যিশুর জন্ম

যিশুখ্রিস্টের জন্ম এবং জন্মস্থানের বর্ননা

যিশুর জন্মতত্ব লূক ও ম্যাথু সুসমাচারে বর্ণিত হয়েছে।

খ্রীষ্টীয় র্ধমমতে ঐশ্বরিক ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্য মূলত অরাজকতা,অন্ধকার,কুসংস্কার থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে যিশুর জন্ম হয়। চতুর্থ শতাব্দী থেকে খ্রীষ্টান চিত্রশিল্পদের কাছে যিশুর জন্মদৃশ্য একটা গুরুত্বর্পূন বিষয়। তের শতকের পর থেকে, যিশুর জন্ম দৃশ্যটি যিশুর নম্রতার ওপর জোর দিয়েছে এবং তার আরও আবেগপ্রবণ চিত্র তুলে ধরেছে, যা ছিল যিশুর প্রথম দিককার ”প্রভূ বা মনিব “ ভাবর্মূতির সর্ম্পূন বিপরীত মূলত এর মধ্যে খ্রিস্টান যাজক মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ ছিল। খ্রিস্টীয় লিটার্জিকাল বছরে যিশুর জন্মতত্ব একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে।

পাশ্চাত্য ঐতিহ্যের খ্রিস্টীয় সম্প্রদয় (ক্যাথলিক চার্চ, ওয়েস্টার্ন চার্চ অর্ধপরিবাহক, অ্যাংলোকনিক কমিউনীয়ন এবং অনেক প্রটেস্ট্যান্ট সহ) ক্রিসমাসের আগে চার রবিবার আগমনের ঋতু উদযাপন শুরু করে। তার জন্মের ঐতিহ্যিক ভোজ-দিন(feast-day) ডিসেম্বর ২5 তারিখে পড়ে। ইস্টার্ন অর্থডক্স চার্চের খ্রিস্টান এবং ওরিয়েন্টাল ওডথক্স চার্চ একই রকমভাবে যিশুর আবির্ভাব অনুষ্ঠান পালন করে থাকে, কখনও কখনও একে খ্রীষ্টের আবির্ভাব বলা হয় কিন্তু মূলত এটা ক্রিসমাসের চল্লিশ দিন আগে শুরু হয় "নেটিভিটি-ফেস্ট" নামে।

ইস্টার্ন অর্থডক্স চার্চের খ্রিস্টান এবং ওরিয়েন্টাল অর্ধপরিষদ চার্চ একই সময়ে যিশুর আবির্ভাব অনুষ্ঠান পালন করে, কখনও কখনও একে আবির্ভাব বলা হয় কিন্তু এটি "জন্মদিনের ফাস্ট" নামেও পরিচিত, যা ক্রিসমাসের ৪০ দিন আগে শুরু হয়। কিছু ইস্টার্ন অর্থডক্স ( খ্রিস্টানরা (উদাঃ গ্রীক এবং সিরিয়ান) ডিসেম্বর ২৫ তারিখে ক্রিসমাস উদযাপন করে,অন্যান্য অর্থডক্স (যেমন, কপ্ট, ইথিওপিয়ান, জর্জিয়ান এবং রাশিয়ানরা) ৭ জানুয়ারী (গ্রেগরিয়ান) (কক্সক ২৯ টা কপটিক ক্যালেন্ডারে) ক্রিসমাস উদযাপন করে কারন তারা গ্রীগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পরিবর্তে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে।

জন্ম তারিখ

নাজরতীয় যীশুর জন্মের তারিখ গসপেল বা কোন ধর্মনিরপেক্ষ পাঠে উল্লেখ করা হয়নি, কিন্তু বেশিরভাগ পন্ডিতই খ্রীষ্টর্পূব ৬ এবং খ্রীষ্টর্পূব ৪ মধ্যে জন্মের একটি তারিখ অনুমান করেন। ঐতিহাসিক প্রমাণসমূহ র্নিদিষ্ট তারিখ র্নিধারনরে ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থক ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে তারিখটি দুটি ভিন্ন পন্থা দ্বারা অনুমান করা হয় - লূক ও মথিের সুসমাচারে খৃষ্টীয় খৃস্টানদের উল্লেখ করা ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির উল্লেখ বিশ্লেষণ করে এবং দ্বিতীয়টি যিশুর মন্ত্রণালয়ের শুরু থেকে প্রাক্কালের ওপর গবেষনা করে।

