যুক্তি তক্কো আর গপ্পো

যুক্তি তক্কো আর গপ্পো ঋত্বিক ঘটক এর পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র।[2] এই ছবিটির কাজ শুরু হয় ১৯৭৪ সালে এবং শেষ হবার পরে ছবিটি মুক্তিপ্রাপ্ত হয় ১৯৭৭ সালে। এই ছবিটি-ই ঋত্বিক ঘটক–এর শেষ ছবি। এই ছবিটিকে অনেকে ঘটক এর আত্মজীবনীমূলক ছবি বলে বিবেচনা করেন।

যুক্তি তক্কো আর গপ্পো
চিত্র:Jukti Takko Aar Gappo DVD cover.jpg
যুক্তি তক্কো আর গপ্পো ডিভিডি কভার
পরিচালকঋত্বিক ঘটক
প্রযোজকরিতা প্রোডাকসন্স, ঋত্বিক ঘটক
রচয়িতাঋত্বিক ঘটক
সুরকারওস্তাদ বাহাদুর খান
চিত্রগ্রাহকবেবী ইসলাম
সম্পাদকঅমলেশ শিকদার
মুক্তি
  • ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ (1977-09-30) (Kolkata)
দৈর্ঘ্য১২০ মিনিট [1]
দেশভারত
ভাষাবাংলা

কাহিনী সংক্ষেপ

শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবি অথচ মাতাল নীলকণ্ঠকে মাঝ বয়সে স্ত্রী'র সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদে যেতে হয়। স্ত্রী, সন্তান আর কলকাতার গলিপথ ছেড়ে সে বেরিয়ে পড়ে। তার সঙ্গী হয় পাড়ার তরুণ নচিকেতা। দুজনের যাত্রা শুরু হয় অজানার উদ্দেশ্যে। পথে পরিচয় হয় বঙ্গবালা'র সঙ্গে। ১৯৭১-এর ৩০ মার্চ বাংলাদেশে পাকিস্তানি মিলিটারির বর্বরতার শিকার সে। তার সঙ্গে আছে টোলের পণ্ডিত। কলকাতায় তারা এসেছেন জীবন ও জীবিকার আশায়। এই চারজন এক সাথে পথ চলা শুরু করে। এক সময় তারা এসে পৌঁছায় পুরুলিয়ায়। ছৌ নাচের শিল্পীদের সঙ্গে সেখানে ভূমি দখলদারদের লড়াই চলছে। লড়াইয়ের এক পর্যায়ে গুলিতে নিহত হয় পণ্ডিত। এরপর তারা তিনজন যায় বীরভূমে, সেখানে তার স্ত্রীকে সে অনুরোধ করে, কাল সকালে ছেলেকে একটু দেখতে দেয়ার জন্য শালবনে পাঠাতে। বনের ভেতরে নীলকণ্ঠ মুখোমুখি হয় বিদ্রোহী নকশালদের। সশস্ত্র নকশালদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুক যুদ্ধ হয়। গোলাগুলি শেষ হয়। এ সময় নীলকণ্ঠের ছেলে এসে পিতাকে ডাকে। তার ডাক শুনে পুলিশ আবার গুলি করে। নীলকণ্ঠ মারা যায়।

বিশেষত্ব

ঋত্বিক ঘটকের সবচেয়ে আলোচিত ছবি এটি। একই সঙ্গে এটি ভীষণভাবে রাজনৈতিক সচেতন ও আত্মজৈবনিক ছবি। এক জাগ্রত বিপ্লবীর মতোই এই ছবিতে ঋত্বিক নিজেকে এবং নিজের মতবাদ ও আদর্শকে বিশ্লেষণ করেছেন, কোথাও বা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রে এমন সাহসী ছবি খুব কমই আছে। জীবনের এই শেষ ছবিতে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। জ্যাঁ কঁকতোর টেস্টামেন্ট অব অর্ফিয়ুস কিংবা নিকোলাস রে ও উইম ওয়েন্ডারের বিখ্যাত তথ্যচিত্র লাইটিং ওভার ফায়ারের সঙ্গেই এক কাতারে সামিল করা যায় এ ছবিকে। সে সময়ের বিচারে ক্যামেরার কাজ ও কারিগরি দিক থেকেও এ ছবি অনেকটা অগ্রগামী ছিলো।

বিশেষ তথ্য

  • মাত্র দুইদিনে ঋত্বিক ঘটক এ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন।
  • নীলকণ্ঠ সুস্পষ্টভাবেই ঋত্বিকের নিজের চরিত্র। মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবি, মার্কসবাদে বিশ্বাসী, অবিরাম মদ্য পান – নিজের এই জিনিসগুলোকে নিয়েই তিনি নীলকণ্ঠ বাগচী চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন।
  • চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিকই একমাত্র ব্যক্তি যিনি নিজের চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও প্রযোজনায় নির্মিত ছবিতে নিজেরই চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
  • ঋত্বিক ঘটক নিজে বলেছেন, আমি এ ছবিতে ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সালের পশ্চিম বঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছি যেমনটি হতে দেখেছি তেমন ভাবেই। এখানো কোন নির্দিষ্ট মতবাদ নেই। আমি এটিকে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছি। রাজনৈতিক কোন মতাদর্শকে খুশি করার কোন প্রয়োজন আমার নেই।

পাদটীকা

  1. "Reason, Debate and a Story (Jukti Takko Ar Gappo)"। harvard.edu। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১২
  2. Aristides Gazetas (৯ এপ্রিল ২০০৮)। An Introduction to World Cinema। McFarland। পৃষ্ঠা 326–। আইএসবিএন 978-0-7864-3907-2। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১২
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.