মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার
মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার সংস্কৃত পন্ডিত, ভাষাবিদ, লেখক। তৎকালীন ওড়িষা প্রদেশের মেদিনীপুর জেলায় বৈতিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নাটোর-রাজের দরবারে লেখাপড়া শিখে তিনি সংস্কৃত পন্ডিতে পরিণত হন। তিনি উনিশ শতকের প্রথম ভাগে বাংলা গদ্য লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। শিক্ষা শেষ করে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার কলকাতার বাগবাজারে একটি চতুষ্পাঠী প্রতিষ্ঠা করেন।
১৮১৭ সালে স্থাপিত হিন্দু কলেজের (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮১৬ সালে গঠিত সমিতির তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন। বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে উইলিয়াম কেরির তত্ত্বাবধানে প্রধান পণ্ডিত থাকাকালীন ১৮০২ সালে মৃত্যুঞ্জয়ের ‘বত্রিশ সিংহাসন’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ১৮০৮ সালে ‘হিতোপদেশ’ ও ‘রাজাবলি’, ১৮১৭ সালে ‘বেদান্তচন্দ্রিকা’, ১৮৩৩ সালে তার মৃত্যুর পর ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। শেষোক্ত গ্রন্থে জন ক্লার্ক মার্শম্যানের প্রশংসাসূচক ভূমিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৮১৭ সালে গঠিত স্কুল বুক সোসাইটির পরিচালন সমিতির সভ্যও ছিলেন তিনি। ১৮১৬ সালে তিনি শিক্ষকতা ত্যাগ করে সুপ্রিমকোর্টে (বর্তমানে হাইকোর্ট) যোগদান করেন। সমাজ সংস্কারের দিক থেকেও তার অবদান চিরস্মরণীয়।
১৮১৯ সালে তীর্থভ্রমণ থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে এই জেলায় ভাগীরথীর তীরে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার প্রয়াত হন। বাংলা গদ্য সাহিত্যের এই অনন্য গদ্যশিল্পী সম্পর্কে প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, “প্রবোধচন্দ্রিকার রচয়িতা স্বর্গীয় মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের আমি বিশেষ পক্ষপাতী কেন না তিনি সুপণ্ডিত এবং সুরসিক, একাধারে এই উভয় গুণ আজকালকার লেখকদের মধ্যে নিতান্ত দুর্লভ হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের গল্প বলার ক্ষমতা অসাধারণ, অল্প কথায় একটি গল্প কি করে সর্বাঙ্গসুন্দর করে বলতে হয় তার সন্ধান তিনি জানতেন। প্রবোধচন্দ্রিকার ভাষা কঠিন হলেও শুষ্ক নয় যিনি তাতে দাঁত বসাতে পারেন তিনিই তার রসাস্বাদ করতে পারবেন।”
সাহিত্যকর্ম
- ‘বত্রিশ সিংহাসন’ ( ১৮০২)
- মিত্রলাভ সুহৃদ্ভেদ বিগ্রহ সন্ধি এতচ্চতষ্টয়াবয়ব বিশিষ্ট হিতোপদেশ (পরিলেখন প্রকল্প) (১৮২১)
- ‘রাজাবলি’ ( ১৮০৮)
- ‘বেদান্তচন্দ্রিকা’, ( ১৮১৭)
- ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’ ( ১৮৩৩)