বাসুকী

বাসুকি (ইংরেজী:Vasuki এবং Sanskrit: वासुकी, वासव) মহাভারত মহাকাব্যে উল্লিখিত সর্পকুলের রাজা অর্থাৎ নাগরাজ। বাসুকি শিবের সর্প, মনসা তার বোন। সে দেবতা শিবের গলা পেঁচিয়ে থাকে। হিন্দু পূরান অনুযায়ী দেবতারা সমুদ্র মন্থনের জন্য বাসুকিকে রজ্জু হিসাবে ব্যবহার করেছিল। বৌদ্ধ পূরাণ্ওে বাসুকির উল্লেখ দেখা যায় ধর্মীয় আসরে শ্রোতা হিসেবে।[1][2]

কশ্যপ ও তার স্ত্রী কদ্রুর জ্যেষ্ঠ্ নাগ-পুত্র (অনন্তনাগ, শেষনাগ ও বাসুকি - তিন নামেই ইনি পরিচিত)। মাতা কদ্রুর অন্যায় আদেশ অমান্য করায় কদ্রু অনন্তকে শাপ দেন যে, তিনি জনমেজয়ের সর্প-যজ্ঞে দগ্ধ হয়ে মারা যাবেন। নানা পবিত্র তীর্থে কঠোর তপস্যার পর অনন্তনাগ ব্রহ্মার দেখা পান। ব্রহ্মা ওঁকে বলেন, বন-সাগর-জনপদাদি-সমন্বিত চঞ্চল পৃথিবীকে নিশ্চল করে ধারণ করতে। অনন্ত (শেষ) নাগ পাতালে গিয়ে মাথার ওপর পৃথিবী ধারণ করলেন। ব্রহ্মার অশীর্বাদে গরুড় তার সহায় হলেন এবং পাতালের নাগগণ তাকে নাগরাজ বাসুকিরূপে বরণ করলেন।

অনন্ত শব্দটি একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন- অন্তহীন [অ (ন) অন্ত] অর্থে― ব্রহ্ম, বিষ্ণু। কিংবা সাপ বিশেষ। ইনি শেষনাগ হিসাবে অভিহিত হয়ে থাকেন। এঁর ফণার সংখ্যা মোট ছয়টি এবং তা পদ্মফুলের মতো বিস্তৃত। পুরাণ মতে― নাগদের মধ্যে ইনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। ইনি পৃথিবীকে তার ধারণ স্কন্ধে ধারণ করে আছেন। ইনি যখন পৃথিবীকে তার এক স্কন্ধ থেকে অন্য স্কন্ধে ধারণ করেন তখন সমস্ত পৃথিবী কম্পিত হয়।

কশ্যপ মুনির ঔরসে কদ্রুর গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এঁর স্ত্রীর নাম ছিল তুষ্টি। অমর হওয়ার জন্য দেবতা ও অসুররা যখন সমুদ্র-মন্থন শুরু করে, তখন রজ্জু হিসাবে অনন্তকে ব্যবহার করা হয়েছিল। সমুদ্র মন্থনের প্রথম পর্যায়ে অমৃত উত্থিত হয়। কিন্তু অসুরদের বঞ্চিত করে দেবতারা অমৃত গ্রহণ করেন। ফলে অমৃত বঞ্চিত অসুররা আবার সমুদ্র মন্থন করতে থাকেন। কিন্তু সহস্র বৎসর ক্রমাগত মন্থনের পর অনন্ত হলাহল নামক তীব্র বিষ উদগীরণ করতে লাগলেন। এই বিষের প্রভাবে জীবজগত বিপন্ন হলে, দেবতাদের অনুরোধে মহাদেব সমস্ত হলাহল পান করে ফেললেন। উচ্চৈঃশ্রবা নামক অশ্বের লেজের বর্ণ নিয়ে কদ্রুর সাথে বিনতার তর্ক হলে, কদ্রু অশ্বের লেজ কালো বলেন। কদ্রু তার কথা সত্য প্রমাণিত করার জন্য, তার সর্পপুত্রদের উচ্চৈঃশ্রবার লেজে অবস্থান করতে বলেন। অনন্ত মায়ের এই আদেশকে অগ্রাহ্য করে অভিশপ্ত হন। এরপর ইনি নানা তীর্থে কঠোর তপস্যা করে কাটান। ব্রহ্মা তার এই কঠোর তপস্যার কারণ জানতে চাইলে, তিনি বলেন যে, পরলোকেও তার সাথে এই দুর্জন ভাইরা যেন না থাকে এবং তপস্যার দ্বারা প্রাণ ত্যাগ করতে চান। ব্রহ্মা তাকে পাতালে গিয়ে পৃথিবীকে নিশ্চলভাবে ধারণ করতে বলেন। সেই আদেশ অনুসারে ইনি পাতালে গিয়ে পৃথিবী ধারণ করেন। এই সময় ইনি পাতালের নাগদের রাজা হিসাবে মনোনীত হন। ব্রহ্মা নাগদের শত্রু গরুড়ের সাথে বন্ধুত্ব ঘটিয়ে দেন।

মায়ের অভিশাপ থেকে তার অন্যান্য ভাইদের রক্ষা করার জন্য তিনি উপায় অন্বেষণ করতে থাকেন। এই সময় এলাপত্র নামক এক নাগ অনন্তকে বলেন যে, অভিশাপদানকালে তিনি মায়ের কোল থেকে শুনেছিলেন— জরত্কারুর সন্তান আস্তীক মুনি সাপদের রক্ষা করবেন। এরপর অনন্ত জরত্কারু মুনিকে খুঁজে বের করেন এবং তার সঙ্গে তার নিজের বোনের বিবাহ দেন। উল্লেখ্য অনন্তের এই বোনের নামও ছিল জরত্কারু।

কালিকা পুরাণ মতে― প্রলয় শেষে বিষ্ণু লক্ষ্মীর সাথে এই সাপের মধ্যম ফণায় শয়ন করেন এবং এর ফণাগুলো বিষ্ণুকে ছাতার মতো আচ্ছাদিত করে রাখে। এঁর দক্ষিণ ফণায় বিষ্ণুর উপাধান ও উত্তর ফণায় পাদপীঠ। বিষ্ণু পুরাণের মতে- ইনি বলরামের অবতার। অনন্তদেবের অন্যান্য নাম―অনন্তশীর্ষ, অহিপতি, অহিরাজ, অহীন, অহীশ্বর, বাসুকি, শেষনাগ।

তথ্যসূত্র

  1. কালের কণ্ঠ প্রতিবেদন
  2. "হিন্দু পূরাণে বাসুকির কাহিনী"। ৫ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৪
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.