মেছেনি খেল

মেছেনি খেল বা মেছেনি নাচ হল উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়ের মহিলাদের গ্রামীণ লোকাচারকেন্দ্রিক নৃত্যগীত। মূলত পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহারআলিপুরদুয়ার জেলায় তিস্তাবুড়ির ব্রতপূজা উপলক্ষে এই নাচগান অনুষ্ঠিত হয়।[1]

বৈশিষ্ট্য

উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী তিস্তা স্থানীয় কৃষিজীবী মানুষের কাছে জাগ্রত দেবতা। তাই বাংলা বছরের শুরুতে সারা বছরের শুভকামনায়, খরা-বন্যার হাত থেকে পরিত্রাণলাভের জন্য, নিয়মিত বৃষ্টি ও অনুকূল আবহাওয়া পাওয়ার জন্য গ্রামীণ মানুষেরা তিস্তাবুড়ির পূজা করেন; পূজার আঙ্গিকগত নৃত্যগীতই মেছেনী খেল বা মেছেনী নাচ নামে পরিচিত।

রাজবংশী কৃষক মেয়েরা সজ্জিত হয়ে দলবদ্ধভাবে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাংলা বছরের প্রথম দিন থেকে তিস্তাবুড়ির পূজা দেওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানায়। শোলার অলঙ্কারে সজ্জিত একটি ছাতা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গান ও নাচ করে। একমাস ধরে এই অনুষ্ঠান চলে।

একমাস পর মূল পূজার দিনে মেয়েরা কলার খোলা দিয়ে ভেলা তৈরি করে নানা ফুল দিয়ে নানা আকারে ও রূপে তা সাজিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে জলে ভাসিয়ে দেয়। পূজার উপকরণ হিসেবে থাকে ধূপ, দীপ, কলা, ভোগা (ঘি বা তেলে ভেজানো তুলো বা কাপড়ের সলতে), আতপ চাল ইত্যাদি। এরপর মেয়েরা তিস্তাবুড়ির উদ্দেশ্যে সমবেত কণ্ঠে গান করেন —

"আজি কেনে ভূরার বাইজ মোর উঠেরে।
না জানি তিস্তা বুড়ি কোন্ ঘাটে সাজেরে।"

এই পূজা মূলত মেয়েদের অনুষ্ঠান হলেও রাজবংশী পুরুষেরা সার্বজনীন ভাবে এতে অংশগ্রহণ করে থাকে।[1]

তথ্যসূত্র

  1. বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, দুলাল চৌধুরী, আকাদেমি অব ফোকলোর, কলকাতা: ৭০০০৯৪, প্রথম প্রকাশ:২০০৪, পৃষ্ঠা: ২০৫

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.