নিকোটিন
নিকোটিন এক প্রকারের স্নায়ুবিষ (নিউরোটক্সিন), যা একধরনের অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টরের (কোলিনার্গিক অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টর) উপর কাজ করে। এটি মূলত সোলানেসি গোত্রের উদ্ভিদে পাওয়া যায়। উদ্ভিদের পাতা এবং মূল নিকোটিনের উৎস।
![]() | |
![]() | |
ক্লিনিক্যাল তথ্য | |
---|---|
বাণিজ্যিক নামসমূহ | Nicorette, Nicotrol |
এএইচএফএস/ড্রাগস.কম | মনোগ্রাফ |
গর্ভধারণ বিষয়শ্রেণী |
|
নির্ভরশীলতার দায় | High |
প্রশাসন রুটসমূহ | smoked (as smoking tobacco, mapacho, etc.), insufflated (as tobacco snuff or nicotine nasal spray), chewed (as nicotine gum, tobacco gum or chewing tobacco), transdermal (as nicotine patch, nicogel or topical tobacco paste), intrabuccal (as dipping tobacco, snuffs, dissolvable tobacco or creamy snuff), vaporized (as electronic cigarette, etc.), directly inhaled (as nicotine inhaler), oral (as nicotini), buccal (as snus) |
এটিসি কোড | |
আইনি অবস্থা | |
আইনি অবস্থা |
|
ফার্মাকোকাইনেটিক উপাত্ত | |
বায়োভ্যালিয়েবিলিটি | 20 to 45% (oral) |
বিপাক | hepatic |
জৈবিক অর্ধ-জীবন | 2 hours; 20 hours active metabolite (cotinine) |
শনাক্তকারী | |
আইইউপিএসি নাম
| |
সিএএস সংখ্যা | |
পাবকেম সিআইডি | |
আইইউপিএইচএআর/বিপিএস | |
ড্রাগব্যাংক | |
কেমস্পাইডার | |
ইউএনআইআই | |
কেইজিজি | |
সিএইচইবিআই | |
সিএইচইএমবিএল | |
ইসিএইচএ তথ্যকার্ড | 100.000.177 |
রাসায়নিক ও ভৌত তথ্য | |
সংকেত | C10H14N2 |
মোলার ভর | 162.12 g/mol |
থ্রিডি মডেল (JSmol) | |
ঘনত্ব | 1.01 g/cm3 |
গলনাঙ্ক | −৭৯ °সে (−১১০ °ফা) |
স্ফুটনাঙ্ক | ২৪৭ °সে (৪৭৭ °ফা) |
এসএমআইএলইএস
| |
আইএসসিএইচএল
|
প্রথম ব্যবহার : কীটনাশক হিসেবে
তামাক ইউরোপে প্রথম পরিচিতি লাভ করে ১৫৫৯ সালে এবং পরে সপ্তদশ শতাব্দীতে. এটি কেবল ধূমপানেই ব্যবহৃত হত না বরং কীটনাশক হিসেবেও এর ব্যবহার ছিল। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ এর পর আড়াই হাজার টন নিকোটিন কীটনাশক (তামাক কারখানার বর্জ্য) বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ১৯৮০ সালের মধ্যে এর ব্যবহার ২০০ টনে নেমে আসে। মানুষের জন্য কম ক্ষতিকর অন্যান্য কীটনাশক আবিষ্কৃত হওয়ায় এমন ঘটেছিল।
নিকোটিন আসক্তিতে দায়ী জিন
চেইন স্মোকার হয়ে ওঠার পেছনে দায়ী মূলত এ জিনগত ঝুঁকি। যেসব কিশোর ধূমপান শুরু করেছে, বয়স ১৫ হতেই তাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশের এতে নিয়মিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ১৮ বছর বয়সের মধ্যে তাদের ৪৩ শতাংশের প্রতিদিন এক প্যাকেট বা তার বেশি সিগারেট প্রয়োজন হতে পারে
জিনগত কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষ কৈশোরে ধূমপান শুরু করে এবং পরে চেইন স্মোকার হয়ে দাঁড়ায়। এ বৈশিষ্ট্যের ফলেই একজন মানুষ পুরো জীবন কাটিয়ে দিতে পারে ধূমপায়ী হিসেবে। সম্প্রতি এক গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা তাদের মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান করার পেছনে জিনগত বৈশিষ্ট্যের প্রভাব খোঁজার চেষ্টা করেন। নিউজিল্যান্ডের এক হাজার অধিবাসীর ওপর জন্মের পর থেকে ৩৮ বছর পর্যন্ত তারা গবেষণা পরিচালনা করেন। ফলাফলে দেখা যায়, যাদের বেশি মাত্রায় জিনগত ঝুঁকি ছিল তারা কৈশোর থেকেই ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এছাড়া অতিরিক্ত মাত্রায় ধূমপানের প্রতিও তাদের আসক্তি থাকে (প্রতিদিন এক প্যাকেট বা তার বেশি)। গবেষণায় দেখা যায়, ৩৮ বছর বয়সে এসে নিকোটিনের প্রতি তারা দারুণ আসক্ত হয়ে পড়েছেন। ধূমপান ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল বেলস্কাই বলেন, জিনগত বৈশিষ্ট্যই তাদের ধূমপানে আসক্তির দিকে ধাবিত করে। