ষড়দর্শন
ষড়দর্শন হল হিন্দু শাস্ত্রমতে আস্তিকদর্শনগুলির ছয়টি ভাগ। এখানে আস্তিক কথার অর্থ হল এই দর্শনগুলি প্রথমেই বেদকে প্রামাণ্যগ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে তারপর তার নিজস্ব প্রতিপাদ্য বিষয়গুলিকে বিচার করে। ভারতীয় আস্তিকদর্শনের এই ছয়টি ভাগ হল- ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য, যোগ, পূর্বমীমংসা বা মীমাংসা এবং উত্তরমীমাংসা বা বেদান্ত।[1] বৈশেষিককে কখনও কখনও গুণাদ বলেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।[2]
এই দর্শনগুলো এই অর্থে 'আস্তিক' যে এগুলি বেদে বিশ্বাস স্থাপন করে ও বেদকেই একমাত্র প্রামাণ্য বলে স্বীকার করে। এখানে আস্তিকতা অর্থে ঈশ্বরে বিশ্বাসের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই।[3] বস্তুত আস্তিক বলে পরিচিত এই ছ'টি দর্শনের অন্যতম সাংখ্য ও মীমাংসা জগতের স্রষ্টা হিসেবে ঈশ্বরের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করে না; বৈশেষিক দর্শনেও সরাসরি ঈশ্বর সম্পর্কিত কোনও কথা বলা নেই। আবার ন্যায় দর্শন যদিও ঈশ্বর ও আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, এই দর্শনের মতে জগতেরও স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আছে। অর্থাৎ, বেদান্ত দর্শনে যে ঈশ্বর (সগুণ ব্রহ্ম) ও ব্রহ্মের (নির্গুণ) কথা বলা হয়েছে এবং ব্রহ্মই সত্য, জগত মিথ্যা বলে মতপ্রকাশ করা হয়েছে - আস্তিক বলে পরিচিত সমস্ত দর্শনগুলিই সে প্রশ্নে মোটেই একমত নয়।[1]
নাস্তিক দর্শনগুলির সাথে এদের মূল পার্থক্য হল এই যে, নাস্তিক দর্শনগুলি জড়বাদী, আত্মা ও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না এবং বেদকেও তারা কোনও প্রামাণ্যগ্রন্থ বলে স্বীকার করে না। চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন হল প্রাচীন ভারতে বিকশিত নাস্তিক দর্শনগুলির মধ্যে অন্যতম।
তথ্যসূত্র
- "ষড়দর্শন", বাংলাপিডিয়া। সংগৃহীত ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫।
- "ষড়দর্শন কী?", আমি এক হিন্দু। সংগৃহীত ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫।
- Andrew J. Nicholson (2013), Unifying Hinduism: Philosophy and Identity in Indian Intellectual History, Columbia University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০২৩১১৪৯৮৭৭, Chapter 9
গ্রন্থপঞ্জি
- শ্রীতারকচন্দ্র রায়, ভারতীয় দর্শনের ইতিহাস, কলকাতা, ১৯৬০।
- প্রমোদবন্ধু সেনগুপ্ত ও অন্যান্য, ভারতীয় দর্শন (চতুর্দশ সংস্করণ), কলকাতা, ১৯৯৬।