রাজশাহী রাজ পরিবার
অষ্টাদশ শতকে রাজশাহী রাজ পরিবারের বিশাল জমিদারি ছিলো। তাদের জমিদারির সীমানা বর্তমান বাংলাদেশ এবং ভারতের বাংলা প্রদেশের প্রায় ৩৩,৬৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিলো। আয়তন বিচারে বর্ধমান রাজ পরিবারের পরেই রাজশাহী রাজ পরিবারের স্থান। অষ্টাদশ শতকে নবাব মুর্শিদ কুলি খান (১৭০৪-১৭২৭) যখন বাংলার সুবাদার ছিলেন, তখন এই রাজপরিবার উক্ত জমিদারি লাভ করে।
রাজ প্রাসাদ | |
রাষ্ট্র | পূর্ব বাংলা |
---|---|
প্রতিষ্ঠাকাল | অষ্টাদশ শতক |
প্রতিষ্ঠাতা | রাজা কামদেব রায় |
বর্তমান প্রধান | আইনত রহিত (১৯৫০) |
পরিবারটি নাটোর রাজবাড়ীতে থেকে তাদের প্রজা,জমিদারি এবং এস্টেট শাসন করত। নাটোর রাজবাড়ী এখনো তাদের সমৃদ্ধ অতীতের চিহ্ন হিসেবে টিকে আছে। রাজপরিবারের একজন সদস্য মহারাজা জগদিন্দ্র নারায়ন রায়, যিনি ক্রিকেট খেলা খুব পছন্দ করতেন। তিনি ক্রিকেট খেলার একজন ভালো পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি চাইতেন ক্রিকেট খেলায় ব্রিটিশদের করতে,যেখানে ক্রিকেট খেলার জনক ব্রিটিশরাই। তার প্রতিদ্বন্দী ছিলেন বর্তমান ভারতের কুচ-বিহারের মহারাজা।[1]
ইতিহাস
নবাব মুর্শিদ কুলি খানের আমলে অনেক অভিজাত বংশ এবং ভূস্বামী জমিদারি পেয়েছিলেন। পাশাপাশি অবাধ্যতা এবং বিদ্রোহের কারণে অনেককেই জমিদারি হারাতে হয়েছিলো। নবাব মুর্শিদ কুলি খান চায়তেন তার বিশ্বস্ত লোকেরা জমিদার হোক। তাই তিনি অবাধ্যদের কাছ থেকে জমিদারি কেড়ে নিয়ে বিশ্বস্ত লোকদের দান করতেন। এই স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় এক সুবিধালাভকারী পরিবারের একটি হলো রাজশাহী রাজ পরিবার। তারা সেই সময় বিশাল জমিদারি লাভ করেছিলেন।
পুঠিয়া রাজার তহশিলদার কামদেব রায় রাজশাহী রাজ পরিবারের ভিত্তি স্থাপন করেন। কামদেব রায়ের তিন জন পুত্র সন্তান ছিলো। তারা হলেন রামজীবন, রঘুনন্দন এবং বিষ্ণুরাম। রঘুনন্দন প্রচন্ড আশাবাদী এবং উদ্যোমী ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। রঘুনন্দনের উন্নতির পেছনে পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ন এবং নবাব মুর্শিদ কুলি খানের অনেক অবদান ছিলো।
নবাব মুর্শিদ কুলি খান যখন তার সুবেদারি নিয়ে জটিলাবস্থা পার করছলেন তখন রঘুনন্দন সব সময় নবাবের পাশে ছিলেন। তিনি নবাবকে সর্বোতভাবে সাহায্য-সহযোগীতা করতেন। এভাবে তিনি নবাবের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলেন। যখন দিওয়ানি মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হলো তখন রঘুনন্দনকে প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলো। এসময় তিনি নবাবের আরো কাছে যাওয়ার সুযোগ পেলেন। মূলত এই কারণে নবাব (তৎকালীন নায়েব,পরবর্তীতে বাংলার নবাব) তাকে রাজ-বংশ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দিয়েছিলেন
অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে মাত্র কয়েকজন জমিদার সমগ্র বাংলা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এরপর ব্রিটিশরা যখন বাংলার শাসন ক্ষমতায় আসলো, তারা এই সমস্ত জমিদারদের তাদের শাসন ব্যাবস্থার জন্য বিপদের কারণ মনে করলেন। কারণ এই জমিদারদের অনেক ক্ষমতা ছিলো। তারা মোর্চা গঠনের মাধ্যমে যে কোন সময় বিদ্রোহ করে ব্রিটিশদের পরাজিত করে দিতে পারে। তাই ব্রিটিশরা জমিদার পরিবার গুলোকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত করতে থাকে। তারা সূর্যাস্ত আইন বানালো। এই আইন অনুসারে কর প্রদানের দিন সূর্যাস্তের পূর্বেই সকল জমিদারদের কর প্রদান করতে হবে এবং কোন জমিদার কর দিতে ব্যার্থ হলে তাদের কাছ থেকে জমিদারি কেড়ে নেওয়া হবে। এই আইনে অনেক অভিজাত রাজ পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। উন্নত নগরাসেবা এবং সমৃদ্ধির জন্য সমস্ত বাংলায় রাজশাহী রাজ পরিবার বিখ্যাত ছিলো। বিশেষত সেখানে ঢোপকলের মাধ্যমে নগরে বিশুদ্ধ পানির ব্যাবস্থা ছিলো, যা আর কোথাও ছিলো না। উক্ত রাজ পরিবার অনেক স্থাপনা নির্মাণ করে।রাজশাহী হয়ে উঠে উন্নত জনপদ। ১৭৮৮ সালে বৃদ্ধ বয়সে রানী ভবানী তার পালক পুত্র রাজা রামকৃষ্ণ কে তার সমস্ত জমিদারি দিয়ে দিয়েছিলেন।[2] রানী ভবানী এই রাজ পরিবারের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব।
রাজ পরিবারের পতন
১৭৯৮ সালের এপ্রিল মাসে রাজা বিশ্বনাথ জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৭৯০ সালের পর থেকেই জমিদারির অচলাবস্থা শুরু হয়। রাজা বিশ্বনাথ এর আমলে জমিদারিতে অনেক বকেয়া তৈরী হয়ে যায়। কিন্তু তিনি বকেয়া পূরনে কার্যকর ব্যাবস্থা নিতে পারলেন না। তাকে বাধ্য হয়ে তাকে জমি বিক্রি করে দিতে হলো। এভাবে ক্রমশ পরিবারটি ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে। ১৮০০ সালের মধ্যে প্রতাপশালী রাজশাহী রাজ পরিবারটি একদম দুর্বল হয়ে গেলো
অষ্টাদশ শতক জুড়ে পরিবারটি তাদের সমৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু তাদের পতন শুরু হয় পরবর্তী শতকে। উনিশ শতকে এসে অত্যান্ত দুর্বলভাবে পরিবারটি টিকে ছিলো। পুরাতন সমৃদ্ধি এবং প্রতাপ বলতে গেলে কিছুই ছিলো না। বিংশ শতাব্দীতে এসে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভেঙে গণতান্ত্রিক পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। [2]
উচ্চতর
- Jamini Kanta Bhaduri (1912) A Short History Of Natore Raj আইএসবিএন ০-০৪-৩৯৪২০৪-০
তথ্যসূত্র
- Maharaja of Natore: A patron of Cricket
- Mahmood, ABM; Islam, Sirajul (২০১২)। "Rajshahi Raj"। Islam, Sirajul; Jamal, Ahmed A.। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh।