মিউনিখ
মিউনিখ বা ম্যুনশেন (
মিউনিখ München | ||
---|---|---|
![]() মিউনিখ শহরের ফ্রাউয়েঙ্কির্শে (কুমারী মেরির গির্জা) ও নগরভবন | ||
| ||
![]() মিউনিখের মানচিত্র | ||
স্থানাঙ্ক: ৪৮°৮′০″ উত্তর ১১°৩৪′০″ পূর্ব | ||
সরকার | ||
• লর্ড মেয়র | ক্রিস্টিয়ান উডে | |
জনসংখ্যা (২০০৬) | ||
• শহর | ১৩,৩২,৬৫০[1] | |
• পৌর এলাকা | ১৬,৫৬,০০০ | |
• মহানগর | ২৬,১০,০০০ | |
সময় অঞ্চল | পূইস (EET) (ইউটিসি+১) | |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | পূইগ্রীস (EEST) (ইউটিসি+২) | |
ওয়েবসাইট | www.muenchen.de |
মিউনিখ রেলপথ ও মহাসড়কপথব্যবস্থার মাধ্যমে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার সমস্ত বড় শহরের সাথে সংযুক্ত। মিউনিখ রেলস্টেশনটি জার্মানির ও ইউরোপের যাত্রীবাহী দ্রুতগামী রেল-পরিবহন ব্যবস্থার একটি প্রধান কেন্দ্র। ষ্টুটগার্ট, ন্যুর্নবের্গ ও জালৎসবুর্গ থেকে আগত মহাসড়কগুলি মিউনিখে এসে মিলিত হয়েছে। শহরের উত্তর-পূর্বদিকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরত্বে ১৯৯২ সালে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উদ্বোধন করা হয়, যার নামে ফ্রানৎস ইয়োজেফ ষ্ট্রাউস বিমানবন্দর। মিউনিখ শহরকেন্দ্রের অধিকাংশেই মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শহরে একটি আধুনিক পাতালরেল (দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা) নির্মাণ করা হয়েছে।
মিউনিখের পুরাতন অংশটি ইজার নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এখানে বেশ কিছু বারোক ও রোকোকো স্থাপত্য ঘরানার ভবন ও স্থাপনা আছে, যেগুলির বেশিরভাগই ১৮শ শতকের প্রথমার্ধে বায়ার্নের শাসকেরা ইতালীয় স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনে উদ্বুদ্ধ হয়ে নির্মাণ করান। পুরাতন মিউনিখ শহরের কেন্দ্রস্থলে যে সুপরিচিত উন্মুক্ত চত্বরটি অবস্থিত, তার নাম মারিয়েনপ্লাৎস। মারিয়ানপ্লাৎস চত্বরের উপরেই আধিপত্য বিস্তার করে দাঁড়িয়ে আছে মিউনিখের নব্য-গোথিক শৈলীর কারুকার্যখচিত নতুন নগরভবন,যার স্থানীয় জার্মান নাম নয়েস রাটহাউস। ভবনটিকে ১৮৬৭ থেকে ১৯০৯ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়। ভবনের বুরূজটির ঘন্টাঘরে প্রতিদিন একগুচ্ছ ঘন্টা ধ্বনিত করা হয়। একই চত্বরেই মিউনিখের পুরাতন নগরভবনটিও অবস্থিত, যার নাম আল্টেস রাটহাউস (১৫শ শতকের শেষভাগে নির্মিত)। চত্বর থেকে কাছেই আছে ১৫শ শতকে (১৪৮৮) নির্মিত ফ্রাউয়েনকির্শে ("কুমারী মেরির গির্জা") নামের বিলম্বিত-গোথিক স্থাপত্যশৈলীর সুবিশাল একটি ইষ্টকনির্মিত ক্যাথেড্রাল (ধর্মপালের আসনবিশিষ্ট গির্জা), যার দুইটি পেঁয়াজাকৃতির গম্বুজবিশিষ্ট বুরূজের প্রতিটির উচ্চতা ৯৯ মিটার (৩২৫ ফুট)। এই গির্জাটি মিউনিখ নগরীর প্রধানতম প্রতীক। পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট বায়ার্নের ৪র্থ লুডভিগের (আনু. ১২৮৩ - ১৩৪৭) সমাধি এই গির্জার অভ্যন্তরভাগে সংরক্ষিত আছে। মিউনিখের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গির্জার মধ্যে আছে শহরের প্রাচীনতম গির্জা পেটার্সকির্শে, যা ১১শ শতকে নির্মিত হয়; এবং মিখায়েলসকির্শে, যা হল ১৬শ শতকে রনেসঁস (রেনেসাঁ) ঘরানার স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত একটি গির্জা যেখানে মিউনিখের তথা বায়ার্ন (বাভারিয়া) রাজ্যের প্রাক্তন শাসকবংশ ভিটেল্সবাখ পরিবারের পারিবারিক সমাধি-প্রকোষ্ঠটি অবস্থিত।