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, কিশোর বয়স থেকেই তারা সিগারেট শুরু করেন। একপর্যায়ে প্রচুর নিকোটিনে অভ্যস্ত হয়ে যান। তবে জিনগত ঝুঁকির মধ্যে যারা রয়েছেন, তারা ঠিক কখন থেকে সিগারেটের অভ্যাস শুরু করবেন এটা ধারণা করা যায়নি। চেইন স্মোকার হয়ে ওঠার পেছনে দায়ী মূলত এ জিনগত ঝুঁকি। যেসব কিশোর ধূমপান শুরু করেছে, বয়স ১৫ হতেই তাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশের এতে নিয়মিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ১৮ বছর বয়সের মধ্যে তাদের ৪৩ শতাংশের প্রতিদিন এক প্যাকেট বা তার বেশি সিগারেট প্রয়োজন হতে পারে। অন্যদিকে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে যারা জিনগত ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের ২৭ ভাগ নিকোটিনে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারেন। আর ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ২২ শতাংশ সিগারেট ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হবেন। [1]
নিকোটিনের ক্ষতিকর দিক
গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিবছর বিশ্বে ৪ মিলিয়ন লোক মৃত্যুবরণ করছে এই তামাক সেবনের ফলে। মনে করা হচ্ছে তামাক সেবনের হার এভাবে চলতে থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে মৃত্যু এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতার প্রধান কারণ হবে তামাক সেবন। [2] পরোক্ষ ধূমপানে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। শিশুরা এমনিতে দ্রুত শ্বাস নেয়, তা ছাড়া তাদের শ্বাসতন্ত্রও অপরিণত, তাই সিগারেটের ধোঁয়া সহজেই শিশুদের শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে সমূহ ক্ষতিসাধন করে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শিশুর নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর তিন লাখ শিশু চারপাশের ধূমপানের কারণে নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিসে ভোগে। পরোক্ষ ধূমপানে শ্বেত রক্তকণিকা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, ফলে শিশু অল্পতেই অসুখে ভোগে। যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ১৭ হাজার শিশু বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পারিপার্শ্বিক ধূমপানের কারণে শিশুরও হৃদরোগ হতে পারে। এ ছাড়া মধ্যকর্ণের প্রদাহ, বধিরতা, মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, ঝিমুনি, অস্থিরতাও হতে পারে। শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ধূমপানের ধোঁয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু গণিত ও যুক্তিবিদ্যায় কম পারদর্শী তাদের বেশির ভাগেরই মা-বাবা ধূমপায়ী। এরা শিক্ষক ও সহপাঠীর সঙ্গে সঠিক আচরণ করতেও শেখে না। গর্ভাবস্থায় ধূমপান করলে সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কারণ গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে যে রক্ত বাহিত হয় এর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা কমিয়ে দেয় তামাকের কার্বন মনোক্সাইড। নিকোটিন গর্ভফুলের রক্ত-সরবরাহ হ্রাস করে। ফলে মায়ের শরীর থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে যেতে পারে না, তাই শিশুর বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়। এ ছাড়া ধূমপানের কারণে গর্ভপাত কিংবা অপরিণত শিশু জন্মাতে পারে। এই অপরিণত শিশুরা আবার সংক্রমণ বা অন্য কোনো কারণে মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে থাকে। মায়ের ধূমপানের কারণে অনাগত সন্তানের জন্মগত সমস্যাও হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবারে বাবা, বড় ভাই বা অন্য কেউ ধূমপান করলে শিশুরা সহজেই আকৃষ্ট হয়। [3]
তথ্যসূত্র
- "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৩।