রুকইয়াহ শারইয়াহ

রুকইয়া, রুকইয়াহ, রুকিয়া, রুকিয়াহ, রুকাইয়া সহ বিভিন্ন উচ্চারণ প্রচলিত রয়েছে, যার মূল হচ্ছে আরবি শব্দ (رقية)

রুকইয়াহ কী?

রুকইয়াহ মানে কী?

রুকইয়াহ অর্থ: ঝাড়ফুঁক, মন্ত্র, তাবিজ-কবচ, মাদুলি ইত্যাদি। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে 'রুকইয়া' শব্দটি সচরাচর ঝাড়ফুঁক করা বুঝাতে ব্যাবহার হয়, এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে বর্নিত আছে।

রুকইয়ার পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, কোরআনের আয়াত, আল্লাহর নামের যিকর, হাদিসে রাসূল ﷺ অথবা সালাফে সালেহীন থেকে বর্ণিত দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কোন বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া কিংবা রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করা। [1]

ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি

শরঈ বিধান

রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।”[2]

ফক্বিহদের মতে রুকইয়াহ বৈধ হওয়ার জন্য ৪ শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক, যথা-

  1. এতে কোন শিরক বা কুফরির সংমিশ্রণ না থাকা।
  2. ঝাড়ফুঁকের নিজের কোন সক্ষমতা আছে; এমন কিছু বিশ্বাস না করা। বরং বিশ্বাস করা, আল্লাহর ইচ্ছাতেই এর প্রভাব হয়, আল্লাহর হুকুমেই এর দ্বারা আরোগ্য হয়।
  3. এখানে পাঠ করা জিনিসগুলো স্পষ্ট আরবি ভাষায় হওয়া।
  4. যদি অন্য ভাষায় হয়, তবে এমন হওয়া; যার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

বিশুদ্ধ আক্বিদা

উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নয়তো হবে না।’

শিরকি রুকইয়াহ

অনেক পথভ্রষ্ট কবিরাজ নিজেদের যাদুটোনার তাবিজকে রুকইয়া বলে প্রচার করে থাকে, যেগুলোকে বলা হয় রুকইয়াহ শিরকিয়্যাহ্‌।[3]

রুকইয়াহ্‌'র প্রকারভেদঃ

প্রথমতঃ রুকইয়াহ দুই প্রকার। যথাঃ ১। রুকইয়াহ্‌ শারইয়্যাহ্‌ ও ২। রুকইয়াহ্‌ শিরকিয়্যাহ্‌ ।

আর বিভিন্ন ভাবে রুকইয়াহ করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া/আয়াত পড়ে ফুঁ দিয়ে খাওয়া বা ব্যবহার করা হয়। [4]

রুকইয়ার পূর্বশর্ত

রুকইয়া করে উপকার পাওয়ার জন্য তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।

  • নিয়্যাত (কেন রুকইয়া করছেন, সেজন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়াত করা)।
  • ইয়াক্বিন (এব্যাপারে ইয়াকিন রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা আছে)।
  • মেহনত (অনেক কষ্ট হলেও, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া)।

লক্ষণীয়ঃ রুকইয়া থেকে পুর্ণ ফায়দা পাওয়ার জন্য দৈনন্দিনের ফরজ ইবাদাত অবশ্যই পালন করতে হবে, পাশাপাশি সুন্নাতের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। (যেমনঃ প্রতিদিনের নামাজ, মেয়েদের পর্দার বিধান) যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি, পুতুল বা ভাস্কর্য রাখা যাবেনা। আর সুরক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন আমলগুলো[5] অবশ্যই করতে হবে। আর ইতিমধ্যে শারীরিক, মানসিক ক্ষতি হয়ে গেলে, তার জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

শিশুদের বিভিন্ন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ বা ইসলাম সম্মত ঝাড়ফুঁক[6]

শুরুতে মনে মনে নিয়াত করে নেয়া কোন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করা হবে, এরপর শিশুর মাথায় হাত রেখে কয়েকবার এই দুয়াগুলো পড়া। আর মাঝেমাঝে শিশুকে ফুঁ দেয়া।

