ভাইগাই নদী

ভাইগাই হল দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের একটি নদী; এটি থেনি, আন্দিপট্টি এবং মাদুরাই শহরগুলির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।[2] এটি পশ্চিম ঘাট পর্বতশ্রেণীর পেরিয়ার মালভূমির ভারুসানাদু পাহাড় থেকে শুরু হয়েছে, এবং কুম্বম উপত্যকার মধ্যে দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে, এই উপত্যকা উত্তরে পালনি পাহাড় এবং দক্ষিণে ভারুসানাদু পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত। ভট্টাপরাই জলপ্রপাত এই নদীতে আছে। ভারুসানাদু পাহাড়ের পূর্ব কোণে ঘুরে, নদী দক্ষিণ-পূর্ব মুখী হয়েছে এবং পান্ড্য নাড়ু অঞ্চল জুড়ে চলছে। পাণ্ড্য নাড়ু অঞ্চলের বৃহত্তম শহর এবং এর প্রাচীন রাজধানী মাদুরাই ভাইগাই নদীর তীরে অবস্থিত। নদীটি রমানাথপুরম জেলার পাম্বান সেতুর নিকটবর্তী উচিপুলির কাছে পক প্রণালীতে গিয়ে পড়েছে। ভাইগাই নদী ২৫৮ কিলোমিটার (১৬০ মা) লম্বা, এর নিষ্কাশন অববাহিকা ৭,০৩১ বর্গকিলোমিটার (২,৭১৫ মা) জুড়ে আছে।[3] এটি ডিন্ডিগুল এবং থেনি জেলায় সেচের জন্য খুব কার্যকর।

ভাইগাই নদী
ভাইগাই নদীর মানচিত্র
দেশভারত
অববাহিকার বৈশিষ্ট্য
মূল উৎসভারুসানাদু পাহাড়
তামিলনাড়ু, ভারত
মোহনাপক প্রণালী, ভারত
 মি (০ ফু)
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
দৈর্ঘ্য২৫৮ কিমি (১৬০ মা)
নিষ্কাশন
  • গড় হার:
    ৩৬ মি/সে (১,৩০০ ঘনফুট/সে)
নিষ্কাশন
(location 2)
  • Location:
    পেরানাই[1]
  • Average rate:
    ২৮.৮ মি/সে (১,০২০ ঘনফুট/সে)

ভাইগাই নদীর জন্মের পৌরাণিক কাহিনী

পৌরাণিক কাহিনীটিতে ভাইগাই নদীর জন্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে। একজন পাণ্ড্য রাজার মেয়ে মীনাক্ষী ছিলেন পার্বতীর অবতার। খুব অল্প বয়স থেকেই, তিনি ভগবান শিব কে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর পরিবার প্রথমে এর বিরুদ্ধে ছিল তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর ইচ্ছায় সম্মতি জানায় এবং বিয়ের ব্যবস্থা করে। সুন্দরেশ্বর (শিব), একজন তপস্বী ছিলেন বলে, কোনও পরিবার বা আত্মীয়স্বজনকে না নিয়েই বিবাহ করতে এসেছিলেন। এতে হতাশ হয়ে, পান্ড্য রাজা ক্রোধে শিবকে দেখালেন, পাত্রীর আত্মীয়দের জন্য প্রচুর পরিমাণে প্রস্তুত করা খাবার। শিব নিজের সাথে নিয়ে আসা এক বন্ধুকে ইশারা করে দেখালেন এবং বললেন 'আপনার তৈরি সমস্ত খাবার ও খেয়ে নেবে'। এই বন্ধুটি ছিল কুন্ডোধারা নামে একজন রাক্ষস। সমস্ত প্রস্তুত খাবার কুন্ডোধারা খেয়ে শেষ করার পর, সে খুব তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ল এবং জল চাইতে লাগল। মাদুরাইয়ের সমস্ত কূপ ও খাল তার তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। তারপরে, শিব কুণ্ডোধারকে হাত বাড়িয়ে দিতে বললেন এবং নিজের জটার একটি ছোট অংশ খুললেন। গঙ্গা সেখান থেকে তাঁর হাতে প্রবাহিত হতে শুরু করলেন। তার তৃষ্ণা নিবারণের পরে, বাকি জল মাদুরাইতে ভাইগাই নদী হিসাবে প্রবাহিত হতে শুরু করেছিল। তামিল ভাষায় ভাইগাই মানে 'হাত বাড়িয়ে দাও'।[4]

তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে ভাইগাই নদী
ভাইগাই নদীর আলোকসজ্জা

