লেখনী

যেসব সরঞ্জাম হাত দিয়ে ব্যবহার করে কোন পৃষ্ঠতলে বর্ণ, সংখ্যা, ইত্যাদি চিহ্ন লেখা যায়, তাদেরকে লেখনী (ইংরেজি: Writing instrument বা Writing implement) বলা হয়। খোদাইয়ের ক্ষেত্রে পৃষ্ঠের অংশবিশেষ সরিয়ে দিয়ে বা খুঁড়ে চিহ্ন বসানো হয়। লেখকের আঙুল, হাত, কব্জি ও বাহু লেখনীটিকে নিয়ন্ত্রণ করে। লেখকের চাহিদা ও দক্ষতা এবং লিখনের উপকরণের লভ্যতা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে লেখনীর উন্নয়নকে প্রভাবিত করেছে।

লেখনী

প্রাচীন লেখনী

পশ্চিমা বিশ্বে সবচেয়ে প্রাচীন লিখন পদ্ধতি ছিল কিউনিফর্ম ধরনের। তিন বা চার ধার বিশিষ্ট একটি সূঁচালো কাঠি নরম কাদামাটিতে চাপ দিয়ে লেখা হত এবং পরে এই কাদামাটির চাঙড়গুলিকে শুকিয়ে লেখাতে স্থায়িত্ব আনা হত। লেখনীর পরবর্তী উন্নয়ন ঘটায় গ্রিকেরা। তারা তুলি এবং হাতুড়ি-ছেনির সাহায্যে লেখা শুরু করে। প্রাচীন গ্রিক মৃৎশিল্পগুলিতে এক ধরনের ছোট গোলাকৃতি তুলিতে লেখা হত, আর প্রাচীন গ্রিক বর্ণগুলি ধাতুর হাতুড়ি ও ছেনির সাহায্যে পাথরে খোদাই করা হত। দুই ধরনের গ্রিক লেখাতেই বর্ণগুলির দাগের সরু-মোটা হেরফের দেখা যায় না। পরবর্তীরে রোমানেরা প্রশস্ত ধারবিশিষ্ট লেখনীর সাহায্যে বর্ণগুলির দাগগুলির প্রস্থে বৈচিত্র‌্য এনেছিল।

১ম শতকের শুরুর দিকেই লেখার উদ্দেশ্য এবং পৃষ্ঠের প্রকৃতি অনুযায়ী রোমাদেরা বিভিন্ন লেখনী ব্যবহার করত। ক্ষণস্থায়ী লেখা ও বিদ্যালয়ের অনুশীলনীগুলি ধাতু বা হড়ের তৈরি সূঁচালো কলম দিয়ে মোমে আবৃত ছোট কাঠের পাটাতনে লেখা হত। কলমের সূঁচালো প্রান্ত দিয়ে মোমে আঁচড় কাটতে হত। একই কলমের অন্য ভোঁতা প্রান্তটি দিয়ে লেখা মোছামুছির কাজ চলত। অন্যদিকে স্থায়ী লেখাগুলি প্যাপিরাসে লেখা হত। সরু কলম কালিতে ডুবিয়ে প্যাপিরাসে লেখা হত। প্যাপিরাসের পৃষ্ঠতল রুক্ষ ছিল বলে এই সূঁচালো কালি কলমটি ব্যবহার করা হত। অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত মসৃণ পৃষ্ঠদেশে যেমন প্রাণীর চামড়া থেকে প্রস্তুত পার্চমেন্ট বা প্লাস্টার বা পাথরের দেয়ালে লিখতে চেপ্টা তুলি বা প্রশস্ত ধারবিশিষ্ট কালি কলম ব্যবহার করা হত। এসময় হাতুড়ি ও ছেনির সাহায্যে শিলালিপি খোদাইয়েরও প্রচলন ছিল; এগুলিতে সরু ও প্রশস্ত দুই ধরনের রেখাই খোদাই করা হত।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.