মেগালি ধারণা

মেগালি ধারণা (গ্রীকঃ Μεγάλη Ιδέα, Megáli Idéa) ছিল গ্রীক জাতীয়তাবাদের একটি ইররেডেনটিস্ট ধারণা যা সকল জাতিগতভাবে গ্রীক অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে একটি গ্রীক রাষ্ট্র গঠনের ধারণা প্রকাশ করে, যার মধ্যে বৃহত্তর গ্রীক জনগোষ্ঠী রয়েছে, যা গ্রীক ওয়ার অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স (১৮২১-১৮২৮) এর পরে বর্তমানে অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে রয়েছে এবং প্রাচীনকালীন সময়ে গ্রীকদের দখলে থাকা (দক্ষিণ বালকান, আনাটোলিয়া এবং সাইপ্রাস) সবগুলা অঞ্চল ও এর অ্ন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী লোয়াননিস কোলাটটিস এবং কিং অট্টো এর মধ্যেকার বিতর্কের সময় সর্বপ্রথম এই ধারণার সর্বপ্র্থম আবির্ভাব ঘটে যার ফলাফল হিসেবে ১৮৪৪ সালে সংবিধানের ঘোষণা আসে। এটি একটি অবাস্তব পরিকল্পনা যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কূটনৈতিক সম্পর্কে আধিপত্য বিস্তার এবং বৃহত্তর পরিসরের কথা অন্তর্ভুক্ত করলে স্বাধীনতার প্রথম শতাব্দী দেশীয় রাজনীতির ভিত্তি ঠিক করা। ১৮৪৪ সালে এই ধারণাকে নতুন বলে অভিহিত করা হলেও সাধারণ গ্রীকদের মনে এই ধারণার মূলভিত্তি অনেক আগে থেকেই ছিল। তুর্কিদের শাসন থেকে মুক্তি লাভ ক রে বায়জেন্টাইন সাম্রাজ্য প্রতিষ্টার স্বপ্ন অনেক আগে থেকেই ছিল।

গ্রীক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মেগালি ধারণা  পূর্ব রোমান(বাইজেন্টাইন) সাম্রাজ্যকে পুনরজ্জীবিত করার দিকেই ইঙ্গিত দেয়। ঠিক যেমনটি  প্রাচীন ভূগোলবিদ স্ট্রোব লিখছিলেন,গ্রীক রাজ্য যা সম্পূর্ন ঘেরাও থাকবে পূর্বে দখলকৃত সব বায়জেন্টাইন ভূমি নিয়ে, আয়োনিয়া সমুদ্রে থেকে শুরু করে পশ্চিম পর্যন্ত, এশিয়া মাইনর এবং ব্ল্যাক সী  থেকে শুরু করে পূর্ব পর্যন্ত থ্রেস, মিসডোনিয়া এবং এপিরাস থেকে শুরু করে উত্তর পর্যন্ত,ক্রীট এবং সাইপ্রাস থেকে শুরু করে দক্ষিণ পর্যন্ত, কন্সটান্টিপোল হবে এই রাজ্যের রাজধানী। দুই মহাদেশ এবং পাচ সাগর" নিয়ে গঠিত হবে এই গ্রীস (ইউরোপ, এশিয়া, আইওনিয়ান, এজিয়ান, মারমারা, ব্ল্যাক এবং লিবিয়ান সাগর)। ১৮২০ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর বালকান যুদ্ধ পর্যন্ত মেগালি ধারণা গ্রীসের  বৈদেশিক নীতি থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সবকিছুই আধিপত্য করতো।গ্রেকো-তুর্কিশ যুদ্ধ(১৯১৯-১৯২২) এবং সমাইরনের বিশাল আগুনের যুদ্ধে(১৯২২) গ্রীসের হারের পর এই ধারণা মলিন হতে শুরু করে এবং এর পরেই ১৯২৩ সালে গ্রীস এবং তুর্কির মধ্যে জনসংখ্যা আদান প্রদান হয়।যদিও মেগালি ধারণা ১৯২২ সালে বিলীন হয়ে যায় তারপরেও সামরিক দখল হোক আর কূটনীতির মাধ্যমে (বেশির ভাগ সময়েই ব্রিটিশদের সাহায্যে) হোক গ্রীস তার আয়তন প্রায় পাচ গুণ বৃদ্ধি করে। ১৯৩০ সালে গ্রীস গঠিত হওয়ার পর,আইওনিয়ান দ্বীপ(লন্ডনের চুক্তি,১৮৬৪),থেসসালি(কনস্টানিপোলের সম্মেলন ১৮৮১),ক্রীট,মেসিডনিয়া,দক্ষিণ এপিরাস,পূর্ব এজিয়ান দ্বীপ(বুকারেস্ট চুক্তি ১৯১৩),পশ্চিম থ্রেস(নিউয়িলি চুক্তি ১৯২০) এবং ডোডিকানিসকে (ইতালির সাথে ১৯৪৭ সালে শান্তি চুক্তি) সংযুক্ত করে যা গ্রীসকে  বিশাল রাজ্যে পরিণত করে।

