দাগি বাবুই
দাগি বাবুই বা (ইংরেজি: Streaked Weaver) (Ploceus Manyar) বাবুই গোত্রের একটি পাখি। বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে এরা ডোরা বাবুই বা রেখা বাবুই পাখি নামেও পরিচিত। বিশিষ্ট পক্ষী বিশারদ অজয় হোম এই পাখির নাম দিয়েছেন – তেলে বাবুই।
দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, মধ্য প্রাচ্য সহ আরো কয়েকটি দেশে দাগি বাবুই দেখা গেলেও সাধারন বাবুই পাখির মতন এদের সব সময় দেখা যায় না।
বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায় (রেকর্ড অনুযায়ী - Asiatic Society Bird Vol.: 26) এই দাগি বাবুই পাখি সম্ভবত ১৫০ বছর পর এই প্রথম দেখা গেছে ২০১৮ সনের ২রা সেপ্টেম্বর ঢাকার উত্তর কেরানীগঞ্জে।
এই পাখি সাধারনত লম্বায় ১৪ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখিটির রঙ পরিবর্তন হয়ে থাকে। তখন এদের মাথার তালু সোনালী-হলুদ এবং মাথার দুইপাশে কালচে রঙ ধারণ করে। পিঠের রঙ হয়ে থাকে গাঢ় বাদামি। গলা থেকে নিচের দিকটায় থাকে উজ্জ্বল কালো রেখা। প্রজনন মৌসুম ছাড়া পুরুষের মাথার হলদে রঙ থাকে না। এ ছাড়া দেহের ডোরাদাগ গুলোও ধীরে ধীরে মলিন হয়ে যায়। তখন স্ত্রী পাখি আর পুরুষ পাখি দেখতে প্রায় একই রকম দেখায়। উভয় পাখির ঠোঁট হয়ে থাকে ত্রিকোণাকৃতির – বাদামি - কালচে।
দাগি বাবুই পাখির প্রধান খাবার হলো শস্যবীজ, ঘাসবীজ, ইত্যাদি। এদের প্রজনন সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাস।এরা বাসা বেঁধে থাকে কাশবন কিংবা হোগলাবনে। সাধারনত ২-৪টি ডিম পেড়ে থাকে। এদের ডিম ফুটতে সাধারনত সময় লাগে ১৩ থেকে ১৫ দিন।
এই পাখি বাবুই গোত্রের পাখি হলেও এদের দেশী বাবুইয়ের মতন সচরাচর দেখাই যায় না। এরা সাধারণত বিচরণ করে থাকে পাহাড়ি এলাকা কিংবা জলাভূমির আশপাশের কাশবন বা নলখাগড়ার বনে, যেখানে পানির সহজ লভ্যতাও আছে। দাগি বাবুই স্বভাব চরিত্রে দেশি বাবুই পাখিদের মতোনই। সারাদিন নেচে গেয়ে কাটায়। বাসা বাঁধে সাধারন বাবুই পাখিদের মতনই, তবে এদের বাসা আকারে বেশ ছোট। এরা তাল গাছে বাসা বাঁধে না- বাসা বেঁধে থাকে কাশবন কিংবা নলখাগড়ার বনে। প্রজনন মৌসুমে এদের কণ্ঠস্বর বেশ মধুর হয়ে থাকে। তখন এরা খুব সুন্দর সুরে ডেকে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে এরা সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। এদের অস্তিত্ব এখন সত্যি হুমকীর মুখে। জলাভূমি গুলোর আশপাশের ঝোপঝাড় উজাড় হওয়াতে, কাশবন সহ এই ধরনের সব বন কেটে ফেলাতে এদের সংখ্যা কমছে অতি দ্রুত। এদের প্রজননে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে এই পাখি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে আর খুব বেশি দিন নেই।