মাহবুবুর রব সাদী

মাহবুবুর রব সাদী (১০ মে ১৯৪৫ - ১৬ অক্টোবর ২০১৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[1]

মাহবুবুর রব সাদী
জন্ম(১৯৪৫-০৫-১০)১০ মে ১৯৪৫
মৃত্যু১৬ অক্টোবর ২০১৬(2016-10-16) (বয়স ৭১)
ঢাকা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

মাহবুবুর রব সাদীর পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বনগাঁও গ্রামে। তার বাবার নাম দেওয়ান মো. মামুন চৌধুরী এবং মায়ের নাম সৈয়দা জেবুন্নেছা চৌধুরানী।তার স্ত্রীর নাম তাজকেরা সাদী। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।

কর্মজীবন

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। স্কুলজীবনে নিজ এলাকায় গড়ে তোলেন দিনারপুর কৃষক প্রগতি সংঘ। ১৯৬১-৬২ সালে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৩-৬৪ সালে মৌলভীবাজার কলেজের ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৩ সালে মৌলভীবাজার ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সম্মেলনে যোগ দেন।

মাহবুবুর রব সাদী ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রূপ পেলে তিনি ৪ নম্বর সেক্টরের জালালপুর উপ-সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। তার নেতৃত্বে বা পরিচালনায় অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে কানাইঘাট থানা আক্রমণ অন্যতম। মাহবুবুর রব সাদী স্বাধীনতার পর ব্যবসার পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সিলেট-২০ আসন (হবিগঞ্জ এলাকা) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[2]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে একদিন বাংলাদেশের ভেতরে প্রাথমিক অবস্থান থেকে মাহবুবুর রব সাদীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা রওনা হয়েছিলেন লক্ষ্যস্থলে। চা-বাগানের পথ দিয়ে তারা কানাইঘাট যান। সবাই ছিলো গভীর ঘুমে আর পুলিশও জেগে ছিল না কেউ। শুধু দুজন সেন্ট্রি জেগে ছিল। আক্রমণের আগে সাদী চেষ্টা করেন সেন্ট্রিকে কৌশলে নিরস্ত্র করে পুলিশদের আত্মসমর্পণ করাতে। এ দায়িত্ব তিনি নিজের কাঁধেই নেন। একজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে তিনি থানায় যান। বাকি সবাই আড়ালে তার সংকেতের অপেক্ষায় থাকেন। সাদী থানার সামনে গিয়ে দেখেন, সেন্ট্রি দুজন ভেতরে চলে গেছে তাই তিনি আড়ালে অপেক্ষায় থাকেন। একসময় একজন সেন্ট্রি বেরিয়ে আসে এবং তাদের দেখে চমকে ওঠে; আচমকা ভূত দেখার মতো অবস্থা। সাদী মনে করেছিলেন, সেন্ট্রি ভয় পেয়ে আত্মসমর্পণ করবে কিন্তু সে তা না করে তার দিকে অস্ত্র তাক করে। তখন সাদীও তার অস্ত্র সেন্ট্রির দিকে তাক করেন। কিন্তু এর আগেই সেন্ট্রি গুলি করে। ভাগ্যক্রমে রক্ষা পান তিনি। কেবল তার মাথার ঝাকড়া চুলের একগুচ্ছ চুল উড়ে যায়। গুলির শব্দে ঘুমন্ত পুলিশরা জেগে ওঠে এবং দ্রুত তৈরি হয়ে গুলি শুরু করে। ওদিকে সাদীর সহযোদ্ধারাও সংকেতের অপেক্ষা না করে গুলি শুরু করেন। ফলে সাদী ও তার সঙ্গে থাকা সহযোদ্ধা ক্রসফায়ারের মধ্যে পড়ে যান। তাদের মাথার ওপর দিয়ে ছুটে যায় অসংখ্য গুলি। অনেক কষ্টে তারা থানার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। পরে তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালান।

মৃত্যু

তিনি ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর রাত আড়াইটায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবুরন করেন।[3]

পুরস্কার ও সম্মাননা

তথ্যসূত্র

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৪-১২-২০১২
  2. "২য় জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকা" (PDF)। বাংলাদেশ সংসদ। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮
  3. "বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রব সাদী"দৈনিক ইনকিলাব। ৫ ডিসেম্বর ২০১৬।
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.