লোথাল

লোথাল হল প্রাচীন সিন্ধ সভ্যতার একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের একটি বিখ্যাত শহর ও বন্দর। এটি বর্তমান গুজরাত রাজ্যের ভাল প্রদেশ নামক এলাকায় অবস্থিত। এখানকার বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল এক বিরাট শহর। এই বন্দর শহরটি ৩৭০০ খ্রিষ্ট পূর্বে সিন্ধ সভ্যতার অংশ ছিল।[1] এই প্রত্নতাত্ত্বিক শহরটি ১৯৫৪ সালে আবিষ্কৃত হয় এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া এখানে খনন কাজ চালায়। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া এর মতে, লোথাল ছিল বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন পোতাশ্রয় যার মাধ্যমে প্রাচীন সবরমতি নদী মারফৎ হরপ্পা সভ্যতার শহরগুলির সঙ্গে আরব সাগরের তীরবর্তী সৌরাষ্ট্র এর উপকূলবর্তী এলাকাগুলির যোগাযোগ ছিল। কিন্তু অনেক প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেন না। তাদের মতে লোথাল নিছকই একটা ছোট শহর ছিল আর যে পোতাশ্রয়ের কথা বলা হচ্ছে সেটা আসলে একটা সেচের জলাধার ছিল।[2]

লোথাল
লোথাল শহরের প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ
ভারতে এর অবস্থান দেখাচ্ছে
অবস্থানসারগয়ালা,গুজরাট,ভারত
স্থানাঙ্ক২২.৩১° উত্তর ৭২.১৪° পূর্ব / 22.31; 72.14
ধরনবসতি
ইতিহাস
প্রতিষ্ঠিতআনুমানিক ৩৭০০ খ্রিষ্টপূর্ব
সংস্কৃতিসিন্ধু সভ্যতা
স্থান নোটসমূহ
খননের তারিখ১৯৫৫-১৯৬০
অবস্থাধ্বংসপ্রাপ্ত
মালিকানাপাবলিক
ব্যবস্থাপনাআর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া
জনসাধারণের প্রবেশাধিকারহ্যাঁ

প্রাচীন এশিয়া ও আফ্রিকার দূরবর্তী কোণগুলিতে মণি, রত্ন এবং মূল্যবান অলঙ্কারের ব্যবসা নিয়ে পৌঁছানোর জন্য প্রাচীন যুগে লোথাল একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। গুটিকা তৈরির জন্য এবং ধাতব পদার্থের জন্য তারা যে কৌশল ও সরঞ্জামগুলি তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল, তা ৪০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। [3]

লোথাল আহমেদাবাদ জেলার ধোলকা তালুকার সারগওয়ালা গ্রামের কাছে অবস্থিত। এটি আহমেদাবাদ-ভাবনগর রেলপথের লোথাল-ভুরুখী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছয় কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটি আহমেদাবাদ (৮৫ কিলোমিটার / ৫৩ মাইল), ভাবনগর, রাজকোট এবং ধোলকা শহরগুলির সমস্ত আবহাওয়াতে ব্যবহারের উপযোগি সড়ক দ্বারা সংযুক্ত। স্থানটির নিকটতম শহর ধোলকা এবং বড়োদরা। ১৯৬১ সালে খনন পুনরায় শুরু করা হলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা নদীটির উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের ভাঁজগুলি খনন করে নদী দিয়ে ডক সংযোগকারী ইনলেট চ্যানেল এবং নুলা ("র্যাভিন" বা "গুলি") খুজে পায়। ফলাফল স্থানটি একটি ঢিবি, একটি শহর, একটি বাজার, এবং বন্দর দ্বারা গঠিত। খননকৃত অঞ্চলের পাশে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর, যেখানে ভারতে সিন্ধু-যুগের প্রাচীনতম কিছু বিশিষ্ট সংগ্রহ প্রদর্শিত হয়।

লোথালকে ইউনেস্কোর কাছে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে মান্যতা দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং তা ইউনেস্কো-র বিচারাধীন।

প্রত্নতত্ত্ব

Extent and major sites of the Indus Valley Civilization

১৯৪৭ সালে যখন ভারত ভাগ হল, তখন বেশিরভাগ হরপ্পা ও মহেঞ্জদর সভ্যতার অবশিষ্টাংশই পাকিস্তান-এ চলে যায়। তারপর আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া নিজেদের উদ্যোগে নতুন করে খননকার্য ও অনুসন্ধান শুরু করে। ভারতের উত্তর-পশ্চিম ভাগে নতুন নতুন প্রত্নক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়।১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে কচ্ছ (মূলত ধোলাভিরা) ও সৌরাষ্ট্র উপকূলে হরপ্পা সভ্যতার ৫০০ কিলোমিটার বিস্তৃত নতুন প্রত্নক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। লোথালের অবস্থান হল সিন্ধ প্রদেশের মহেঞ্জোদারো প্রত্নক্ষেত্র থেকে ৬৭০ কিলোমিটার (৩১০ মেইল) দূরে। [4]

'লোথাল' কথার স্থানীয় গুজরাটি ভাষায় নাকি অর্থ - "মৃতের স্তুপ", ঠিক যেমন মহেঞ্জোদারো কথার অর্থ ঐ একই। ওখানকার স্থানীয় লোকজনদের কথাতেও শোনা যায় যে এখানে নাকি প্রাচীন শহর ও মানবজীবনের অস্তিত্ব ছিল। ১৮৫০ সালেও এখান থেকে নদী পথে জিনিসপত্র পরিবহন হত। এ থেকেই এখানকার প্রাচীন নৌ যোগাযোগের প্রমাণ মেলে।[5]

ব্যবসা বাণিজ্য

সিন্ধু সভ্যতার বিস্তার ও প্রধান কেন্দ্রসমূহ।

সিন্ধু সভ্যতার ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই বন্দর শহরের অবদান অপরিসীম। এই বন্দর দ্বারাই সিন্ধু সভ্যতার মানুষ সুমেরীয়, মিশরীয় অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করত।

আরো দেখুন

সিন্ধু সভ্যতা

টীকা

  1. "Indus re-enters India after two centuries, feeds Little Rann, Nal Sarovar"। India Today। ৭ নভেম্বর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১১
  2. Leshnik, Lawrence S. (১৯৬৮)। "The Harappan "Port" at Lothal: Another View"American Anthropologist70 (5): 911–922।
  3. "Excavations – Important – Gujarat"। Archaeological Survey of India। ১১ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১১
  4. W., Bradnock, Robert (২০০১)। Rajasthan & Gujarat handbook। Bath: Footprint। আইএসবিএন 190094992X।
  5. S. R. Rao, Lothal (published by the Director General, Archaeological Survey of India, 1985)

তথ্যসূত্র

    • S. P. Gupta (ed.) "The Lost Sarasvati and the Indus Civilization" (1995, Kusumanjali Prakashon, Jodhpur
    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.