মূকাভিনয়

মূকাভিনয় একটি স্বতন্ত্র শিল্প মাধ্যম। মূকাভিনয় অর্থ হচ্ছে মুখে শব্দ না করে বা সংলাপ ব্যবহার না করে শারীরিক বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করা । নাট্যশিল্পের এক বিশেষ দিক হচ্ছে এই মূকাভিনয় । বস্তুর অস্তিত্ব না থাকা সত্বেও বিভ্রমের মাধ্যমে অর্থাৎ দর্শকের চোখে বিভ্রম ঘটিয়ে সেই বস্তুকে অস্তিত্বে নিয়ে আসার এক আকর্ষণীয় কৌশল হচ্ছে মূকাভিনয়। প্রাচীন রোমান যুগে এই শিল্পের প্রথম চর্চার ইতিহাস পাওয়া যায়। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের অনেক জায়গায় এর চর্চা হয়েছে। গ্রিসে সম্ভবত প্রথম "Pantomime" নামের একজন মুখোশ পরিহিত অভিনেতা মূকাভিনয় প্রদর্শন করেছিলেন। Pantomime একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ বিশুদ্ধ অনুকৃতি।

মূকাভিনয়ের মেকাপে মাইম আর্ট

মূকাভিনয়ের জনক বলা হয় ফ্রান্সের মার্সেল মার্সো কে। বর্তমানে প্রায় তিন ধরনের মূকাভিনয়ের চর্চা হয় সারাবিশ্বে। মূকাভিনয়, আধুনিক মূকাভিনয়, বর্তমান মূকাভিনয়।

ঐতিহ্যগত মূকাভিনয় : যা সাদা মুখে গল্প বা নাটকীয়তার মাধ্যমে অভিনীত হয়। ঐতিহ্যগত মূকাভিনয়ের জনক মার্সেল মার্সো। অনেকে আজকাল সাদা মুখে বা রঙ চঙ না মেখেই থিয়েটারের পরিচ্ছদে মূকাভিনয় করেন।

আধুনিক মূকাভিনয় : এর জনক বলা হয় এতিয়েন দেক্রু কে। তিনি ঐতিহ্যগত মূকাভিনয় থেকে মূকাভিনয়কে নতুন দিকের প্রবর্তন করেন। মূকাভিনয়ের গ্রামাটিক মুভমেন্ট নির্মাণ করেন তিনি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ন্যাচারাল পেইন্টিংস এবং অ্যাবস্ট্রাক্ট পেইন্টিংস। এতিয়েন দেক্রু ছিলেন মার্সেল মার্সোর মূকাভিনয় গুরু।

তৃতীয় স্কুলটির প্রবর্তক জাকুলিন লিকক। তিনি থিয়েটারের শিক্ষক। মুখোশ ও দেহের সমগ্র অবয়বকে মুখোশের আবরণে মুভমেন্ট নির্মাণ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশে মূকাভিনয়

বাংলাদেশে আধুনিক মূকাভিনয়ের চর্চা ঘটা করে শুরু হয় ১৯৭৫ সাল থেকে। বিটিভির "যদি কিছু মনে না করেন' ও 'বলাবাহূল্য' অনুষ্ঠানে প্রায়ই মূকাভিনয় দেখাতেন পার্থ প্রতিম মজুমদার। তখন থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মঞ্চে একক মূকাভিনয় প্রদর্শিত হয়েছে। সেগুলি ছিল স্বল্প সময়ব্যাপী এবং সংখ্যায়ও কম। শিল্পীর পোশাকের ধরন প্রায় একই রকম হতো কালো রঙের অাঁটসাট আচ্ছাদন এবং মুখে সাদা রংয়ের প্রলেপ। বিষয়বস্ত্ত ছিল অত্যন্ত হালকা ও বিনোদনধর্মী। এ পর্বে সৃজনশীল ধ্যান-ধারণা বিশেষ একটা ছিল না। তবে নানা রকম সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তখন যে কয়েকটি ভাল প্রদর্শনী হয়েছে সেগুলির মধ্যে রয়েছে জন্ম থেকে মৃত্যু, বালক ও পাখি, প্রজাপতি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ফটোগ্রাফার, ঔষধ বিক্রেতা, বখাটে ছেলের পরিণতি, রিকশাওয়ালা, মাছ ধরা ইতাদি। এগুলিতে ক্যারিকেচার এবং অহেতুক হাস্যকৌতুকের স্থলে ক্ষেত্রবিশেষে বিষয়ের গভীরতা প্রকাশ পেয়েছে।

১৯৮৯ সাল থেকে একক অভিনয়ের পাশাপাশি দলগত অভিনয়ের ধারাও প্রচলিত হয়। এ ক্ষেত্রে ‘ঢাকা প্যান্টোমাইম’ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ১৯৮৯ সালের ২৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একক ও দলগত মূকাভিনয় পরিবেশন করে এ শিল্পকে জনপ্রিয় করে তুলতে চেষ্টা করে।

তথ্যসূত্র

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.