ভূগর্ভস্থ পানি
ভূগর্ভস্থ পানি বলতে ভূত্বকের নিচের মৃত্তিকারন্ধ্রে এবং শিলাস্তরের ফাটলে অবস্থিত পানিকে বোঝায়। একটি পাথরখন্ড কিংবা একটি অসংলগ্ন ভূ-গর্ভস্থ স্তর যখন ব্যবহার্য পরিমাণ পানি সরবরাহ করতে পারে তখন তাকে ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর (ইংরেজি Aquifer) বলা হয়। যে গভীরতা পর্যন্ত মৃত্তিকারন্ধ্র এবং পাথরের ভেতরকার ফাটল ও শূন্যস্থানগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তাকে ভূগর্ভস্থ পানিস্তর বলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রবেশ করা পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে ভূগর্ভস্থ পানিস্তর; আবার বিভিন্ন ঝর্ণাধারায় বা ছিদ্রপথে চুইয়ে পড়ে প্রাকৃতিকভাবে এর নির্গমন হয়, এবং মরুদ্যান বা জলাভূমি গঠন করে। কৃষিকাজ, পৌরসভা ও শিল্পকারখানার কাজে ব্যবহারের জন্য পানি নিষ্কাশন কূপ খনন করে প্রায়শই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হয়। ভূগর্ভস্থ পানির বিন্যাস ও বিচলন সংক্রান্ত অধ্যয়নকে হাইড্রোজিওলজি বা গ্রাউন্ডওয়াটার হাইড্রোলজি বলে।
{{কাজ চলছে/২০১৯}}

সাধারণত ভূগর্ভস্থ পানি বলতে সেই পানিকে ভাবা হয় যা অগভীর একুইফারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, কিন্তু, প্রায়োগিক অর্থে, মাটির আর্দ্রতা, পারমাফ্রস্ট (ভূগর্ভস্থ হিমায়িত মাটি), অতি অল্পভেদ্য ভূগর্ভস্থ শিলাস্তরের উপরস্থিত স্থিতিশীল পানি এবং গভীর ভূ-তাপীয় বা তেল উৎপাদন প্রকিয়ায় উৎপন্ন পানি এসবই ভূগর্ভস্থ পানির অন্তর্ভুক্ত। অনুমান করা হয় যে, ভূগর্ভস্থ পানি ভূ-চ্যুতির (ইংরেজি Faults) অবস্থান পরিবর্তনে সম্ভাব্য মসৃণকারক হিসেবে কাজ করে। এটি সম্ভাব্য যে ভূগর্ভের বেশিরভাগ অংশই কিছু পানি ধারণ করে, যা কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য তরল পদার্থের সাথে মিশ্রিত হয়ে যেতে পারে। ভূগর্ভে পানির অস্তিত্ব হয়ত শুধু্ পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ নয়। মঙ্গলগ্রহে পর্যবেক্ষিত ভূপ্রকৃতির কিছু অংশের গঠন ভূগর্ভস্থ পানি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপার ভূগর্ভে তরল পানির অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
ভূগর্ভস্থ পানি উপরিভাগের পানির তুলনায় সুলভ, অধিকতর সুবিধাজনক এবং কম দূষণের শিকার হয়। তাই এটি সাধারণত সার্বজনীন পানি সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারযোগ্য পানির সর্ববৃহৎ উৎসের যোগান দেয় ভূগর্ভস্থ পানি, এবং সকল প্রদেশের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া বছরে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট লেকস সহ সকল হ্রদ এবং জলাশয়গুলোর চেয়ে ভূগর্ভের জলাধারগুলো অনেক বেশি পানি ধারণ করে। নগরকেন্দ্রিক পানি সরবরাহের অধিকাংশই ভূগর্ভস্থ পানি হতে আহরণ করা হয়।
নদী এবং খালের পানি দূষণের চেয়ে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ কম দৃশ্যমান এবং পরিশোধন করা অধিকতর কষ্টসাধ্য। ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরিকল্পিত বর্জ্য নিষ্পত্তির কারণে ঘটে থাকে। প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্পকারখানা এবং গৃহস্থালির ব্যবহৃত রাসায়নিক এবং বর্জ্য পদার্থ, কৃষিকাজে ব্যবহৃত অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক, কারখানার বর্জ্য সম্ভার ( ইংরেজি: industrial waste lagoons), খনি থেকে আহরিত বর্জ্যপানির প্রক্রিয়াকরণ ও অবশিষ্টাংশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্র্যাকিং ( ইংরেজি : Industrial fracking ), তেলখনির লোনাপানির খাত, ভূগর্ভস্থ তেলের চৌবাচ্চা ও নালিতে ছিদ্রপথ, নর্দমার বর্জ্য ও শোধন প্রক্রিয়া।