রামচরিতম্
রামচরিতম্ সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত সংস্কৃত ভাষার একটি কাব্যগ্রন্থ। আনুমানিক ১০৫০ থেকে ১১৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে রচনা করা হয়। রামচরিতম্ সংস্কৃত ভাষায় রচিত বরেন্দ্র বা উত্তর বাংলার একমাত্র গ্রন্থ যেখানে পাল শাসনামলের ঐতিহাসিক ঘটনাবলি স্থান পেয়েছে। এই কাব্যে যুগপৎ হিন্দু ধর্মের অবতার রামচন্দ্র এবং গৌড়ের রাজা রামপালের প্রশংসা বর্ণনা করা হয়েছে। তথাপি এই কাব্যকে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসাবে মনে করা হয়। [1]
কৈবর্ত দিব্য কর্তৃক বরেন্দ্র বিদ্রোহের মাধ্যমে পাল রাজা দ্বিতীয় মহিপালের হত্যাকান্ড ও বরেন্দ্রর পতন এবং পরবর্তিতে রামপালের বরেন্দ্র পুনরুত্থানের কাহিনী লিপিবদ্ধ হয়েছে। রামপালের পর রাজা মদনপালের রাজত্বের প্রাথমিক সময়ের কিছু বর্ণনাও রামচরিতম্ এ পাওয়া যায়। কাব্যগ্রন্থটিতে পরিশিষ্টে ২০ টি শ্লোক সহ সর্বমোট ২১৫ টি শ্লোক রয়েছে। কাব্য রচনায় ‘শ্লেষ’ বা দ্ব্যর্থবোধক রীতি অনুসরণ করা হয়েছে। যেখানে একই শব্দের দুইটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ পায়। প্রথম অর্থে রামায়নের কাহিনী ও দ্বিতীয় অর্থে রাজা রামপালের প্রশস্তি।[2] কৈবর্ত দিব্যর দ্বারা বরেন্দ্রর পতনকে তিনি রামায়নের সীতাহরনের সাথে তুলনা করেছেন। রামপাল কর্তৃক বরেন্দ্রর পুনরুদ্ধারকে তিনি রাবনের বিরুদ্ধে রামের বিজয়ের সাথে তুলনা করেছেন। কাব্যগ্রন্থের মূল বিষয় হল কেন্দ্রীয় চরিত্র রামপালের প্রশস্তি ও গুণগান। এছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাকৃতিক বর্ণনাও এ কাব্যে স্থান পেয়েছে। [3]
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তালপাতায় লেখা রামচরিতম্ এর মূল পান্ডুলিপি আবিষ্কার করেন। ১৯১০ সালে তার এই আবিষ্কার প্রকাশিত হয়। বর্তমানে কোলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির যাদুঘরে পুঁথিটি রক্ষিত আছে।
তথ্যসূত্র
- Susan L. Huntington (১ জানুয়ারি ১৯৮৪)। The "Påala-Sena" Schools of Sculpture। Brill Archive। পৃষ্ঠা 32। আইএসবিএন 90-04-06856-2।
- Roy N. (1993). Bangalir Itihas: Adiparba, Dey's Publishing, Calcutta, আইএসবিএন ৮১-৭০৭৯-২৭০-৩, p.583
- /বাংলাপিডিয়া