বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি একপ্রকার বৈদ্যুতিক বাতি যা ব্যবহারে কম বিদ্যুৎ প্রযৈাজন হয়। এ বাতির প্রকৃত কারিগরি নাম হলো কমপ্যাক্ট ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্প ( সংক্ষেপে সিএফএল)। বিশেষ প্রযুক্তির কারণে এই বাতি সাধারণ অর্থাৎ ইনক্যানডিসেন্ট ল্যাম্প থেকে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং একই সঙ্গে অল্প বিদ্যুৎ থেকে বেশী আলো বিকীরণ করে। সাধারণত বাসা বাড়িতে ব্যবহারের জন্য ৬০ ওয়াট থেকে ১০০ ওয়াটের বিভিন্ন প্রকার সাধারণ বাতি বা বাল্ব ব্যবহার করা হয়। যার অর্থ হলো প্রতি ঘণ্টায় এই বাল্বগুলো ৬০ ওয়াট থেকে ১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। কিন্তু সমপরিমাণ আলো পেতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতির বিদ্যুৎ খরচ হয় মাত্র ৯ থেকে ১১ ওয়াট।

প্রযুক্তি

১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে দিকে সিএফএল বা কমপ্যাক্ট ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্প পরিচিতি লাভ করে। কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বেশি আলো দেয়ার পেছনে এর গঠনগত পার্থক্য বিদ্যমান। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি বা এনার্জি সেভিং বাল্ব মূলত, ঘনীভূত গ্যাস ভর্তি একটি কাচের নল। এই কাচের নল আলোর বিকিরণ গ্রহণকরত, তাকে আবার আলোরূপে ফিরিয়ে দেয়। এর কারণে কাচের নলটি যে পরিমাণ আলো উৎপন্ন করে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আলো পাওয়া যায়। কাচের নলটির মধ্যে থাকে ইলেক্ট্রনিক্স ব্যালাস্ট এবং নলটি পারদ বাষ্পে পূর্ণ থাকে। গঠনগত দিক থেকেও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি সাধারণ বাল্ব থেকে ভিন্ন। যখন বৈদ্যুতিক সুইচ অন করা হয় তখন ব্যালাস্ট থেকে গ্যাসের মধ্য দিয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল এনার্জি প্রবাহিত হয় ইলেক্ট্রিক্যাল তড়িৎ প্রবাহের রূপে এবং এটি আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি শোষণ করে। এই রশ্মি টিউবের ভেতর থেকে সাদা ফসফরাসকে উত্তেজিত করে এবং কাচের গায়ে লেপা কোটিং থেকে তা দৃশ্যমান আলোতে পরিণত হয়। এ কারণে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয় তার চেয়ে বেশি পরিমাণ আলো পাওয়া যায়।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের হার

সাধারণ ১০০ ওয়াটের একটি বাতি থেকে যে পরিমাণ আলো পাওয়া যায় একটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি সেই পরিমাণ আলো দিতে ২৩ ওয়াট বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে। ৬০ ওয়াটের সাধারণ বাতির সমান হলো ১১ ওয়াটের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি। একইভাবে ৪০ ওয়াটের সাধারণ বাতির জায়গায় একটি ৮ ওয়াটের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহার করাই যথেষ্ট।

ব্যবহার

বাসা-বাড়ী, অফিস বা সড়কে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহারের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমনঃ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহারের জন্য বিশেষ কোনো হোল্ডার বা ব্যালাস্টের প্রয়োজন নেই। এ ছাড়াও লক্ষণীয় যে, এই বাতির আলো টিউব লাইটের আলোর মতোই। সাধারণ টিউব লাইটের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যদি টিউব লাইটের কোনো সমস্যা হয় এটা হতে পারে টিউবের ক্ষেত্রে বা ব্যালাস্টের ক্ষেত্রে। তখন একজন ইলেক্ট্রিশিয়ানের প্রয়োজন হয় এবং এ জন্য বাড়তি খরচ হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতির ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো সমস্যা নেই। এই বাল্ব নষ্ট হয়ে গেলে নিজেরাই প্রতিস্থাপন করা যায়। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতির দাম বড় সুবিধা হলো এটি কম ভোল্টেজেও আলো দেয়। কিন্তু টিউব লাইটের ক্ষেত্রে দেখা যায় ভোল্টেজ কম হলে আলো দেয় না। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতির দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হলেও সাধারণ বাল্বের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদি এবং বেশি আলো দেয়ার কারণে একবার বেশি টাকা দিয়ে কিনলে আর ঝামেলা থাকে না। সাধারণ বাতির তুলনায় এর গড় আয়ু ৮ থেকে ১৫ গুণ পর্যন্ত বেশি। যেখানে সাধারণ বাতির গড় আয়ু ৭৫০ ঘণ্টা থেকে ১,৫০০ ঘণ্টা সেখানে একটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতির আয়ু ৬,০০০ থেকে ১৫,০০০ ঘণ্টা।

পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক আলো

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি একটি পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক আলোর উৎস। বিদ্যুৎ প্রধানত জৈব জ্বালানি হতে: যেমন পেট্রোল, ডিজেল, কয়লা ইত্যাদি। এই জৈব জ্বালানি ব্যবহারের ফলে পৃথিবীজুড়ে প্রতিবছর বাতাসের সঙ্গে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন টন বিষাক্ত গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইড যোগ হয়, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আমরা যদি পরিবেশবান্ধব বস্তু ব্যবহার করি তবে ওই ভয়াবহ বিপর্যয় হতে রক্ষা পাব। শুধুমাত্র এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করলে ২০ মিলিয়ন টন কম বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছড়াবে। সাধারণত বাতি ব্যবহারের ফলে মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের মাত্র ৫ ভাগ আলোতে রূপান্তরিত হয়। বাকি ৯৫ ভাগ বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় তাপমাত্রা বাড়ানোর কাজে।

ব্যবহারে সতর্কতা

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহারের কারণে কিছু শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। যেমন- যাদের মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন বা এনপলেপির সমস্যা আছে তারা বাড়িতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহার করলে শারীরিক কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ দিন এ আলোতে থাকলে মাইগ্রেন রোগীর মাইগ্রেন এ্যাটাক হতে পারে। মৃগী রোগীরা হঠাৎ এপিলেপিক এ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া সুস্থ মানুষের ছোটখাটো মাথা ব্যথা, অবসাদ, বমি বমি ভাব বা মাথা ঘুরানো বোধ হতে পারে। এমনকি লুপাস রোগীরা এই আলোতে বেশিক্ষণ থাকলে শরীরে ব্যথা অনুভব করেন বলেও শোনা গেছে। এই অসুবিধাগুলো বেশি হয় পুরনো প্রযুক্তির বাল্বগুলোতে। তবে নতুন প্রযুক্তির বাল্বগুলোতে এই সমস্যা অনেক কমে গেছে। এনার্জি সেভিং বাল্ব বা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতির পরিবেশগত কিছু অসুবিধাও আছে। ব্যবহারের পর এই বাল্ব যেখানে সেখানে ফেলা কিংবা সাধারণ পদ্ধতিতে ভাঙা উচিত নয়। এই বাল্বের ভেতরে যে গ্যাসীয় পদার্থ থাকে সেটি মাটিতে পড়লে তা ব্যাপক হারে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে। তাই নষ্ট বাল্ব ফেলার সময় খেয়াল রাখা উচিত। ইউরোপ বা আমেরিকাতে নষ্ট বাতি রিসাইকেল করার ব্যবস্থা থাকলেও এ ধরনের ব্যবস্থা অনুন্নত দেশে এখনো পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.