তাম-এ গিলাস
তাম-এ গিলাস (ফার্সি: طعم گيلاس, ইংরেজি নাম: Taste of Cherry) আব্বাস কিয়ারোস্তামি পরিচালিত ইরানী চলচ্চিত্র যা ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায়। ছবিটিতে minimalism এর সুস্পষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিয়ারোস্তামি এই ছবির জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাম দোর অর্জন করেন।
কাহিনী সূত্র
জনাব বাদি এক মধ্যবয়স্ক ইরানী লোক। তিনি তেহরানের আশেপাশে গাড়ি চালিয়ে যে কোন একজন মানুষ খুঁজছেন যে তাকে একটি কাজ করে দিতে পারবে। বিনিময়ে তাকে অনেক অর্থ দেবেন। একসময় বোঝা যায় কাজটি হল, তাকে সমাধিস্থ করা। তিনি সেই রাতেই আত্মহত্যা করবেন এবং মারা যাওয়ার পর তাকে সমাধিস্থ করার জন্যই কাউকে খুঁজছেন। ইতিমধ্যে এক পাহাড়ী বিরানভূমিতে তিনি নিজের কবর খুঁড়ে ফেলেছেন। তার মানে ঐ ব্যক্তির কাজ হবে কেবল ভোরে এসে তাকে মাটি চাপা দিয়ে যাওয়া। তিনি অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে এই কবরেই শুয়ে থাকবেন। একসময় মারা যাবেন। আর ভোরে এসে তাকে ঐ ব্যক্তি মাটি চাপা দিয়ে যাবে। কবরের পাশে কথামতো অর্থ-কড়ি সহ তার গাড়ি থাকবে। মাটি চাপা দেয়ার পর ঐ ব্যক্তি গাড়ি নিয়ে চলে যাবে।
ঘুরতে ঘুরতে তিনি তিন জনের দেখা পান। প্রথম জন, কুর্দি সৈনিক যে কবর দেখা মাত্রই দৌড়ে পালায়। সে মনে করেছিল লোকটি পাগল হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ব্যক্তি ইরানী মাদ্রাসার এক আফগান ছাত্র। ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যা নিষেধ এই ছাত্র তাকে সে কথা বোঝানোর চেষ্টা করে। তৃতীয় জন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স্ক অধ্যাপক। এই অধ্যাপক তাকে আত্মহত্যা করতে নিরুৎসাহিত করে। এই ব্যক্তি বলে, সে নিজেও একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। বেঁচে যাওয়ার পর সে বুঝেছিল জীবন অনেক মূল্যবান। সে আত্মহত্যার জন্য বেরিয়েছিল খুব ভোরে লম্বা এক দড়ি নিয়ে। তারপর সে উঠে পড়ে চেরী গাছে দড়ি বাঁধতে। কