তামিম বিন হামাদ আল থানি

উপসাগরীয় ক্ষুদ্র অথচ ধনী দেশ কাতারের আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানি তার ৩৩ বছর বয়সী পুত্রের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর  করেছেন। কাতারের নতুন আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি আরব অঞ্চলে কনিষ্ঠতম শাসক হিসেবে ইতোমধ্যে অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন।

২০০৩ সালে আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা তার দ্বিতীয় স্ত্রী শেখ মোজা বিনতে নাসেরের গর্ভজাত দ্বিতীয় পুত্র তামিমকে ‘ক্রাউন প্রিন্স’ অর্থাৎ  তার সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। তামিমের বড়ো ভাই শেখ জসিম বিন হামাদ আল থানি সরে দাঁড়ালে তামিমই শাসকের লাইনে চলে আসেন। তখন থেকেই পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত তামিম বিন হামাদ আমিরাত অর্থাৎ দেশের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ডে শরিক হতে শুরু করেন।

আমির হওয়ার আগে তামিম কাতারের সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চীফ ছিলেন। তিনি ২০৩০ ভিশন প্রকল্পের সভাপতি এবং ‘কাতার ২০২২ সুপ্রিম কমিটি’র প্রধান-যে কমিটি, আমিরাতে ‘২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ’ অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্বে নিয়োজিত। এছাড়া তিনি কাতার ইনভেষ্টমেন্ট অথোরিটিসহ দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত।

গত মঙ্গলবার কাতারি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রদত্ত ভাষণে শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানি বলেন, ‘এখন নতুন প্রজন্মের ক্ষমতা গ্রহণের সময়। আমি শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির কাছে ক্ষমতা অর্পণ করছি। আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে তামিম অত্যন্ত দায়িত্বশীল, আস্থাভাজন এবং দায়িত্ব পালন ও লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম।’ তিনি বলেন, তিনি কখনোই তার নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতা গ্রহণ করেননি বরং জাতির কল্যাণে তা করেছেন।

১৯৯৫ সালে নিজের পিতাকে অপসারণ করে হামাদ দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। কাতারি আমির কর্তৃক শান্তিপূর্ণভাবে এই ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকটা অবাক করেছে। কারণ উপসাগরীয় আরব দেশগুলোতে সাধারণত: মৃত্যুর কিংবা প্রাসাদ অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়েই ক্ষমতার পালাবদল ঘটে।

উল্লেখ্য, ক্ষমতা ত্যাগকারী আমির শেখ হামাদ তার ক্ষুদ্র উপসাগরীয় দেশটিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব সৃষ্টিকারী একটি দেশে পরিণত করেন। তিনি দেশের তেল ও গ্যাস থেকে আহরিত বিপুল অর্থ দেশে ও বিদেশের বড়ো বড়ো প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন।  আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুসারে অর্থনৈতিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাতারের মাথা পিছু জিডিপি বিশ্বে সর্বোচ্চ।

শেখ হামাদের  শাসনাধীনে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে। বর্তমানে রাজধানী দোহার নিকটে একটি বিশাল মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে। আরব বসন্তে যখন অন্যান্য আরব রাষ্ট্র ভীত, তখন কাতার এটাকে তার একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। দেশটি বিভিন্ন আন্দোলনে অর্থ সরবরাহ করে বিশেষভাবে লিবিয়ায়। বর্তমানে সে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অর্থ সহায়তা দিচ্ছে।

প্রতিবেশী দেশগুলো বিশেষ ভাবে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের  সাথে কাতারের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। আঞ্চলিক প্রভাবশালী ইসলামী দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে কাতারের সম্পর্কের কারণে তারা ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি কাতার তার কূটনৈতিক মর্যদা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.