দুদু মিয়া

পীর মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া (১৮১৯- ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৬২) ফরায়েজি আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনকারী। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পথ নির্দেশনা দানকারী ঐতিহাসিক ফরায়েজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়তুল্লাহ তার পিতা। বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের নিপীড়িত জনগণের আত্মশক্তির বিকাশ এবং ঔপনিবেশিক শক্তি ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের ইতিহাসে দুদু মিয়া ছিলেন এক অন্যতম মহানায়ক।[1]

পীর মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া
১৮১৯ - ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৬২
ডাক নাম: দুদু মিয়া
জন্ম তারিখ: ১৮১৯
জন্মস্থান: বাহাদুরপুর, মাদারিপুর, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু তারিখ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৬২
মৃত্যুস্থান: ঢাকা, ব্রিটিশ ভারত
জীবনকাল: ১৮১৯ - ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৬২
আন্দোলন: ফরায়েজি আন্দোলন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন

প্রারম্ভিক জীবন

মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া ১৮১৯ সালে অধুনা বাংলাদেশের মাদারিপুর মহাকুমার বাহাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী শরীয়তুল্লাহ। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পথ নির্দেশনা দানকারী ঐতিহাসিক ফরায়েজী আন্দোলনের অন্যতম নেতা । দুদু মিয়া প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার সুযোগ্য পিতার কাছ থেকে। মাত্র ১২ বছর বয়সে তাকে মক্কায় পাঠানো হয় জ্ঞানার্জনের জন্য। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, কলকাতা হয়ে মক্কা গমনের কালে বারাসাতে তার সাথে বাংলার আরেক মহান বীর নীল বিদ্রোহের নেতা তিতুমীরের দেখা হয়। তিনি মক্কায় পাঁচ বছর গভীর অধ্যায়ন করেন। ১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মক্কা থেকে বাড়ি ফিরে আসেন।[1][2]

ফরায়েজী আন্দোলনের নেতৃত্ব

১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে পিতা হাজী শরীয়তুল্লাহর ইন্তেকালের পর ফরায়েজী আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন দুদু মিয়া। তার অধীনে বাংলা ও আসামের নিপীড়িত জনগণ শক্তিশালী ভ্রাতৃত্ববোধে একতাবদ্ধ হয় ব্রিটিশদের বশংবদ অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য।ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে কোনরকম বিদ্রোহ ঘোষণা ছাড়াই দুদু মিয়া বাংলা ও আসামের নিপীড়িত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সম্পূর্ণ বিকল্প এক আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। তখনকার জমিদাররা তাদের প্রভু ইংরেজদের তুষ্ট করে প্রজাদের ওপর নানা নিপীড়ণমূলক কর আরোপ করে। দুদু মিয়ার নেতৃত্বে জনগণ এসব নিপীড়ণমূলক কর দিতে অস্বীকার করে।[1] ফরায়েজি আন্দোলনের বিরোধিতাকারী ইংরেজ নীল চাষী এবং জমিদারদের মোকাবিলা করার জন্য পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার ওপর জোর দিয়েছিলেন দুদু মিয়া। ফরায়েজি সমাজকে সংগঠনের লক্ষ্যে তিনি ফরায়েজি চাষীর স্বার্থরক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের গুরুত্বটি উপলব্ধি করেন। এটাকে সফল করার জন্য তিনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি একটি লাঠিয়াল বাহিনী গঠন করেন যার সাহায্যে বিদেশী সৈনিক ও জমিদার এবং নীলকরদের ভাড়াটে লোকদের সম্পূর্ণ ভাবে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়। এর ফলে প্রায় দুই দশক অর্থাৎ ১৮৩৮ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ফরায়েজি আন্দোলন অধ্যুষিত এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করে।[3]

মৃত্যু

১৮৫৭ সালে যখন গোটা ব্রিটিশ ভারতবর্ষে মহাবিদ্রোহের ডামাডোল চলছিলো ঠিক তখনি জমিদার ও নীলকররা দুদু মিয়া ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কান ভারী করে তোলে। তখন সরকার নাজুক অবস্থায় থাকায় দুদু মিয়া গ্রেফতার হন। পরে ১৮৫৯ সালে মুক্তি পেলেও অসৎ জমিদারদের উস্কানিতে আবারও বন্দী হন তিনি। কোন মামলা না থাকা সত্ত্বেও ১৮৬০ সাল পর্যন্ত তাকে কলকাতার অদূরে আলীপুরে বন্দী রাখা হয়। যখন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন তখন তার স্বাস্থ্য ভগ্নপ্রায়। মুক্তির অল্পকাল পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এর পর তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এখানেই ইন্তেকাল করেন তিনি। পুরান ঢাকার ১৩৭ নং বংশাল রোডে কবর দেয়া হয় তাকে। এখানেই চির নিদ্রায় শায়িত আছেন এই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী।[1][3]

তথ্যসূত্র

  1. ফরায়েজী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ দুদু মিয়া
  2. "দুদু মিয়ার ১৫০তম মৃত্যু বার্ষিকী"। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২
  3. "বাংলা পিডিয়া (Dudu Miyan)"। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.