পণ মৃত্যু

পণ মৃত্যুগুলো হল সেই সব মহিলার মৃত্যু,  যাঁদেরকে অনবরত স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির তরফে পণ বৃদ্ধির কারণে অত্যাচার করার জন্যে খুন অথবা আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে।  

পণ মৃত্যুগুলো প্রধানত ভারত,[1] পাকিস্তান,[2] বাংলাদেশ[3] এবং ইরানে[4][5] দেখা যায়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮,৩৯১ পণ মৃত্যু সংঘটিত হয়েছল, প্রতি ১০০,০০০ জনে ১.৪ মৃত্যু হয়। জনসংখ্যার নিরীখে পাকিস্তানে বছরে ২,০০০ এরকম মৃত্যু হয় বলে জানা যায়, ১০০,০০০ জন মহিলার মধ্যে ২.৪৫ পণ মৃত্যু হয়।[6][7]

মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার অনেকগুলো ধরনের মধ্যে একটা হল পণ মৃত্যু, এর পাশাপাশি আছে ধর্ষণ, বধূ জ্বালানো, ইভ টিজিং এবং অ্যাসিড ছোড়া।

ভারত

যুবতী মহিলারা হেনস্থা এবং অত্যাচার সহ্য করতে না-পেরে আত্মহত্যা করলেই বেশির ভাগ পণ মৃত্যু ঘটে। এই ধরনের বেশির ভাগ আত্মহত্যা গলায় দড়ি, বিষ খাওয়া এবং গায়ে আগুন দিয়ে হয়। অনেক সময় স্বামী অথবা শ্বশুরবাড়ির মানুষেরা বধূকে আগুনে পুড়িয়ে মারে; এটাকে বলে 'বধূ জ্বালানো', এবং অনেক সময় সাজানোভাবে এটাকে আত্মহত্যা অথবা দুর্ঘটনা বলে চালাবার চেষ্টা হয়। ভারতীয় মহিলাদের পুড়িয়ে মারার ঘটনাকে বারংবার পণ নিয়ে সংঘর্ষরূপে চাপিয়ে দেওয়া হয়।[8] পণ মৃত্যুগুলোতে খুন অথবা আত্মহত্যার অপরাধী হল বরের পরিবার।[9]

দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ভারতে পণ সম্পর্কিত মৃত্যু বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সারা ভারতে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ১৮,২৩৩ সংখ্যক পণ সম্পর্কিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল।[1] এর অর্থ প্রত্যেক ৯০ মিনিটে একজন বধূকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, অথবা পণ সম্পর্কিত ঘটনায় ভারতে প্রতি বছর ১০০,০০০ মহিলার মধ্যে ১.৪টা মৃত্যু ঘটছে।[10][11]ভারতে অপরাধ রাশিবিজ্ঞান, ভারত সরকার (২০১১)

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ভারতীয় পুলিশ প্রদত্ত রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর তারা ২,৫০০এর বেশি বধূ জ্বালানোর খবর পায়।[12] দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)এর খবর যে, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে প্রায় ৮৩৩১টা পণ মৃত্যুর ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।[1] পণ মৃত্যুর সংখ্যা ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের (৭১৪৬) তুলনায় ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে (৮১৭২) ১৪.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল,[13] যখন ভারতে জনসংখ্যা এই ১০ বছর সময়কালে ১৭.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।[14] যে সমালোচকরা পণ মৃত্যুর ঘটনাবলিকে কম করে দখানোয় বিশ্বাসী, তাদের কাছে এই সংখ্যাগুলো নিরপত্তায় ভালো কাজ দেবে।[15]

কয়েক দশক ধরে ভারতীয় পণবিরোধী আইন চালু থাকা সত্ত্বেও সেগুলো ঠিকভাবে প্রয়োগ না-হওয়ায় খুবই সমালোচিত হয়েছিল।[16] ভারতের বিভিন্ন অংশে ঠিকমতো তদন্তের অভাবে পণ মৃত্যু এবং খুন সংঘটিত হতেই থাকে এবং এইসব জবরদস্তি আরো উদ্বেগের কারণ হয়।[17]

