নিকোলা টেসলা

নিকোলা টেসলা (সার্বীয়:Никола Тесла; ১০ জুলাই ১৮৫৬ - ৭ জানুয়ারি ১৯৪৩) ছিলেন একজন সাইবেরিয়ান আমেরিকান[2][3][4][5] পদার্থবিদ, উদ্ভাবক, ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশলী, যন্ত্র প্রকৌশলী এবং ভবিষ্যদ্বাবী। এছাড়াও তিনি আধুনিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ ও তারবিহীন তড়িৎ পরিবহন ব্যবস্থার আবিষ্কারের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।[6]

নিকোলা টেসলা
টেসলা, বয়স ৩৪, ১৮৯০, ছবি তুলেছেন নেপোলিয়ন স্যারনি
জন্ম(১৮৫৬-০৭-১০)১০ জুলাই ১৮৫৬
Smiljan, Austrian Empire (modern-day Croatia)
মৃত্যু৭ জানুয়ারি ১৯৪৩(1943-01-07) (বয়স ৮৬)
নিউ ইয়র্ক সিটি, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
নাগরিকত্বঅস্ট্রীয় সাম্রাজ্য (১০ জুলাই ১৮৫৬ – ১৮৬৭)
অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি (১৮৬৭ – ৩১ অক্টোর ১৯১৮)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৩০ জুলাই ১৮৯১ – ৭ জানুয়ারি ১৯৪৩)
নিকোলা টেসলা
ব্যক্তিগত তথ্য
নামনিকোলা টেসলা
জন্ম তারিখ{{{birth_date}}}
জন্মস্থান{{{birth_place}}}
কর্মজীবন
প্রকৌশলের বিষয়তড়িৎ প্রকৌশল
যন্ত্র প্রকৌশল
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পপরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ,
high-voltage, high-frequency power experiments
গুরুত্বপূর্ণ নকশাআবেশ মোটর
Rotating magnetic field
Tesla coil
Radio remote control vehicle (torpedo)[1]
গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার
স্বাক্ষর

নিকোলা টেসলা টেলিফোন এবং তড়িৎ প্রকৌশল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন।১৮৮৪ সালে তিনি নিউইয়র্কে স্থানান্তরিত হন এবং টমাস এডিসন এর সাথে কাজ শুরু করেন। তিনি তার গবেষণাগার এবং তড়িৎ প্রকৌশলের উন্নয়নের জন্য নিজের আর্থিক অবস্থার চেষ্টা করেন।তিনি আবেশ মোটর এবং ট্রান্সফরমার এর অনুমোদন জর্জ ওয়াশিংটন হাউজ এর কাছ থেকে নিয়েছিলেন।তিনি তড়িৎ শক্তি উন্নয়ন এর জন্য অনেক কাজ করেন। তার কাজ এক কথায় তড়িৎ যুদ্ধ নামে পরিচিত। টেসলা তার উচ্চ ভোল্টেজ তড়িৎ এবং উচ্চ স্পন্দন এর পরীক্ষা করেন নিউইয়র্কে ও কলোরাডোতে।এরপর তিনি তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা করেন।তিনি তার সকল ধারনা,প্রচেষ্টা ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ারএ দেবার চেষ্টা করেন।তিনি তার গবেষণাগার এক্স রশ্মি, তড়িৎ বিছিন্ন চার্জ নিয়ে গবেষণা করেন।তিনি একটি নৌকা বানান যা ছিল তারবিহিন। তিনি পরে তার প্রদর্শনী করেন। নিকোলা টেসলা তার খ্যাতি, সুনামের জন্য বেশ পরিচিত ছিলেন, তাকে অনেকে পাগল বিজ্ঞানী বলত।তার বিশেষ গুনাবলির জন্য তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন এবং বেশীরভাগ অর্থ তার গবেষণাগার এর সফলতার জন্য ব্যবহার করেন।তিনি তার জীবনের বেশীরভাগ সময় নিউইয়র্কে এর একটি হোটেল এ ছিলেন। তিনি ১৯৪৩ সালের ৭ জানুয়ারি মারা যান। তিনি মারা যাবার পর তার অসমাপ্ত কাজগুলো করতে অনেক সমস্যায় পরতে হয় বিজ্ঞানীদের।তার সম্মানার্থে ১৯৬০ সালে তড়িৎ ফ্লাক্স এর এস এই একক টেসলা করা হয়।জনপ্রিয় স্বার্থে ১৯৯০ সাল থেকে টেসলার মধ্যে পুনরূত্থান লক্ষ করা যায়।

১৮৮৬ সালে টেসলা প্রতিষ্ঠা করেন নিজ কোম্পানি টেসলা ইলেকট্রিক লাইট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং। তবে বিনিয়োগকারীদের অনীহার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বেশিদিন চালাতে পারেননি। এরপরই তিনি সাধারণ গবেষকের জীবনযাপন শুরু করেন। তৈরি করেন বিশেষ ধরনের এসি ইন্ডাকশন মোটর, নতুন ধরনের এক্স-রে।টেসলা ১৮৯৫ সালেই নিয়ে আসেন জেনারেটর। এর মধ্যে একবার টেসলার গবেষণাগার পুড়ে যায়। এজন্য একটি পেটেন্টও হাতছাড়া হয়ে যায় তার। পরে তার গবেষণা মোড় নেয় অন্যদিকে। একে একে পেটেন্টের তালিকায় যোগ হতে থাকে ইলেকট্রিক্যাল কনডেনসার, ট্রান্সফরমার, সার্কিট কন্ট্রোলার, মেথড অব সিগন্যালিং এবং গতিনির্দেশক যন্ত্র ছাড়াও আরো অনেক কিছু। মাঝে একবার রেডিওর পেটেন্ট নিয়ে মার্কোনির বিরুদ্ধেও মামলা করেন তিনি। ১৯০৯ সালে রেডিও আবিষ্কারের জন্য মার্কোনি নোবেল পান। কিন্তু তখন রেডিও প্রযুক্তির নৈপথ্যে টেসলা ও এডিসনের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারেনি। এজন্য ১৯১৫ সালে সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ীর তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন এই দু'জন।

