জকপদার্থ না থাকার জন্য সালোকসংশ্লেষ ঘটে না।
    উদাহরণ: মিউকর, ইস্ট প্রভৃতি

সালোকসংশ্লেষণকারী অঙ্গসমূহ

  • পাতার সবুজ অংশ
  • কচি সবুজ কান্ড
  • থ্যালয়েড সবুজ উদ্ভিদের থ্যালাস
  • ফুলের সবুজ বৃতি ও বৃন্ত
  • ফলের সবুজ ত্বক
  • সাইটোপ্লাজম

সালোকসংশ্লেষণের উপাদান

  • প্রধান উপাদান
  • সাহায্যকারী উপাদান
    • কো-এনজাইম
    • ADP( adenosine diphosphate)
    • NADP( Nicotinamide adenine dinucleotide phosphate)
    • RuDP( Ribulose Disphosphate)
    • RuBP( Ribulose Bisphosphate)

সালেকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া

সালেকসংশ্লেষণ এর বিক্রিয়া:- 6CO2 + 12H2O +তাপ→ C6H12O6+6H2O+6O2 সালেকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ২টি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়- ক)আলোক নির্ভর পর্যায় খ)অন্ধকার পর্যায়

সালোকসংশ্লেষ সম্বন্ধীয় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ

  • 1. উদ্ভিদ দেহে সালোকসংশ্লেষ এ উৎপন্ন গ্লুকোজ সঞ্চিত থাকে - শ্বেতসার রূপে
  • 2. সালোকসংশ্লেষ শব্দটি প্রচলন করেন - বার্নেস
  • 3. সালোকসংশ্লেষে প্রয়োজনীয় জল উদ্ভিদ শোষণ করে – মূলরোম দ্বারা
  • 4. পত্রাশয়ী উদ্ভিদে জল শোষণ করে - ভেলামেন বা বায়বীয় মূল দিয়ে
  • 5. সালোকসংশ্লেষে সক্ষম প্রাণী – ইউগ্লিনা , ক্রাইস্যামিবা
  • 6. সালোকসংশ্লেষে সক্ষম ব্যাকটেরিয়া - রোডোস্পাইরিলাম , রোডোসিউডোমোনাস
  • 7. সালোকসংশ্লেষণকারী অঙ্গ – পাতা , স্থান - মেসোফিল কলা , অঙ্গাণু – ক্লোরোপ্লাস্ট , একক - কোয়াণ্টাজোম
  • 8. কোয়াণ্টোজোমের উপস্থিত ক্লোরোফিলের অণুর সংখ্যা – ২৩০ টি
  • 9. সালোকসংশ্লেষে অক্ষম উদ্ভিদ - স্বর্ণলতা , সকলপ্রকার ছত্রাক
  • 10. সালোকসংশ্লেষীয় বর্ণালী - লাল ও নীল ।
  • 11. সালোকসংশ্লেষের আলোক বিক্রিয়া স্থান – ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রাণা ।
  • 12. সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জক – ক্লোরোফিল ।
  • 13. সালোকসংশ্লেষের উৎপন্ন গ্লুকোজ অণুর অক্সিজেনের উৎস – CO2 ।
  • 14. উদ্ভিদের পাতার যে কোষে সালোকসংশ্লেষ হয় না – জাইলেম বাহিকা ও সীভনল ।
  • 15. এক অণু গ্লুকোজ দহনে উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ – 686 কিলোক্যালোরি
  • 16. জীব জগৎ এর প্রাথমিক খাদ্যের উৎস – সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ।
  • 17. যে প্রক্রিয়ায় জীবদেহের শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি পায় তাকে বলে – উপচিতি বিপাক । যেমন – সালোকসংশ্লেষ ।
  • 18. সালোক সংশ্লেষের প্রধান উপাদান – CO2 , ক্লোরোফিল , সূর্যালোক , জল ।
  • 19. এক অণু গ্লুকোজ উৎপন্নের জন্য CO2 প্রয়োজন – 6 অণু ।
  • 20. ক্লোরোপ্লাস্টে গ্রাণা থাকে – 60-80 টি ।
  • 21. প্রত্যেকটি গ্রাণাতে একক আবরণ বেষ্টিত চ্যাপ্টা থলিকে বলে – থাইল্যাকয়েড ।
  • 22. ক্লোরোফিল এর রাসায়নিক উপাদান – কার্বন , হাইড্রোজেন , অক্সিজেন , নাইট্রোজেন , ম্যাগনেসিয়াম ।
  • 23. গাছের সবুজ অংশ হলুদ হলে হয় – ক্লোরোসিস ( অভাব – লোহা , ম্যাগনেসিয়াম )
  • 24. ব্যাকটেরিও ক্লোরোফিল দেখা যায় – রোডোসিউডোমোনাস , রোডোস্পাইরিলাম , ক্লোরোবিয়াম ।
  • 25. ১ অণু গ্লুকোজ উৎপন্নের জন্য জলের অণু প্রয়োজন -১২ অণু ।
  • 26. সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াতে উপজাত পদার্থরূপে যে অক্সিজেন পাওয়া যায় তার উৎস - জল ।
  • 27. সূর্যালোকের উপস্থিতিতে জলের আয়নীকরণকে বলে – ফটোফসফোরাইলেশন ।
  • 28. সালোকসংশ্লেষ এর অন্ধকার দশাটি প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন – ব্ল্যাকম্যান ।
  • 29. দেহজ শ্বেতসার পুনরায় গ্লুকোজে পরিণত হয় – ডায়াস্টেজ নামক উৎসেচকের প্রভাবে ।
  • 30. সালোকসংশ্লেষ এর অভ্যন্তরীণ প্রভাবক – ক্লোরোফিল , উৎসেচক , প্রোটোপ্লাজম ।
  • 31. দ্রুত সালোকসংশ্লেষণকারী উদ্ভিদ - ক্লোরেল্লা ।
  • 32. সালোকসংশ্লেষ এর জন্য বাতাসের প্রয়োজন প্রমাণ করেন - যোসেফ প্রিস্টলে ।
  • 33. যে সময় সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসনের হার সমান হয় তাকে বলে - কমপেনসেশন পয়েন্ট বা পূর্তিবিন্দু ।
  • 34.->লাল আলোতে photosynthesis বেড়ে যায়।পাতার মেসোফিল কোষে photosynthesis হয়

জলজ উদ্ভিদে photosynthesis বেশি হয় কারণ জলে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান বেশি

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.