বাঁধ সমূহ

ভাইগাই বাঁধটি তামিলনাড়ুর থেনি জেলায় পেরিয়াকুলাম তালুকে নদীর ওপর নির্মিত। এই নদী থেকে মাদুরাই জেলা এবং ডিন্ডিগুল জেলায় সেচের জন্য জল পাওয়া যায়, পাশাপাশি মাদুরাই এবং আন্দিপট্টির পানীয় জল ও এখান থেকে সরবরাহ হয়।[5] বাঁধের কাছে, তামিলনাড়ু সরকার বিভিন্ন ফসলের বর্ধনের উপর গবেষণা করার জন্য একটি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করেছে, সেখানে ধান, জোয়ার, কালো মুগ, বিউলির ডাল এবং তুলার ওপর গবেষণা চলছে।[6]

১৮৯৫ সালে জন পেনিকুইক পেরিয়ার বাঁধ তৈরি করেছিলেন। তিনি, রামনদের প্রাদানী মুথিরুলাপ্পা পিল্লাই দ্বারা প্রস্তাবিত এক শতাব্দীরও আগের একটি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করেছিলেন। বাঁধটি ব্রিটিশ আর্মি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের জন্য নির্মিত হয়েছিল। প্রথম বাঁধটি বন্যায় ভেসে গিয়েছিল এবং ১৮৯৫ সালে দ্বিতীয় একটি বাঁধ নির্মিত হয়েছিল।

"সন্তান জন্মদানকারী মাতার চেয়েও বড়/যে সন্তানের জন্ম হল তার চেয়েও বড়/প্রতি নিঃশ্বাস পেরিয়ার/প্রতিটি শব্দ পেরিয়ার/সমস্ত জায়গায়, সমস্ত পৃথিবীতে/যতদূর পেরিয়ারের জল প্রবাহিত হয়/আপনার নামটি থাকবে পেনিকুইক- আপনার নাম/জলের উপরে লেখা থাকলেও সর্বদা থাকবে"।

এইভাবেই অ্যান্থনি মুথু পিলাই (১৮৬৩-১৯২৯) জন পেনিকুইকের কাছে তামিল ভাষায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন। পেনিকুইক, একজন প্রকৌশলী, যিনি "প্রকৌশলের দু:সাহসিক ও অভূতপূর্ব কীর্তিটি" গ্রহণ করেছিলেন ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের পেরিয়ার নদী থেকে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ভাইগাই অববাহিকায় কিছু জল স্থানান্তরিত করার জন্য।

উপনদী

ভাইগাই নদীর প্রধান উপনদীগুলি হল, সুরুলিয়ারু নদী, মুল্লাইয়ারু নদী, বারাগানাদি, মঞ্জালারু নদী, কোট্টাগুড়ি এবং কৃধুমাল নদী। কৃধুমাল ব্যতীত এই সমস্ত নদীই থেনি জেলায় অবস্থিত ভাইগাই বাঁধের এর আশেপাশের জায়গায় ভাইগাই নদীর সাথে মিলিত হয়েছে, কৃধুমাল মাদুরাইয়ে ভাইগাইয়ের সাথে মিলেছে।

ভাইগাই নদী কেরলের কুমুলির পেরিয়ার বাঁধ থেকে প্রধানত তার জল পায়। কেরালার পেরিয়ার নদী থেকে জল তামিলনাড়ুর পশ্চিম ঘাট দিয়ে একটি সুড়ঙ্গের মাধ্যমে ভাইগাই নদীতে এসে পড়ে। গ্রীষ্মে, ভাইগাই নদী প্রায়শই শুকিয়ে যায়। এই সময় জল কখনও মাদুরাইতেও এসে পৌঁছায় না।

আরো দেখুন

  • Kaveri–Vaigai Link Canal

তথ্যসূত্র

  1. "Gauging Station - Data Summary"। ORNL। ২০১৩-১০-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১০-০১
  2. Madurai, Temple Town of South India. Cultural capital of Tamilnadu
  3. Garg, Santosh Kumar (১৯৯৯)। International and interstate river water disputes। Laxmi Publications। পৃষ্ঠা 10। আইএসবিএন 978-81-7008-068-8। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০১১
  4. "The story of Vaigai"। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৯
  5. "Water released from Vaigai dam for irrigation"। The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-০৯
  6. "Welcome to Agricultural Research Station, Vaigai Dam"। Tamil Nadu Government। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-০৯

টেমপ্লেট:Hydrography of Tamil Nadu

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.