দেশীয় আর্য

দেশীয় আর্য তত্ত্ব দাবি করে যে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা তথা ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহ  ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যেই গড়ে উঠেছিল। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা ইউক্রেনের তৃণভূমি অঞ্চল থেকে সৃষ্টি হয়ে পরবর্তীকালে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল- এই প্রতিষ্ঠিত ধারণাটির বিকল্প হিসাবে এই দেশীয় আর্য তত্ত্বটি গড়ে উঠছে। এই দেশীয় ধারণাটি আর্যরা সিন্ধু সভ্যতার বাহক এবং ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে ইন্দো-আর্য ভাষার গভীর যোগাযোগের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই তত্ত্বটি বৈদিক সভ্যতার থেকেও পুরাতন দিনের ইঙ্গিত করে, যখন থেকে হরপ্পা সভ্যতার পতন আরম্ভ হয়েছে। 

এটি ইন্দো-আর্য পরিযায়ী তত্ত্বের বিরুদ্ধাচারণ করে এবং বেদ পুরাণ অনুসারে বৈদিক যুগের সময়কাল পুনরায় নির্ণয় করার প্রস্তাব রাখে। এই দেশীয় আর্য ধারণাটি ভারত থেকে বাইরে ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়ায় পরিব্রজন তত্ত্বের সমর্থন করে। যেসব পণ্ডিতরা মনে করে ইন্দো- আর্য ভাষার জন্ম ভারতের বাইরের হয়েছে, এই ধারণাটি তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।[1][2][3]

রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় মতার্দর্শ এই ধারণাটিকে আরো সুদৃঢ় হয়েছে। কারণ এটি ভারতের এতিহ্য এবং ধর্মীয় ইতিহাস ও পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ইন্দো-ইউরোপ এবং আদিবাসী দ্রাবিড় সংস্কৃতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেক ভারতীয় পন্ডিতরাও এই তত্ত্বটির সমর্থন করেন। এই উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বিভেদটিকে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের দান এবং ভারতের জাতীয় ঐক্যের পথে বাঁধা বলে মনে করা হয়।

ঐতিহাসিক পটভূমি

ইন্দো-আর্য পরিযায়ী তত্ত্ব অনুসারে এই ইন্দো-আর্য জনগোষ্ঠী উত্তর-পশ্চিম ভারতে মোটামুটি ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু দেশীয় ধারণাটি এই সময়কালকে পুরোপুরি বিরোধিতা করে। সাম্প্রতিক কালে এই তত্ত্বটি জনসমক্ষে একটি বিতর্কের বিষয় হিসাবে উঠে এসেছে। 

ইন্দো-আর্য পরিযায়ী তত্ত্ব

ইন্দো-আর্য পরিযায়ী তত্ত্বটি বলে যে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষী মানুষেরা উরাল পর্বতের পাদদেশ থেকে পরবর্তীকালে ইউরোপ, পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ এবং পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। 

দেশীয় আর্য

হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কারের পরে "দেশীয়" তত্ত্বটি ধীরে ধীরে মজবুত হতে শুরু করলো। কারণ এটি বৈদিক সভ্যতার থেকেও প্রাচীন। এই তত্ত্ব অনুসারে, আর্যরা সম্পূর্ণ ভারতীয় এবং সিন্ধু সভ্যতা আসলে বৈদিক সভ্যতার একটি প্রাচীন সংস্করণ, চতুর্বেদ দুসহস্র খ্রিস্টপূর্বাব্দের থেকেও প্রাচীন, উত্তরের ইন্দো-ইউরোপীয় অংশ এবং দক্ষিণের দ্রাবিড় অংশের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, এবং ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলি বর্তমান বাসস্থান ভারত থেকেই উদ্ভুত হয়েছিল। 

এই ধারণাগুলি পুরাণ, মহাভারত এবং রামায়ণের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, কারণ এই গ্রন্থগুলিতে তদকালীন দেশীয় রাজ্যের রাজাদের নাম এবং তাদের বংশতালিকা দেওয়া আছে, যেগুলি ভারতের প্রাচীন ইতিহাস ক্রমানুসারে সাজাতে ব্যবহৃত হয়। 

নোট

তথ্যসূত্র

  1. Trautmann 2005, পৃ. xiii।
  2. Anthony 2007
  3. Parpola 2015
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.