রুকইয়াহ করার দোয়া-কালাম
أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

উ"ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি "আঈনিল্লা-ম্মাহ।

بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ

বিসমিল্লা-হি আরকীক। মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ'যীক। মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও "আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফীক। বিসমিল্লা-হি আরকীক।

بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ

বিসমিল্লা-হি ইউবরীক। ওয়ামিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক। ওয়ামিং শাররি হাসিদিন ইযা- হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী "আঈন ।

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স। আযহিবিল বা'স । ইশফি ওয়াআংতাশ শা-ফী। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউক। শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-।

এরপর সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি এবং সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩ বার করে পড়া।

সমস্যার মাত্রা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে আরেকবার এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন পান করা এবং গোসল করা। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এই দুটি কাজ করা। এছাড়া কোন অঙ্গে বিশেষ রোগব্যাধি থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে অলিভ অয়েল বা কালোজিরার তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করা।

ছোটদের পাশাপাশি বড়দের মাঝে কেউ নিজে রুকইয়াহ করতে অক্ষম হলে তার ওপরেও একই নিয়মে রুকইয়াহ করা যায়।

বদনজর এর জন্য রুকইয়াহ[7]

বদনজর আক্রান্ত হওয়ার লক্ষন:

১। শরীরে জ্বর থাকা, কিন্তু থার্মোমিটারে না উঠা।

২। কোনো কারণ ছাড়াই কান্না আসা।

৩। সবসময় শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।

৪। অহেতুক বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা। মেজাজ বিগড়ে থাকা।

৫। আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের সাথে দেখা হলেই অস্বস্তি লাগা।

৬। অতিরিক্ত চুল পড়া বা পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া। শ্যাম্পু বা ঔষধে তেমন কোন উপকার না পাওয়া।

৭। একের পর এক বিভিন্ন সব অসুখ লেগে থাকা, যা দীর্ঘদিন চিকিৎসাতেও ভালো হয় না।

৮। চাকরি বা ব্যবসায় ঝামেলা লেগে থাকা। একের পর এক দুর্ঘটনা লেগেই থাকা।

বদনজরের চিকিৎসা:

প্রথম পদ্ধতি:

যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে তাহলে সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর হাদিসটা অনুসরণ করলেই হবে। অর্থাৎ যার নজর লেগেছে তাকে অযু করতে বলবে, অযুর পানিগুলো একটা পাত্রে জমা করবে, এরপর সেটা আক্রান্ত ব্যাক্তির গায়ে ঢেলে দিবে। তাহলেই নজর কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ।

এই পদ্ধতিতে সাধারণ একবারেই বদনজরের প্রভাব দূর হয়ে যায়। তবেঁ, প্রয়োজনে ২-৩দিন করা লাগতে পারে। আর হ্যাঁ! অনেকের ক্ষেত্রে এই ওযু করার পানি ঢালার পর, প্রচণ্ড পায়খানা বা প্রসাবের বেগ আসে, সেটা হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হয়ে যায়। আর যদি জানা না যায় কার নজর লেগেছে, কিংবা যদি অনেক দিনের পুরনো সমস্যা হয়, তাহলে দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।

দ্বিতীয় পদ্ধতি:

১. রুকইয়ার আয়াতগুলো প্রতিদিন তিলাওয়াত করা অথবা শোনা, সরাসরি কারও তিলাওয়াত শোনা সম্ভব না হলে অডিও রেকর্ড শোনা।

তিলাওয়াত করার জন্য আয়াতের ই-বুক[8] আর শোনার জন্য (Evil Eye অথবা Eye Hasad নামে) রুকইয়াহ অডিও[9] পাওয়া যায় রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডির ওয়েবসাইট থেকে[10]

২. আর প্রতিদিন অথবা একদিন পরপর রুকইয়ার গোসল করা।

সমস্যা সম্পূর্ণ দূর হওয়া পর্যন্ত এই কাজগুলো করতে থাকা উচিত।

রুকইয়ার গোসলের পদ্ধতি

একটা বালতিতে পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে - "দরুদ শরিফ, ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, চারকুল (কাফিরুন, ইখলাস, ফালাক্ব, নাস) প্রতিটি ৭ বার। শেষে আবার দরুদ শরিফ ৭ বার পড়া। অথবা স্বাভাবিকভাবে এসব পাঠ করার পর পর্যাপ্ত পরিমাণ গোসলের পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করা।"

