লোবান

লোবান এক প্রকারের সুগন্ধি বৃক্ষনির্যাস যা আগরবাতি এবং আতরে ব্যবহৃত হয়। এটি সংগ্রহ করা হয় বার্সেরাসিয়া পরিবারের বসওয়েলিয়া গণের উদ্ভিদ থেকে, বিশেষত Boswellia sacra। 'লোবান' শব্দটি এসেছে আরবি লুবান থেকে।[1]

বসওয়েলিয়ার চারটি প্রজাতি থেকেই মূলত লোবান উৎপন্ন হয়। সংগ্রহের সময়ের ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেক প্রজাতি থেকে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় রেজিন পাওয়া যায়। গুণগত মানসম্পন্ন রেজিন হাতে বাছাই করা হয়।

উৎপাদন

Boswellia sacra গাছের শাখা ও ফুল, যা থেকে বেশিরভাগ লোবান আহরিত হয়

প্রথমে চিকন ও শক্ত বসওয়েলিয়া জাতের গাছগুলোর বাকল কুপিয়ে ফালাফালা করে দেয়া হয় যাকে 'ট্যাপিং' 'স্ট্রিপিং' বলে। এতে গাছের রেজিন চুইয়ে পড়ে জমাট বেঁধে যায়। জমাট বাঁধা রেজিনকে বলা হয় 'অশ্রু' (Tear)। লোবান গাছগুলোর বহু প্রজাতি ও বৈচিত্র্য বিদ্যমান। মাটি ও জলবায়ুর গুণাগুণ রেজিনের বৈশিষ্ট্যে প্রভাব ফেলে। Boswellia sacra গাছগুলোর বিশেষত্ব হলো এরা সবরকম অসহনীয় পরিবেশে, এমনকি নিরেট পাথরেও জন্মাতে পারে। গাছগুলো প্রায় ৮-১০ বছর বয়সে রেজিন ঊৎপাদন শুরু করে।[2] বছরে দু-তিনবার ট্যাপিং করা হয় এবং শেষ ট্যাপিংয়ে সবচেয়ে ভালো অশ্রু পাওয়া যায়। সাধারণত, রেজিন যত অস্বচ্ছ হয় মান তত ভালো হয়। উত্তম মানের রেজিন উৎপন্ন হয় সোমালিয়ায় যেখান থেকে ক্যাথলিক চার্চ তার ভান্ডারের সিংহভাগ কেনে।[3]

সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে লোবান গাছের সংখ্যা ক্রমশ কমছে, অংশত অতি-আহরণের কারণে। বারবার ট্যাপ করা গাছের বীজ অঙ্কুরিত হয় মাত্র ১৬%, যেখানে ট্যাপ-না-করা গাছের বীজ অঙ্কুরিত হয় ৮০%। এছাড়াও দাবানল, পশুচারণ, গুবরে পোকার আক্রমণ প্রভৃতি কারণে গাছের সংখ্যা কমছে।[4] আবার লোবান বনভূমি কেটে শস্যক্ষেত বানানোও এর জন্য দায়ী।[5]

ইতিহাস

প্রায় ৫০০০ বছরের বেশি সময় ধরে আরব উপদ্বীপ, উত্তর আফ্রিকা এবং সোমালিয়ায় লোবানের ব্যবসা চলছে। প্রাচীন মিশরীয় রাণী হাতশেপসুত-এর সমাধি-মন্দিরগাত্রে এক ম্যুরালচিত্রে পান্ট নগরে পণ্য হিসেবে লোবান দেখানো হয়েছে।

গুণগত মান

লোবান পাওয়া যায় বিভিন্ন প্রকারের পাওয়া যায়। এর গুণগত মান নির্ভর করে এর রং, বিশুদ্ধতা, সুগন্ধ, বয়স এবং আকারের ওপর। সাধারণত সিলভার এবং হোজারিকে সবচেয়ে উন্নতমানের লোবান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান
  2. "Omani World Heritage Sites"। www.omanwhs.gov.om। ২০০৮-১০-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-১৪
  3. BBC.co.uk
  4. Melina, Remy (ডিসেম্বর ২১, ২০১১)। "Christmas Staple Frankincense 'Doomed,' Ecologists Warn"। LiveScience।
  5. Dejenea, T.; Lemenih, M.; Bongers, F. (ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "Manage or convert Boswellia woodlands? Can frankincense production payoff?"। Journal of Arid Environments89: 77–83। doi:10.1016/j.jaridenv.2012.09.010
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.