রক্তগ্রুপ

রক্ত গ্রুপ বা রক্তের ধরন (ব্লাড গ্রুপ বা ব্লাড টাইপ) লোহিত রক্তকণিকার (আরবিসি) পৃষ্ঠে বংশগতভাবে প্রাপ্ত অ্যান্টিজেনিক পদার্থের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে রক্তের একটি শ্রেণীবিভাগ। এর উপর ভিত্তি করে কার রক্ত কাকে দান করা যাবে তা নির্ভর করে। রক্তের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যায় লোহিত রক্ত কণিকা থাকে বলে তাদের কোষপর্দায় কি কি অ্যান্টিজেন আছে তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেক ব্লাডগ্রুপ অ্যান্টিজেনই নানা কোষের কোষপর্দায় থাকে বা অনেকসময় শ্লেষ্মা ইত্যাদির মধ্যে ক্ষরণপদার্থ হিসাবেও থাকে।

লোহিত রক্তকণিকার অংশে এবিও রক্তগ্রুপ অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি দ্বারা রক্তের গ্রুপ (বা রক্তের ধরণ) নির্ধারণ করা হয়।
এ-বি-ও রক্তের গ্রুপ সিস্টেম: চিত্রটি কার্বোহাইড্রেট চেইন দেখাচ্ছে যা এবিও রক্ত​​গ্রুপ নির্ধারণ করে

একটি লোকাসে (ক্রোমোজোমের উপর জিন গত অবস্থান) আবস্থিত সবকটি সাম্ভাব্য অ্যালিলকে নিয়ে হয় এক একটি ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম এ-বি-ও ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম এবং আরএইচ ডি (Rh D) ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম এই দুটি সবচেয়ে বিখ্যাত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও মানুষের বেলায় এরকম ২৯টি[1] ব্লাড গ্রুপ সিস্টেমকে আই এস বি টি (International Society of Blood Transfusion) অনুযায়ী মানা যেতে পারে। এই ২৯টি সিস্টেমে মোট ৬০০রও বেশি অ্যান্টিজেন আছে। তবে এই ৬০০টির অনেকই খুব দুষ্প্রাপ্য বা কোনো বিশেষ জাতির বাইরে দেখা যায় না।

অনেক গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণ তাদের নিজেদের থেকে আলাদা একটি একটি রক্তের গ্রুপ বহন করে এবং মা, ভ্রূণের RBC সমূহের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি গঠন করতে পারেন. কখনও কখনও এই মাতৃক অ্যান্টিবডি (এমনকি খুব কম পরিমানে)অমরা পার করে একটি অসুস্থতার হেমোলিটিক রোগ হতে পারে, যা ভ্রূণের RBC সমূহের, এর হিমলাইসিস সৃষ্টি করতে পারে যা IgG, একটি ছোট ইমিউনোগ্লোব্যুলিন, কখনও কখনও এইজন্য ভ্রূণ প্রাণঘাতী হয়; এইসব ক্ষেত্রে এটি hydrops fetalis বলা হয়।

রক্ত দান করার সময় গ্রহীতার রক্তে দাতার রক্ত মেশবার সময় গ্রুপ গ্রহণযোগ্য (কম্প্যাটিবল্ বা ম্যাচিং) হবে না যদি গ্রহীতার রক্তরসে অবস্থিত অ্যান্টিবডি দাতার কোষের উপরস্থ অ্যান্টিজেনকে চিনতে পারে, পারলে গ্রহীতার অ্যান্টিবডির আক্রমণে দাতার রক্তকোষগুলি তাল পাকিয়ে জমাট (হিম-অ্যাগ্লুটিনেশন) বেঁধে যাবে বা ফেটে নষ্ট (হিমো-লাইসিস) হয়ে যাবে। দাতার রক্তের অ্যান্টিবডি ততটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ সাধারণতঃ দাতার অ্যান্টিবডি গ্রহীতার রক্তরসে মিশে গেলে দাতার অ্যান্টিবডির ঘনত্ব গ্রহীতার কোষেগুলির অতটা ক্ষতি করতে সক্ষম হয়না। দাতার কোষগুলি "প্যাকড সেল" হিসাবে দিলে রক্ত রস এমনিতেই কম দেওয়া হচ্ছে। তবে খুব বেশি পরিমাণ দাতার প্লাজমা (রক্তরস) দিতে হলে কিন্তু প্লাসমার গ্রহণযোগ্যতাও দেখতে হবে, এবং ক্ষেত্রে দাতার অ্যান্টিবডি আর গ্রহীতার অ্যান্টীজেনের মধ্যে মিল থাকলে চলবে না। সাধারণতঃ কোনো নীরোগ ব্যক্তির নিজের রক্তকোষে যে অ্যান্টিজেন থাকে তার বিরুদ্ধে অ্যান্টীবডি তৈরি হয় না। এ বি ও সিস্টেমের বেলায় নীরোগ ব্যক্তির নিজের রক্তকোষে যে অ্যান্টীজেন থাকে না তার বিরুদ্ধে অ্যান্টীবডি আগে থেকেই থাকে (দুর্বোধ্য কারণে) এবং সেই অ্যাণ্টীজেন ধারী কোষকে দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ করে, আর এইচ সিস্টেমের বেলায় অ্যান্টীজেনধারী দাতা কোষ-কে একবার দেখলে তার পরেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং তাই প্রথমবার তেমন অসুবিধা হয় না, কিন্তু পরে (দ্বিতীয়বার) একই রকম দাতা কোষকে দেখলে তখন অসুবিধা করে।

তথ্যসূত্র

  1. "Table of blood group systems"। International Society of Blood Transfusion। ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১১-১৪ অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  2. "RBC compatibility table"। American National Red Cross। ডিসেম্বর ২০০৬। ২০১১-০৮-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৭-১৫
  3. Blood types and compatibility ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ এপ্রিল ২০১০ তারিখে bloodbook.com
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.