জন্মস্থান

ম্যাথু এবং লূক উভয়ের সুসমাচারগুলি বেথেলহেমকে যিশুর জন্মস্থান হিসেবে স্বিকৃতি দেয়। যদিও ম্যাথু স্পষ্টভাবে বলেননি জোসেফ এর উত্পত্তি স্থান বা যেখানে তিনি যিশুর জন্ম পূর্বে জন্ম গ্রহণ করেন হিসাবমতে, এটা বলা হয় যিশুর পরিবার বেথলেহেমে বসবাস করেছিল, এবং ব্যাখ্যা করে যে তারা পরবর্তীকালে নাসরথে বসতি স্থাপন করেছিল। অন্যদিকে লূক ১:২.২৬–২৭ স্পষ্টভাবে বলে মেরী গ্যব্রিয়েলের ঘোষণার সময় এবং যিশুর জন্ম র্পূবে নাজরাতে বসবাস করত।

লূক সুসমাচার বর্ননা করে মেরী যিশুখ্রিস্টের জন্ম দেন এবং তাকে একটি গবাদী পশুর পান পাত্রে রাখেন কারন তাদের থাকার কোন জায়গা(কাটালুমা) ছিলো না এবং এখানে যিশুর জন্মস্থান সম্পর্কে কোন নির্দিষ্ট স্থানের কথা উল্ল্যেখ করা হয়নি। গ্রীক শব্দ "কাটালুমা" দুইভাবে অনুবাদ করা যায় সরাইখানা অথবা অতিথিশালা এবং কিছু সংখ্যক পন্ডিত মনে করেন যে মেরী এবং জোসেফ এর সরাইখানার চেয়ে আত্মীয়র অতিথিশালায় থাকার যৌক্তিকতা বেশী। এবং অতিথিশালা কোন কারনে ভর্তি থাকার কারনে তারা আস্তাবলে আশ্রয় নেয়। আস্তাবলটি বেথেলহামের ভেড়ার আস্তাবল হতে পারে যার নাম মিগলেল ইডার(পালকের টাওয়ার)। যা সর্ম্পকে নবি মিখা ভবিষ্যতবানী করেছিলেন । দ্বীতিয় শতাব্দীতে ,জাষ্টিন মার্টা বর্ননা করেন যে যিশুখ্রিস্ট শহরের বাইরে একটি গুহায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অন্যদিকে তার সুসমাচারে বর্ননা করেছেন, কিংবদন্তি গুহাটির অবস্থান শহরের ভিতরে সেন্ট হেলেনা নির্মিতচার্চ অফ ন্যটিভিটির কাছে। সেখানে প্রচলিত বর্ননা অনুসারে গুহা এবং আস্তাবল রয়েছে এবং যিশুর জন্মস্থান হিসেবে সেখানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এছাড়া জায়গাটি প্রাচীন মেসপটেমিয়ান মেষপালক দেবতা তমুজ এর উপসনা স্থান ও হতে পারে। এ কাহিনী গ্রীক দার্শনিক সেলসেস ২১৫ প্যালেষ্টাইন ভ্রমনের ওপর ভিত্তি করে মেন্জার অফ যেশােসে লিখেন।

যিশুখ্রিস্টের জন্ম কোরআনে বর্নিত হয়েছে সুসমাচারের মতই, বেথেলহামকেই যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

নিউ টেষ্টমেন্টের বিবরণ
গসপেল অফ ম্যাথিউ

নিউ টেষ্টসমন্ট অনুসরে, যিশুর মাতা মেরী ছিলেন জোসেফ এর বাগদত্তা , কিন্তু যখন তিনি গর্ভবতী হন এবং জোসেফ একথা জানার পর মেরীকে তালাক দিতে উদ্যত হন এবং তখন তিনি একটি স্বপ্ন দেখেন যেখানে একজন দেবদূত তাকে মেরীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা এবং তার শিশুর নাম যিশু রাখার নির্দেশ দেয়, কারন এই শিশুই মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করবে। যোসেফ জেগে উঠলেন এবং দেবদূতের সব নির্দেশ পালন করলেন। ম্যাথিউ গসপেল চ্যাপটার ১ যিশুর জন্ম এবং নামকরণ সম্পর্কে বর্ননা করে। এবং চ্যাপটার ২ এর শুরুর দিকে প্রকাশ করে যিশু বেথেলহামে হেরড দ্যা গ্রেট এর সময় জন্ম গ্রহণ করেন। তখন পূর্ব দিক থেকে ম্যাগীরা (বিশিষ্ট বিদেশীদের একটি গ্রুপ যারা তাঁর জন্মের পরে যিশুর পরিদর্শন করেন) হেরডে এসেছিলো এবং জানতে চায় তারা ইহুদীদের রাজাকে কােথায় খুজে পাবে , কারন তারা তাঁর নির্দেশক “তারা” দেখতে পেয়েছে। প্রধান যাজক এবং জ্ঞানীদের থেকে উপদেশ নিয়ে হেরড ম্যাগীদেরকে বেথলহামে পাঠান এবং সেখানে গিয়ে তারা শিশুটিকে পুজা করে ও উপহার দেয়। যখন তারা চলে যাচ্ছিলো একজন দেদূত আবার জোসেফ এর স্বপ্নে আসলো ও তাকে সর্তক করে নির্দেশ করল শিশু এবং মাকে নিয়ে মিশরে পালিয়ে যেতে করন হেরড শিশুিটিকে হত্যার চেষ্টা করবে। পবিত্র পরিবারটি হেরেডের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মিশরে বসবাস করতে লাগলো। হেরডের মৃত্যুর পরে তার পুত্র যখন জেরুজালেম শাসন করছিলো জোসেফ তাদেরকে নিয়ে নাজারাতের গ্যালিলিতে ফিরে আসে।

