মনোজ দাশগুপ্ত

কবি মনোজ দাশগুপ্ত (জন্ম ৫ আগস্ট ১৯৪৯ - ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭) ষাটের দশকের বগুড়ার একজন বিদ্রোহী কবি ও সম্পাদক। তার জন্ম বগুড়া শহরের শিববাটী মহল্লায়। তৎকালীন পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শোষনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন একজন অগ্রণী কলম-সৈনিক। তার জন্য তাকে বহুবার পাকিস্তানী প্রশাসনের নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছিল। তার সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী অক্টোবর'২০১৭ সালে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, পদধ্বনি প্রকাশন কর্তৃক প্রকাশিত 'পদধ্বনি' নামক গ্রন্থে সন্নিবেশিত আছে।

পারিবারিক জীবন

পুরোনাম মনোজভূষণ দাশগুপ্ত। ডাকনাম নাড়ু। পিতার নাম কনকভূষণ দাশগুপ্ত। মাতার নাম মনোরমা দাশগুপ্ত। তারা দুইভাই ও দুইবোন। ভাইবোনদের নাম (বড় থেকে ছোট) - কণা দাশগুপ্ত, মলয় দাশগুপ্ত, মীরা দাশগুপ্ত এবং সবার ছোট মনোজ দাশগুপ্ত। আদি নিবাস বরিশাল। মনোজ দাশগুপ্তের জন্মের মাত্র দেড় বছরের মাথায় তার মা মারা যান।

শিক্ষা জীবন

অমৃত পাঠশালা, বগুড়া করোনেশন ইন্সটিটিউশন ও বগুড়া আযিযুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। বি.এ. ভর্তি হয়ে মাওলানা ভাষানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে পড়াশুনায় ইস্তফা।

সাহিত্য জীবন

ছাত্রাবস্থায় ছড়া লিখতেন। খুবই ভাল আবৃত্তি করতেন। নাটকে অভিনয় করেছেন, নাট্য নির্দেশনাও দিয়েছেন। কাব্যযাত্রা ১৯৬৭ থেকে, কবিবন্ধু মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্'র সঙ্গে 'পদধ্বনি' লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনার মাধ্যমে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত বাংলাদেশের অজস্র লিটল ম্যাগাজিনে তার কবিতা প্রকাশ পায়। সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে অনেকগুলো গান ও গীতিনকশা লিখেছেন। গানগুলোর সুরারোপ করেছেন তার বন্ধু বগুড়া ইয়ুথ কয়ারের পরিচালক তৌফিকুল আলম টিপু। বেশকিছু ছড়া লিখেছেন। গানে ও ছড়ায় সমাজবাদী মানুষের পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯৮৭'র পরপরই হঠাৎ করে কবিতা লেখা ছেড়ে দেন।

সংগঠন

ছোটবেলা থেকেই পাড়ার ক্লাবগুলোর সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলেন। আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলনের সময় কারারুদ্ধ হন। ষাটের দশকে বগুড়া লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রণী কবিতা-সৈনিক। এছাড়াও তিনি ছিলেন বগুড়া লেখকগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি, বগুড়া নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য, বগুড়া লেখক চক্রের উপদেষ্টা। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তিনি অচিরেই বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম সদস্যপদ লাভ করেন। তিনি ছিলেন উদীচী বগুড়া জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্য। এছাড়াও তিনি দৈনিক চাঁদনী বাজার পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সম্পাদিত পত্র-প্রত্রিকা

'পদধ্বনি' ৩টি সংখ্যার সম্পাদক। দৈনিক চাঁদনী বাজার পত্রিকার সংস্কৃতি ও বিনোদন বিভাগ।

কর্মজীবন

বগুড়া লিথোগ্রাফিক প্রিন্টিং প্রেস, মুকুল প্রেস, গ্রীণ বুক হাউজ, দৈনিক চাঁদনী বাজার, সুন্দরবন প্রকাশন - এসব প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং সততার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সুন্দরবন প্রকাশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সংসার জীবন

বিবাহঃ ১৯৮৫ সালের ১মার্চ। স্ত্রীঃ মলিনা দাশগুপ্ত (লক্ষী)। একমাত্র সন্তানঃ অরণ্য দাশগুপ্ত (তপু)

পুরষ্কার

কণ্ঠসাধন আবৃত্তি সংসদ সম্মাননা (মরণোত্তর,২০০৮), বগুড়া জেলা প্রশাসক পদক (মরণোত্তর,২০০৮), সাহিত্য-জিজ্ঞাসা সম্মাননা (মরণোত্তর,২০১৪), উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী রজত জয়ন্তী সম্মাননা (মরণোত্তর,২০১৮)।

রচনাপঞ্জি

কাব্যগ্রন্থঃ সজল বৃক্ষের দিকে (২০০০ সালে মরণোত্তর প্রকাশিত)। প্রকাশকঃ রেজাউল করিম চৌধুরী, অর্কেস্ট্রাপ্রকাশ বগুড়া। এছাড়াও আছে সাতটি ছড়া, আটটি গান, একটি স্মৃতিপত্র, একটি গদ্য 'অপরাজেয় প্যালেস্টাইন', একটি গীতিনকশা (রবীন্দ্র-নজরুল মৃত্যুবর্ষ উপলক্ষ্যে রচিত)।

উৎস ও তথ্যসূত্র

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.