উল্লেখ্য, যদি টয়লেট এবং গোসলখানা একসাথে হয়, তাহলে অবশ্যই পানির পাত্র বাহিরে এনে এসব পড়তে হয়। আর যার সমস্যা সে যদি পড়তে না পারে, তাহলে অন্যজন এভাবে পানি প্রস্তুত করে দিলেও যথেষ্ট হয়।

ওয়াসওয়াসা (OCD) রোগের জন্য রুকইয়াহ

  1. এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। প্রতিদিন ১০০বার। কম হলেও ৩৩বার। أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ
  2. আয়াতুল হারক (আযাব এবং জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত) বেশি বেশি তিলাওয়াত করা।[8] এবং প্রতিদিন ৩-৪বার এসবের তিলাওয়াত শোনা। (ডাউনলোড পেইজ দ্রষ্টব্য[9])
  3. নাপাক থেকে বেঁচে থাকা, বিশেষত প্রস্রাবের ছিটা থেকে বাঁচা। যথাসম্ভব সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা।
  4. জামাআতের সাথে নামাজ পড়া, মুত্তাকী পরহেজগারদের সাথে উঠাবসা করা।
  5. সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।[5]

জ্বিন আসরের জন্য রুকইয়াহ (জ্বিন ছাড়ানোর পদ্ধতি)

যিনি রুকইয়া করবেন তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এরপর রুকইয়া শুরু করবেন। জ্বিনের রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কথাবার্তা বলে জ্বিন বিদায় করতে হয়, এক্ষেত্রে যিনি রুকইয়া করবেন তাঁকে উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। ঘাবড়ানো যাবেনা। রুগীর মাথায় হাত রেখে অথবা (গাইরে মাহরাম হলে) পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়তে থাকুন।

রুকইয়ার অনেক আয়াত আছে, তবে স্বাভাবিকভাবে

  • সুরা ফাতিহা।
  • আয়াতুল কুরসি।
  • সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত।
  • সুরা ফালাক।
  • সুরা নাস।
  • সুরা মু’মিনুনের ১১৫-১১৮ নং আয়াত।
  • সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত।

পড়তে পারেন। ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট হবে। জ্বিন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত এগুলো বারবার পড়তে হবে আর ফুঁ দিতে হবে, অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়তে হবে। জিন কথা বলতে শুরু করলে মাঝেমাঝে তাকে চলে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিতে হবে, এরপর আবার অবিরত তিলাওয়াত চালু রাখতে হবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ জ্বিন পালাতে বাধ্য হবে।

বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলেঃ

বাড়িতে জ্বিনের কোনো সমস্যা থাকলে পরপর তিনদিন পূর্ন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন, এরপর আযান দিন। তাহলে ইনশাআল্লাহ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তিলাওয়াত না করে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কয়েকবার যদি সুরা বাক্বারা প্লে করা হয় তাহলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেলে তিলাওয়াত করা উচিত। এরপর প্রতিমাসে অন্তত এক দুইদিন সুরা বাকারা পড়বেন। আর ঘরে প্রবেশের সময়, বের হবার সময়, দরজা-জানালা বন্ধের সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। তাহলে ইনশাআল্লাহ আর কোন সমস্যা হবে না।

যাদু আক্রান্ত / বান মারা / তাবিজ করা ব্যক্তির জন্য রুকইয়াহ (যাদুর চিকিৎসা)

যাদুর প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়া করা হয়। তবে কমন সেলফ রুকইয়া হচ্ছে, প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে নিন, ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। তারপর কোন রুকইয়া শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই সমস্যা আছে কি না! শাইখ সুদাইসের রুকইয়া অথবা সিহরের রুকইয়া শুনতে পারেন (ডাউনলোড পেইজ দ্রষ্টব্য[9])। সবশেষে একটি বোতলে পানি নিন, এরপর-

  1. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২ আয়াত।
  2. ইউনুস ৮১-৮২ আয়াত।
  3. সুরা ত্বহা ৬৯" আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিন।
  4. শেষে সুরা ফালাক্ব, সুরা নাস ৩বার পড়ে ফুঁ দিন।
১.[11]

وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (118) فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوا صَاغِرِينَ (119) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ (120)قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ (121) رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ (122)

২.[12]

فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ (81) وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ (82)

৩.[13]

وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ (69)

তিন থেকে সাতদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, আর গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর ৩/৪ সপ্তাহ প্রতিদিন কমপক্ষে দুইঘণ্টা রুকইয়া শুনতে হবে। একঘণ্টা সাধারণ রুকইয়া, আর একঘণ্টা সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের রুকইয়াহ। (অডিওর জন্য ডাউনলোড পেইজ দ্রষ্টব্য[9]) আর পাশাপাশি তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে দোআ করতে হবে।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহেই উন্নতি টের পাওয়া যায়, তবে এরপরের কয়েক সপ্তাহ একঘন্টা করে হলেও রুকইয়া শুনে যেতে হবে। বাদ দেয়া যাবে না। তাহলে ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবে। সমস্যা যদি দুই-তিন সপ্তাহ পরেও ভালো না হয়, তবে আবার অনুরূপ করতে হবে।

যাদুর জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলেঃ

কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, অথবা সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে উপরে বলা আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর তাবিজ অথবা যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে দিন।

যাদু আক্রান্ত হলে বুঝার উপায়ঃ

রুকইয়ার আয়াতগুলো যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর পড়লে, অথবা রুকইয়ার আয়াতের অডিও শুনলে যাদুগ্রস্তের অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়। যেমনঃ- শরীর ঘর্মাক্ত হওয়া, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি।

রুকইয়ার আয়াত

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে[14]

  1. সুরা ফাতিহা।
  2. সুরা বাকারা ১-৫ আয়াত।
  3. সুরা বাকারাহ ১০২ আয়াত
  4. সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪ আয়াত।
  5. সুরা বাকারাহ ২৫৫ আয়াত।
  6. সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬ আয়াত।
  7. সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯ আয়াত।
  8. সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬ আয়াত।
  9. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২ আয়াত।
  10. সুরা ইউনুস ৮১-৮২ আয়াত।
  11. সুরা ত্বহা ৬৯ আয়াত।
  12. সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮ আয়াত।
  13. সুরা সফফাত ১-১০ আয়াত।
  14. সুরা আহকাফ ২৯-৩২ আয়াত।
  15. সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬ আয়াত।
  16. সুরা হাশর ২১-২৪ আয়াত।
  17. সুরা জিন ১-৯ আয়াত
  18. সুরা ইখলাস।
  19. সুরা ফালাক।
  20. সুরা নাস।

তথ্যসূত্র

  1. রুকইয়াহ। বাংলাবাজার, ঢাকা: মাকতাবাতুল আসলাফ। ২০১৮। পৃষ্ঠা ১৫। আইএসবিএন 978-984-94065-3-2।
  2. সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ইফাঃ ৫৫৪৪, ইসলাম ওয়েব ২২০০)
  3. "রুকইয়াহ আশ-শিরকিয়্যাহ"
  4. "প্রবন্ধঃ মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ (তৃতীয় সংস্করণ)"
  5. "[প্রবন্ধ] জিন এবং যাদুর ক্ষতি থেকে বাচার উপায়"Ruqyah Support BD
  6. রুকইয়াহ। বাংলাবাজার, ঢাকা: মাকতাবাতুল আসলাফ। পৃষ্ঠা ২৩৭।
  7. রুকইয়াহ। বাংলাবাজার: মাকতাবাতুল আসলাফ। ২০১৮। পৃষ্ঠা ৮৩।
  8. "রুকইয়াহ পিডিএফ ডাউনলোড"Ruqyah Support BD
  9. "রুকইয়াহ অডিও ডাউনলোড"Ruqyah Support BD
  10. "রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডি"Ruqyah Support BD। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২৪
  11. সুরা আরাফ, আয়াত ১১২-১১৭
  12. সুরা ইউনুস, আয়াত ৮১-৮২
  13. সুরা ত্বহা, আয়াত ৬৯
  14. الصارم البتار في التصدي للسحرة الأشرار (২০তম সংস্করণ)। মিসর: শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.