নিষিদ্ধকরণ

১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের পণ নিবারণ আইন 'বিয়ে সংঘটিত করার জন্যে', পণ দেওয়া অথবা নেওয়া, অনুরোধ করা নিষিদ্ধ করে, যেখানে 'পণ'কে বিয়ের একটা উপহার অথবা একটা পূর্বশর্ত হিসেবে বর্ণনা করা হয়। পূর্বশর্ত ছাড়া উপহার দিলে তাকে পণ বলা হয়না, এবং তা আইনসিদ্ধ। পণ দাবি করা অথবা দেওয়া হলে ছ-মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে, অথবা টাকা ৫,০০০ (US$৬৯.৫৭) পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে। এই পণবিরোধী আইন নানাভাবে পরিবর্তিত হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কার্যকর হয়েছে।[18] হত্যা এবং আত্মহত্যা বাধ্যতামূলকভাবে ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির দ্বারা বিধিবদ্ধ হয়েছে।

ভারতীয় নারী অধিকার রক্ষা কর্মীদের দীর্ঘ ৪০ বছরের বেশি প্রচারের ফলে পণ মৃত্যু সম্পর্কিত আইন, যেমন 'পণ নিবারণ আইন, ১৯৬১' এবং আরো কঠোর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারা (১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে কার্যকর হয়েছে)। অভ্যন্তরীণ হিংসা থেকে নারী সুরক্ষা আইন, ২০০৫ (পিডব্লুডিভিএ)এর অধীনে একজন মহিলা এক অভ্যন্তরীণ হিংসা সুরক্ষা আধিকারিকের সহায়তায় পণ হেনস্থার অবসান করতে পারেন।

যদিও কয়েক দশক ধরে ভারতীয় পণবিরোধী আইনগুলো চালু আছে, তথাপি ওগুলো অকার্যকর বলে সমালোচনা করা হয়।[16] পণ মৃত্যু এবং খুনের ঘটনাগুলো অরক্ষিতভাবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে চলেছে এবং এগুলো যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ ঘটাচ্ছে। [17]

  1. "National Crime Statistics (page 196)" (PDF)। National Crime Records Bureau, India। ২০১৩-০১-১৬। ২০১৪-০৬-২০ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০১-০২
  2. PAKISTAN: The social injustice behind the practice of dowry-when greed dictates society Asian Human Rights Commission (2014)
  3. UN Women, Bangladesh Report 2014-Annexes United Nations (May 2014) Table 6 page xiii
  4. Isfahan man kills daughter over inability to pay dowry Public Broadcasting Service, Washington DC (August 16, 2010)
  5. Kiani et al. (2014), A Survey on Spousal Abuse of 500 Victims in Iran, American Journal of Forensic Medicine and Pathology, 35(1):50-54, March 2014
  6. Subhani, D., Imtiaz, M., & Afza, S. (2009), To estimate an equation explaining the determinants of Dowry, MePRC Journal, University of Munich, Germany
  7. Anderson, Siwan (2000), "The economics of dowry payments in Pakistan", Mimeo, Tilburg University Press, Center for Economic Research
  8. Kumar, Virendra (ফেব্রু ২০০৩)। "Burnt wives"। Burns29 (1): 31–36। doi:10.1016/s0305-4179(02)00235-8
  9. Oldenburg, V. T. (2002). Dowry murder: The imperial origins of a cultural crime. Oxford University Press.
  10. Provisional 2011 Census Data, Government of India (2011)
  11. Crime statistics in India ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে, Government of India (2011)
  12. Bride-burning claims hundreds in India: Practice sometimes disguised as suicide or accident CNN, August 18, 1996.
  13. "Point No.17, Dowry Deaths" (PDF)। ২০১১-০৬-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৪
  14. Decadal Growth Rates in India ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে Census of India, Government of India, New Delhi (2012)
  15. Caleekal, Anuppa। "Dowry Death"। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০১-০৫
  16. Manchandia, Purna (২০০৫)। "Practical Steps towards Eliminating Dowry and Bride-Burning in India"। Tul. J. Int'l & Comp. L.13: 305–319।
  17. Spatz, Melissa (১৯৯১)। "A "Lesser" Crime: A Comparative Study of Legal Defenses for Men Who Kill Their Wives"। Colum. J. L. & Soc. Probs.24: 597, 612।
  18. "Section 1-4, Dowry Act"indiacode.nic.in। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৮
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.