কনস্টানটিপোলের পতন

রোমানদেরকে বায়জেন্টাইন সাম্রাজ্যের আদি উৎস হিসেবে  ধরা হয় এবং এর বাসিন্দারা এবং পুরো দুনিয়া একে এর পতনের ১২০ বছর পর পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্য বলে থাকত, কিন্তু এর পরে হিরোনাইমাস ওলফ 'বায়জেন্টিয়াম' শব্দের উদ্ভাবন করেন।এটি পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে গ্রীকে পরিণত হয় যখন গ্রীক ল্যাটিনকে ৬১০ খিষ্টাব্দে আন্তর্জাতিক ভাষার জায়গা থেকে প্রতিস্থাপন করে। এর ধর্ম খ্রিস্টান হওয়ার কারণে নতুন টেস্টামেন্ট গ্রীক ভাষায় লেখা হয়,এছাড়াও আরো একটি কারণ হচ্ছে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।বায়জেন্টিয়াম তেজস্বিতার সাথে সব ধরনের বহিরাক্রমণের প্রতিরোধ করে যেখানে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য  ভিসিগোথ,হান্স,সারসেন্স,মঙ্গোলস এবং তুর্কিশদের (১ম দফায়) সাথে পরাজয় বরণ করে।কনস্টান্টিপোল,বায়জেন্টিয়ামের রাজধানী ১৩ শতাব্দীর শুরুর দিকে চতুর্থ ধর্মযোদ্ধাদের হাতে পরাজয় বহন করে।এই শহরটি নিসায়ে সাম্রাজ্য মুক্ত করে,একজন বায়জেন্টাইন উত্তরাধিকারী,আবার সাম্রাজ্যটিকে পুনর্গঠন করে। ১৪৫৩ সালে এই শহরটি এক নতুন ধরনের শত্রুর সম্মুখীন হয়,অটোমান তুর্ক, কন্সটান্টিপোলের এই হার বায়জেন্টাইন সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ কুবিন্দুতে পৌছায়।শহরটিকে পদচ্যুত এবং লুট করা হয়,হাগিয়া সোফিয়াকে মসজিদে রুপান্তরিত করা হয়।কন্সটান্টিপোলের এই বিজয় অটোমানদের জন্য বায়জেন্টাইন সাম্রাজ্যের বাকি অঞ্চল দখল করা তুলনামুলকভাবে সহজ হয়ে যায়।

অটোমান শাসনের অধীনে গ্রীক

অটোমানদের শাসনের সময় বাজরা পদ্ধতি কার্যকর ছিল, পুরো অঞ্চল ধর্মের ভিত্তিতে  ভাগ করা ছিল ভাষা কিংবা উৎপত্তির পরিবর্তে। সনাতন গ্রীকদের দেখা হতো বাজরা-ই-সৃষ্টিছাড়া(সোজাসুজিভাবে "রোমান গোষ্ঠী") যা গ্রীক ছাড়াও বুলগেরিয়া,সার্বস,ভ্লাকস,স্লাভস,জর্জিয়ান,আরব,রোমান এবং আলভেনিয়ান সহ সকল সনাতন খ্রিষ্টানদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের জাতিগত এবং ভাষাগত পার্থক্যকে উপেক্ষা করে যদিও ধর্মীয় যাজকতন্ত্রের ক্ষেত্রে গ্রীকরাই কর্তৃত্ব করছিল।যদিও এই বিষয়টি পরিষ্কার নয় যে কিভাবে একজন ব্যাক্তি ওই সময়ে নিজেকে গ্রীক হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন, একজন খ্রিষ্টান বা একজন সনাতন হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পরিবর্তে। ১৭৮০ সালের শেষের দিকে রাশিয়ার ক্যাথরিন ২ এবং অস্ট্রিয়ার জোসেফ  ২ মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা বায়জেন্টাইন সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করবে এবং তাদের সম্মিলিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুনরায় গ্রীক সাম্রাজ্য স্থাপন করবে।

এটি উল্লেখযোগ্য যে মধ্যযুগে এবং অটোমান শাসনাকালীন সময়ে,গ্রীকভাষী খ্রিষ্টানদেরকে রোমান হিসেবে চিহ্নিত করা হতো এবং তাদেরকে রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হতো(এদের মধ্যে মধ্যযুগীয় পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য ও রয়েছে). প্রকৃতপক্ষে  সম্পূর্ন ইউরোপ এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে রোমান শব্দটিকে খ্রিষ্টান শব্দের সমতুল্য মনে করা হতো। গ্রীক অথবা হেলেন শব্দটি অটোমান খ্রিষ্টানদের দ্বারা ব্যবহার করা হতো যা ওই অঞ্চলের  প্রাচীন পৌত্তলিকদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়া আরোপ করে। অটোমান শাসনের শেষের দিকে এবং গ্রীকদের স্বাধীনতার আন্দোলনের সময় এই ধারণার পরিবর্তন ঘটে।

গ্রীকদের স্বাধীনতা যুদ্ধ

গ্রীস শুধুমাত্র গ্রীক রাজ্যেকে নির্দেশ করে না,এটি গ্রীসের একটি অংশ,খুব ক্ষুদ্র এবং সামান্য একটি অংশ।গ্রীসে বসবাসকারীরাই যে শুধু গ্রীক  তা নয় যারা আইওন্নিয়া,সালোনিকা অথবা সেরেস অথবা আড্রিয়ানপোল অথবা কন্সটান্টিপোল অথবা ট্রেবাইজোন্ড অথবা ক্রীট অথবা স্যামোস অথবা যে কোন অঞ্চল যা গ্রীক ইতিহাস কিংবা গ্রীক রাজ্যের অংশ ছিল। গ্রীক সংস্কৃতির দুটি রাজধানী রয়েছে, এথেন্স যা গ্রীক রাজ্যের রাজধানী।কন্সটান্টিপোল যা সর্ববৃহৎ রাজধানী,সকল গ্রীকের আশা এবং ভরসার নাম।

কলেট্টিস ১৮৪৪ সালের সম্মেলনের সময় এই দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করে।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.