বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার বাংলাদেশের একটি মঞ্চ নাটক গোষ্ঠী।
গঠিত | ১৯৮৩ |
---|---|
প্রতিষ্ঠাতা | সেলিম আল দীন |
ধরণ | থিয়েটার |
সদরদপ্তর | ঢাকা |
অবস্থান |
|
ক্ষেত্রসমূহ | নাটক |
দাপ্তরিক ভাষা | বাংলা |
সভাপতি | নাসির উদ্দীন ইউসুফ |
সাধারণ সম্পাদক | তৌফিক হাসান ময়না |
ইতিহাস
ঢাকা থিয়েটারের তত্ত্বাবধায়নে ১৯৮৩ সালে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার তালুকনগর গ্রামে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার । বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন। তালুকনগর গ্রামের শাহ আজহার ওরফে আজাহার বয়াতীর মাঘীমেলাকে কেন্দ্র করে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ঢাকা থিয়েটার মৌলিক নাটক মঞ্চায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। সেলিম আল দীন মানিকগঞ্জের সংস্কৃতি দেখে নিজের নাটক রচনার নতুন পথ খুঁজে পান। তার রচিত কিত্তনখোলা’র পটভূমি মানিকগঞ্জ। কিত্তনখোলা নাটকের মনাই বয়াতী মূলত শাহ আজহার। শাহ আজহারের মেলার হাল অবস্থার সাথে নিজের কল্পনা মিশিয়ে নাটকটি রচনা করেন সেলিম আল দীন। ১৯৮২ সালে সেলিম আল দীনের রচনায় ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর নির্দেশনায় ঢাকা থিয়েটার তালুকনগরে মঞ্চায়ন করে ‘সায়ফুলমূলুকের দইরা যাত্রা’ নামক নাটক। ১৯৮৩ সালে গড়ে ওঠে গ্রাম থিয়েটারের প্রথম সংগঠন ‘তালুকনগর থিয়েটার’। সে বছর তালুকনগর থিয়েটার চৌকোণা খোলা মঞ্চে মঞ্চায়ন করে ‘চোর’ নাটক ও ঢাকা থিয়েটার মঞ্চায়ন করে সেলিম আল দীনের রচনায় ও নাসির উদ্দীন ইউসুফের নির্দেশনায় ‘বাসন’। দ্রুতই একে একে গড়ে ওঠে বংশাই থিয়েটার, গৌরাঙ্গী থিয়েটারসহ শতাধিক সংগঠন। শুরু থেকেই গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিল বোধন-কুষ্টিয়া, বগুড়া থিয়েটার, সংলাপ-ফেণী প্রমুখ নাটকের দল। জাতিয় নাট্য আঙ্গিক নির্মাণের আকাঙ্খা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। এই আকাঙ্খার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে চৌকোণা খোলা মঞ্চ ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হয়। এই মঞ্চ যাত্রার মঞ্চের মতই তবে এতে এক দিকের পরিবর্তে চার দিকে প্রবেশ ও নির্গমনের পথ থাকে।এরই ধারাবাহিকতায় বর্ণনাত্মক নাট্যরীতি ও বর্ণনাত্মক অভিনয় রীতি উদ্ভাবন করে ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। গ্রাম থিয়েটারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ঐতিহ্যবাহী (লোক) সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য কাজ করা।
সংগঠনের সম্মেলন সমূহ
প্রথম জাতীয় সম্মেলন
১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে খসরা গঠনতন্ত্র গৃহীত হয়।
চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন
২৯ এপ্রিল-১ মে ১৯৯৯ অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন ১৯৯৯ এবং বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ৬ষ্ঠ বাংলা লোকনাট্য উৎসব ১৪০৬ বঙ্গাব্দ। পুঠিয়া থিয়েটারের আয়োজনে পুঠিয়া রাজবাড়ী মাঠে সম্মেলন ও উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
৫ম জাতীয় সম্মেলন
বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ১৬-২২ মার্চ ২০০২ ৫ম জাতীয় সম্মেলন ও ঢাকা থিয়েটার উৎসব মহিলা সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন ও উৎসব আয়োজন করেছিল ঢাকা থিয়েটার।
সপ্তম জাতীয় সম্মেলন
২০১৬ সালের ৩১ মার্চ-১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সপ্তম সম্মেলন। কাউন্সিলে পুনরায় নাসির উদ্দীন ইউসুফকে সভাপতি ও তৌফিক হাসান ময়নাকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে।
সংগঠন
বর্তমানে সারা দেশে দুই শতাধিক সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। সারা দেশের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য ৩৬ টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এ সকল অঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছেন আঞ্চলিক সমন্বয়কারীগণ। আঞ্চলিক সমন্বয়কারীদের কাজের তত্ত্বাবধান করেন ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৮ জন বিভাগীয় সমন্বয়কারী।
কার্যক্রম
যে সকল কাজ গুরুত্বের সাথে করছে গ্রাম থিয়েটার তার ভেতর উল্লেখযোগ্য হলো- ১. তাত্ত্বিক কর্মশালা ২. অভিনয় কর্মশালা ৩. নাট্যকার প্রশিক্ষণ ৪. নারী নাট্যকর্মী প্রশিক্ষণ ও ৫. নাট্যোৎসব গ্রাম থিয়েটার, নিয়মিত ষান্মাসিক ‘গ্রাম থিয়েটার পত্রিকা’ প্রকাশ করে থাকে। এর বাইরে ‘ঢাকা বিভাগের মুখপত্র’ নামে একটি ষান্মাষিক পত্রিকা প্রকাশিত হয। গ্রাম থিয়েটার কেন্দ্র থেকে ও এর বিভিন্ন সংগঠন এ পর্যন্ত ২০টি নাটক প্রকাশ করেছে।
সাংগঠনিক কাঠামো
গ্রাম থিয়েটারের পাঁচ ধাপের সাংগঠনিক কাঠামো কাজ করছে। সেগুলো হলো- ১. উপদেষ্টা পর্ষদ ২. জাতীয় পর্ষদ ৩. কেন্দ্রীয় পর্ষদ ৪. বিভাগীয় পর্ষদ ও আঞ্চলিক পর্ষদ এবং ৫. ইউনিট সংগঠন। গ্রাম থিয়েটারের কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্ণনাত্মক নাট্যরীতি ও অভিনয় রীতি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পরছে।
পুরস্কার
- ২০১৪ - সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন প্রবর্তিত সেলিম আল দীন পদক।