মিউনিখ শহরের আদি নগরপ্রবেশদ্বারগুলির অনেকগুলিই এখনও দণ্ডায়মান, যাদের মধ্যে ১৩১০ সালে নির্মিত জেন্ডলিঙার টোর (জেন্ডলিঙার প্রবেশদ্বার) এবং ১৩৩৭ সালে নির্মিত ইজার টোর (ইজার প্রবেশদ্বার) উল্লেখযোগ্য। শহরের হেলাব্রুন চিড়িয়াখানাটি জার্মানির বৃহত্তম চিড়িয়াখানাগুলির একটি। শহরের পরিসীমার মধ্যে আরও আছে হ্রদসহ একটি ইংরেজ উদ্যান (ইংলিশার গার্টেন), চীনা বৌদ্ধ প্যাগোডা এবং হাউস ডের কুন্স্ট নামের একটি শিল্পকলা প্রদর্শনীকেন্দ্র। ।
১৯৭২ সালে মিউনিখ শহরে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই উপলক্ষে শহরের উত্তরভাগে একটি বৃহৎ ক্রীড়াক্ষেত্র বা স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়, যার নাম ওল্যুমপিয়াপার্ক।
মারিয়েনপ্লাৎসের উত্তর-পূর্ব দিকে ভিটেলস্বাখ পরিবারের একাধিক ভবনবিশিষ্ট রাজকীয় প্রাসাদ এলাকাটিকে সহজভাবে "রেজিডেনৎস" নামে ডাকা হয়। এটিকে বহু শতাব্দী ধরে নির্মাণ করা হয় এবং বর্তমানে এটিকে একটি জাদুঘরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। রেজিডেনৎস এলাকার রোকোকো স্থাপত্যঘরানায় নির্মিত কুভিলিয়েস নাট্যশালাটি (১৭৫১-১৭৫৩ সালে ফ্রঁসোয়া দ্য ক্যুভিলিয়ে-র নকশা করা) বর্তমানে বায়ার্ন রাজ্যের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে। এর ঠিক দক্ষিণেই আছে জার্মানির জাতীয় নাট্যশালা, যেটি বায়ার্ন রাজ্য গীতিনাট্যদলের আলয়। রেজিডেনৎসের রাজকীয় প্রাসাদের পার্শ্বদেশগুলি, এর অভ্যন্তরে অবস্থিত বিভিন্ন সৌকর্যমণ্ডিত সুদৃশ্য কক্ষ (যেমন রাইশেস সিমার), কোষাগারকক্ষ ও ভেতরের আঙিনাগুলি পর্যটকদের জন্য দর্শনীয়।
ইজার নদীর পূর্ব তীরে বায়ার্ন (বাভারিয়া) রাজ্যের রাজ্য সংসদভবন মাক্সিমিলিয়ানেউম অবস্থিত, যেটি ১৮৭৪ থেকে ১৮৭৭ সালের মধ্যে নির্মিত হয়। মাক্সিমিলিয়ানষ্ট্রাসে নামের একটি প্রশস্ত রাজপথের দুই পাশে বহু অভিজাত বিপণী ও চিত্রশালা আছে; এই পথ ধরে এগিয়েই মাক্সিমিলিয়ানেউম ভবনে পৌঁছানো যায়; আদিতে ভবনটি একটি রাজকীয় বিদ্যালয় ছিল।
শহরকেন্দ্র থেকে উত্তর-পশ্চিমে দৃষ্টিনন্দল ভূদৃশ্যবহুল মিউনিখ উদ্ভিদ উদ্যানের ভেতরে বারোক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত শ্লস ন্যুমফেনবুর্গ (ন্যুমফেনবুর্গ দুর্গ) অবস্থিত। ১৭শ শতকের শেষভাগে (১৬৬৪ সালে) দুর্গটির নির্মাণকাজ শুরু হয় । বর্তমানে এটি একটি জাদুঘর।
মিউনিখ শহরে বহুসংখ্যক মনে দাগ কাটার মত জাদুঘর ও শিল্পকলা প্রদর্শনীকেন্দ্র অবস্থিত। ডয়চেস মুজেউম ("জার্মান জাদুঘর") একটি সমৃদ্ধ বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি জাদুঘর যেটি ইজার নদীতে একটি দ্বীপের উপরে অবস্থিত। অন্যদিকে বায়ার্ন জাতীয় জাদুঘরে মধ্যযুগ থেকে শুরু করে ১৯শ শতক পর্যন্ত সৃষ্ট চারু ও দারুকলার সংগ্রহ আছে। ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আল্টে পিনাকোটেক ("পুরাতন চিত্রকলা প্রদর্শনকেন্দ্র") নামের শিল্পকলা প্রদর্শনীকেন্দ্রটি শুধু জার্মানি নয়, সমগ্র ইউরোপের একটি অগ্রগণ্য শিল্পকেন্দ্র, যেখানে মধ্যযুগ থেকে ১৮শ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত আঁকা অনেক খ্যাতনামা শিল্পীর বহু চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে; এসব শিল্পীর মধ্যে আলব্রেখট ড্যুরার, রাফায়েল, এল গ্রেকো, পিটার পল রুবেনস ও রেমব্রান্টের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত একটি জাদুঘরকে প্রতিস্থাপন করতে ১৯৮১ সালে নয়ে পিনাকোটেক ("নতুন চিত্রকলা প্রদর্শনকেন্দ্র") নামের একটি চিত্রশালা উদ্বোধন করা হয়, যাতে ১৮শ শতক ও ১৯শ শতকের ইউরোপীয় শিল্পকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ বিদ্যমান। এছাড়াও বিশাল আয়তনের পিনাকোটেক ডের মোডের্নে নামের চিত্রশালাতে ২০শ শতক ও ২১শ শতকের চিত্রকলা, নকশা ও স্থাপত্যের নিদর্শন প্রদর্শিত হয়। মোটরযান নির্মাতা বে এম ভে বা বি এম ডব্লিউয়ের প্রধান কার্যালয়ের ঠিক পাশেই একটি মোটরযান জাদুঘর আছে। শহরকেন্দ্র থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ক্যোনিগসপ্লাৎস নামের চত্বরে গ্ল্যুপটোটেক ও আন্টিকেন-জামলুঙেন নামের দুইটি প্রাচীন যুগের দ্রব্য ও নিদর্শনাদির সংগ্রহশালা আছে।
১ম বিশ্বযুদ্ধের পরে মিউনিখ উগ্র ডানপন্থী রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এখান থেকেই আডলফ হিটলার ও নাৎসিবাদের উত্থান ঘটে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিউনিখ শহর থেকে মাত্র ১০ মাইল দূরত্বে কুখ্যাত ডাখাউ ইহুদী বন্দীশিবিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালের অলিম্পিক প্রতিযোগিতা চলার সময় ফিলিস্তিনি জঙ্গী দল "কালো সেপ্টেম্বর" মিউনিখ থেকে ১১ জন ইসরায়েলি ক্রীড়াবিদকে অপহরণ করলে শহরটি আন্তর্জাতিক সুনাম ক্ষুন্ন হয়। বর্তমানে এখানে অপরাধের হার খুবই কম। ব্রিটিশ সাময়িকী মোনকল ২০১৮ সালে ধূলাবালিহীন, নির্মল, পরিচ্ছন্ন মিউনিখ শহরকে বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরের মর্যাদা দান করে।[3]
খেলাধুলা
ফুটবল এই শহরের জনপ্রিয় খেলা। এফসি বায়ার্ন মিউনিখ এই শহরের তথা জার্মানির অন্যতম প্রসিদ্ধ ফুটবল ক্লাব। অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনা এদের ঘরের মাঠ। ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ-এর সেমি-ফাইনাল ও দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতার আসর এই শহরে বসে।
যোগাযোগ
মিউনিখ বিমানবন্দর শহরের প্রধান, জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ইউরোপের সপ্তম বৃহত্তম বিমানবন্দর।
তথ্যসূত্র
- Landeshauptstadt München। "Monthly population figures" (German ভাষায়)। ২০০৮-১২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২৫।
- of European Cities in Different Languages
- Munich Is the Best City to Live in, Monocle Says
বহিঃসংযোগ
![]() |
উইকিমিডিয়া কমন্সে মিউনিখ সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- muenchen.de - the city's own website
![]() |
উইকিভ্রমণে München সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে। |
- WikiSatellite view of Munich at WikiMapia
- Münchner Verkehrs- und Tarifverbund - public transport network
- Oktoberfest - official website, information in both English and German
- Toytown Munich - community website for Munich's English-speaking population
- Munich City Panoramas - Panoramic Views and virtual Tours
- Photos