গসপেল অফ লূক

ওই সময় যখন হেরড যিহুদিয়ার রাজা ছিলেন ইশ্বর দেবদূত গ্যাব্রিয়েলকে নাজারাতের গ্যালিলিতে কুমারী মেরীর কাছে একটি বিশেষ ঘোষণা দিয়ে পাঠালেন, মেরী ছিলেন জোসেফের বাগদত্তা এবং বিশেষ ঘোষণাটি ছিল তাঁর গর্ভে যিশু নামে এক নবজাতকের জন্ম হবে, যে ইসরাঈলের শাসনকর্তা হবে। যখন প্রসবের সময় নিকট হলো রোমান সম্রাট বিশ্বব্যাপী একটি আদমশুমারীর ঘোষণা দেন এবং জোসেফ মেরীকে বেথেলহাম বা ডেভিডের শহর বা বড়িতে নিয়ে আসে। তাই এটা স্বিকৃত যে যিশুর জন্ম বেথেলহামে, সেখানে কোন কামরা অবশিষ্ট ছিল না নবজাতক যিশুকে গবাদী পশুর পানপাত্রে শুয়িয়ে রাখা হয়েছিলো। যখন দেবদূতরা তাঁর জন্ম ঘোষণা করল এবং মেষপালকরা তাকে প্রভূ ও মশীহ্ হিসেবে পুজা করেছিলো।

ইহুদী আঈনানুসরে জন্মের পর মেরী এবং জোসেফ নবজাতককে জেরুজালেমের মন্দিরে উপস্থাপন করে, সিমন ও এ্যনা দ্যা প্রোফেটেস ইশ্বরের কাছে এই পরিত্রানকর্তার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে। তারপর জোসেফ এবং মেরী নাজারাতে ফিরে আসে। সেখানে “শিশুটি বেড়ে ওঠে শক্তিশালী ও জ্ঞান দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তাঁর ওপর সবসময়ই ইশ্বরের অনুগ্রহ ছিলো।” প্রতিবছর তাঁর মতাপিতা জেরুজালেম পেসাক উদযাপন করতে যেত এবং যিশুর বয়স যখন বরো বৎসর তাঁকে দেখা গেল মন্দিরে দিক্ষাগুরু সামনে বসে তার কথা শুনছে ও প্রশ্ন করছে আর উপস্থিত জনতা তাঁর প্রশ্ন শুনে অভিভূত হচ্ছে। মাতা মেরী তাঁকে তিরস্কার করল কারন তাঁকে খুজে না পেয়ে তারা দুজনে উদ্বিগ্ন ছিল তখন যিশু বললো সে তার পিতার গৃহে অবস্থান করছে। ”তারপর তিনি মাতাপিতার সাথে নাজারাতে ফিরে গিয়েছিলেন আর তিঁনি তাদের বাধ্য হয়ে থাকতেন, কিন্তু তাঁর মায়ের মনে এইসব কিছুই জমা ছিল এবং যিশু দৈহিক ও জ্ঞানের দিক দিয়ে ইশ্বর ও মানুষের ভালোবাসায় বেড়ে উঠতে লাগলেন।”

বিষয়বস্তু ও সাদৃশ্য
বিষয়বস্তু বিশ্লেষন

হেলমুট কোয়েষ্টার লিখেছেন যে, যখন ম্যাথিউ’র সুসমাচার গৃহীত হচ্ছিল

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.