নিকোলা টেসলা ১৮৫৬ সালের ১০ জুলাই সিমিলজান(বর্তমান ক্রোয়েশিয়া) নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবার নাম মালতিন, তিনি একজন ধর্মযাজক ছিলেন।তার মা ছিলেন ডুকা টেসলা।তার বাবা ছিলেন খুব জ্ঞানী যিনি বাসার জিনিসপত্র বানাতে এবং যন্ত্র প্রকৌশল বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন।তার মা ডুক প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেননি কিন্তু তার মা ছিলেন অসাধারন মেধার অধিকারিণী।তিনি তার মায়ের কাছ থেকে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করেন। টেসলার পূর্বপুরুষরা ছিলেন পশ্চিম সাইবেরিয়ান,মন্তিনিগ্রর এলাকার। টেসলা তার বাবা মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে ৪র্থ।তার বড় ভাই এর নাম ডানে এবং তিনটি বোন ছিল। তাদের নাম হল মিল্কা, এঞ্জেলিনা , মারিকা। নিকোলা যখন ৫ বছরের তখন তার ভাই ডানে এক ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় মারা যায়। তিনি ১৮৬১ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সে সিমিলজানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান এবং ধর্ম, জার্মান শিখেন।১৮৬২ সালে তার পরিবার গোসপিক এ যায়।সেখানে তার বাবা কাজ করত। টেসলা তার প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণ বিদ্যালয় থেকেই শেষ করেন। ১৮৭০ সালে তিনি ক্রোয়েশিয়ার কারলভাক এ যান।সেখানে উচ্চ বিদ্যালয় এ ভর্তি হন।তিনি মারটিন সেকুলিক নামক একজন গণিত শিক্ষক দ্বারা প্রভাবিত হন।তিনি ক্যালকুলাসের সমাকলন করতে সমর্থ ছিলেন,যা তার শিক্ষকের মনে কৌতুহল এর সৃষ্টি করেছিল।১৮৭৩ সালে তিনি তার ৪ বছরের বিদ্যালয় মাত্র ৩ বছরে শেষ করেন।১৮৭৪ সালে তিনি অস্ট্রিয়-হাঙ্গেরির সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।তিনি শিকারি পর্বত অন্বেষণ করেন।তিনি বলতেন, প্রকৃতি তাকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে শক্তিশালী করেছে।তিনি টোমিনগাজ এ থাকাকালীন অনেক বই পড়েন।পরে তিনি বলেন যে,মার্ক টোয়েন এরসাথে কাজ করায় তার প্রাথমিক অসুস্থতা দূর হয়েছিলো।১৮৭৫ সালে নিকোলা টেসলা অস্ট্রিয়ার গারাজে সেনাবাহিনীর একটি বৃত্তি লাভ করেন।তিনি প্রথম বছর কোন ক্লাস বাদ দেননি এবং সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ৯ টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।তিনি সাইবেরিয়ান একটি সংস্কৃতি ক্লাব এ যোগদান করেন।তার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধানের কাছ হতে তার বাবার কাছে একটি চিঠি যায়। সেখানে লিখা ছিল, আপনার ছেলে মেধাতালিকায় প্রথম। টেসলা বলেন যে তিনি রবিবার এবং ছুটির দিন ছাড়া অন্য সব দিন ভোর ৩ টা হতে রাত ১১ টা পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি তার বাবার কাছ থেকে কঠোর পরিশ্রম করার অনুপ্রেরণা পেতেন।১৮৭৯ সালে তার বাবার মৃত্যুর পর তার প্রফেসার এর কাছ থেকে তার বাবার চিঠি পান। সেখানে লিখা ছিল অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে টেসলা মারা যেতে পারে। যদি টেসলা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে তবে তাকে যেন বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয়। সেই সময় ২য় বর্ষে থাকাকালীন তিনি তার শিক্ষক গ্রামে ডাইনামো দারা প্রভাবিত হন। তিনি ২য় বর্ষের পর তার বৃত্তি হারান কারণ তিনি জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন। ৩য় বর্ষে তিনি ভর্তি, সুবিধাসহ সকল সুবিধা হারান।এরপর তিনি সব ছেড়ে তার পরিবার এর কাছে ফিরে যান।তিনি বলেছিলেন,তার আবেগ আগে ও পরে সব সমান ছিল।পরবর্তীতে তিনি আমারিকাতে বিলিয়ার্ড খেলায় বেশ সুনাম অর্জন করেন।যখন পরীক্ষা চলে আসে তখন তিনি পরীক্ষার জন্য তৈরি ছিলেন না।তিনি পড়ালেখা করতে অস্বীকার করেন। তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ বর্ষে কোন নম্বর পাননি। ১৮৭৮ সালে তিনি তার পরিবারের সাথে সব কিছু গোপন রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন।এরপর তিনি মারিবর চলে যান।যেখানে তিনি মাসে মাত্র ৬০ ফ্লরিন এর জন্য কাজ করতে থাকেন।তিনি তার সময় রাস্তার মানুষের সাথে কার্ড খেলে পার করতেন।১৮৭৯ সালে তার বাবা মালটিন মারিবর যান তাকে বাসায় নিয়ে আসার জন্য কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।সেই তিনি রোগে ভুগছিলেন।১৮৭৯ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি গোসপিক ফিরে আসেন।১৮৭৯ সালের ১৭ এপ্রিল তার বাবা মারা যান।তখন তিনি গোসপিক বিশ্ববিদ্যালয় এর সবচাইতে বয়স্ক ছাত্র। ১৮৮০ সালে তিনি তার দুই চাচার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গোসপিক ত্যাগ করে প্রাগে আসেন পড়ালেখা করার জন্য কিন্তু তিনি অনেক দেরি করে ফেলেন।তিনি কখনও গ্রিক ভাষা শিখেননি এবং চেক ভাষাও জানতেন না।তাই এসব বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় হতে কোন নম্বর পান নি।১৮৮১ সালে টেসলা বুদাপেস্ট এর একটি কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন।তিনি বুঝতে পারেন যে তার এই কোম্পানি নির্মাণ অধীন,তাই তিনি কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন। কয়েক মাসের মধ্যেই তার কোম্পানি বুদাপেস্ট এর অন্যতম কোম্পানিতে পরিণত হন এবং তিনি ছিলেন তার প্রধান ইলেক্ট্রিসিয়ান।তিনি সেখানে চাকরি করার সময় কোম্পানির যে উন্নতি হয় তা পরবর্তীতে আর কেও করতে পারে নি।

তথ্যসূত্র

  1. Jonnes 2004, পৃ. 355
  2. Burgan, Michael (২০০৯)। Nikola Tesla: Inventor, Electrical Engineer। Mankato, Minnesota: Capstone। পৃষ্ঠা 9। আইএসবিএন 978-0-7565-4086-9।
  3. "Electrical pioneer Tesla honoured"। BBC News। ১০ জুলাই ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১৫
  4. "No, Nikola Tesla's Remains Aren't Sparking Devil Worship In Belgrade"। Radio Free Europe/Radio Liberty। ৯ জুন ২০১৫।
  5. "Nikola Tesla"History Channel। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১৫Serbian-American engineer and physicist Nikola Tesla (1856–1943) made dozens of breakthroughs in the production, transmission and application of electric power.
  6. Laplante, Phillip A. (১৯৯৯)। Comprehensive Dictionary of Electrical Engineering 1999। Springer। পৃষ্ঠা 635। আইএসবিএন 9783540648352।
  7. "Nikola Tesla: The Genius Who Lit the World"। Top Documentary Films।
  8. Carey, Charles W. (১৯৮৯)। American inventors, entrepreneurs & business visionaries। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 337। আইএসবিএন 0-8160-4559-3। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১৫
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.