রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল (ইংরেজি: Rajshahi University School) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধীনে পরিচালিত একটি স্কুল (শ্রেণী ১-১২)। এখানে স্কুল এবং কলেজ শাখা দুটিই বিদ্যমান। এই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এই স্কুলের কলেজ শাখা যাত্রা শুরু করে ১৯৮৩ সালে। জাতীয় শিক্ষাক্রম এর অধীনে বাংলা মাধ্যমে পাঠদান করা হয় এই স্কুলে। শিক্ষার্থীদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, নবম এবং একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে এই স্কুলে প্রায় ৩৫০০ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত আছে।[1][2][3]

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল
অবস্থান
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস
রাজশাহী, ৬২০৫
 বাংলাদেশ
তথ্য
ধরনকো-শিক্ষাগত
প্রতিষ্ঠাকাল১৯৬৬
রঙইউনিফর্ম
         সাদা এবং নৌবাহিনী নীল
ডাকনামRUS
প্রকাশনাবার্ষিকি
বোর্ডরাজশাহী শিক্ষা বোর্ড

ইতিহাস

স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। পরবর্তীতে কলেজ শাখার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। প্রাথমিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাড়ার উত্তর অংশের আবাসিক ভবনে এবং টিনশেড ভবনে এর কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীকালে কাজলা গেটের পাশে এর নিজস্ব ভবন তৈরি করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর মাধ্যমে এই স্কুলটি পরিচালিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং গবেষণা ইন্সটিটিউট এর মাধ্যমে এই স্কুল পরিচালিত হয়।

পরিচিতি

প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মোট ২৮ টি শাখা রয়েছে এই স্কুল এর। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সহশিক্ষা প্রচলিত এবং চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র এবং ছাত্রী দের আলাদা আলাদা ক্লাস নেওয়া হয়। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ক এবং খ নামে দুটি আলাদা শ্রেণী রয়েছে। এছাড়া নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত প্রতি ক্লাসে তিনটি করে শ্রেণী আছে, বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাবসায় শিক্ষা।

বর্তমানে এই স্কুলে প্রায় ৫০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, একজন অধ্যক্ষ এবং একজন উপাধ্যক্ষ শিক্ষাদানে নিয়োজিত আছেন। এছাড়া ২৫ জন কর্মকর্তা এবং কর্মচারী আছেন এই স্কুলে।

ভর্তি

মুলত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্যই এই স্কুলটি পরিচালিত হয়। এই ক্ষেত্রে ভর্তি পদ্ধতি বেশ সহজ। আসন ফাকা থাকা সাপেক্ষে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রী ও ভর্তির সুযোগ পায়। সেক্ষেত্রে ভর্তি অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। ভর্তির ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। স্কুল শাখার ভর্তি সাধারণত ডিসেম্বর মাসে এবং ক্লাস জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হবার পর থেকে একাদশ শ্রেণীর ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় এবং জুলাই/আগস্ট মাস থেকে ক্লাস শুরু হয়।

শিক্ষা এবং পাঠ্যক্রম

জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুসারে এই স্কুলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা মাধ্যমে পাঠদান করা হয়। দশম শ্রেণী শেষে মাধ্যমিক পরীক্ষা (এসএসসি) এবং দ্বাদশ শ্রেণী শেষে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া পঞ্চম শ্রেণী শেষে পিইসি এবং অষ্টম শ্রেণী শেষে জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।এই স্কুলে প্রায় ৫০০০ এর ও বেশি বই সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার আছে যেখানে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ভ্রমন কাহিনি বিষয়ক বই ছাড়াও একাডেমিক বই আছে।

সুযোগসুবিধা এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম

এই স্কুলের রয়েছে নিজস্ব গ্রন্থাগার। শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে বসে যে কোন বই পাঠের পাশাপাশি বিভিন্ন বই ইস্যু করতে পারেন। স্কুলের নিজস্ব বায়োলজি ল্যাব, ফিজিক্স ল্যাব এবং কেমিস্ট্রি ল্যাব রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা কমন রুম এবং কম্পিউটার ল্যাব আছে।

আনুষ্ঠানিক পোশাক/ ইউনিফর্ম

সকল শিক্ষার্থীর জন্য নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম পরা বাধ্যতামূলক

  • ছাত্র - শাদা শার্ট এবং নেভি ব্লু প্যান্ট।
  • ছাত্রী - নেভি ব্লু ফ্রক, শাদা পায়জামা এবং সাদা ওড়না

এছাড়া, স্কুলের ব্যাজ, কেডস এবং শীতকালে মেরুন রঙের সোয়েটার/জ্যাকেট পরতে হয়।

শিক্ষা সহায়ক অতিরিক্ত কার্যক্রম

বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের জন্য এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা সবসময়েই তৎপর। স্কুলের ডিবেটিং সোসাইটি নিয়মিত বিতর্ক চর্চা এবং প্রতিযোগিতা আয়োজন এবং অংশগ্রহণ করে থাকে। স্কুলের নিজস্ব স্কাউট, বিএনসিসি এবং গার্লস গাইড দল রয়েছে। এই দল গুলো নিয়মিত বিভিন্ন বিষয় চর্চা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি করে থাকে। স্কুলের নিজস্ব ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল এবং হ্যান্ডবল দল রয়েছে। এই দল গুলো প্রতি বছর জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত প্রতিযোগীতায় সুনামের সাথে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপর বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনায় বাৎসরিক সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। এখানে হামদ, নাত, কেরাত, আজান, বিতর্ক, কবিতা আবৃতি, সংগীত, গল্প বলা, কৌতুক ইত্যাদি আয়োজন করা হয়। বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে।

স্কুলের ডিবেটিং সোসাইটি বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই দল একাধিক বার জেলা পর্যায়ের বিতর্ক প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ন এবং রানার আপ হয়েছে। এছাড়া তার জাতীয় টিভি বিতর্কেও অংশ নিয়েছে। মেধাবি শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর সায়েন্স এবং গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেয়।

স্কুলে নিয়মিত ভাবে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, ধর্মীয় প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, পূজা এবং বার্ষিক পুরস্কার বিতরনি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস আনুষ্ঠানিক ভাবে উদযাপন করা হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয় প্রভাতফেরী।

শিক্ষক-শিক্ষিকা বৃন্দ - সাবেক এবং বর্তমান

অর্জন এবং পুরস্কারসমূহ

  • শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পদক ১৯৯১
  • শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পদক ১৯৯৬
  • শ্রেষ্ঠ চিত্র শিল্পী পদক ২০০৪
  • শ্রেষ্ঠ গার্লস গাইড দল ২০০৫
  • শ্রেষ্ঠ রেঞ্জার দল ২০০৫
  • রানারআপ - আন্তঃ স্কুল বিতর্ক উৎসব ২০০৮
  • চ্যাম্পিয়ন - আন্তঃ স্কুল বিতর্ক উৎসব ২০১০

স্কুল বার্ষিকী

রাবি স্কুল প্রতি বছর স্কুল বার্ষিকী নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে। স্কুলের শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীদের লেখা কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, সায়েন্স ফিকশন, কৌতুক, ভ্রমন কাহিনী ইত্যাদি প্রকাশিত হয় এই বার্ষিকীতে।

তথ্যসূত্র

  1. "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩১
  2. "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন | banglatribune.com"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩১
  3. "রাজশাহী ও চট্টগ্রামে দুটি ক্রীড়া স্কুল হচ্ছে"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩১
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.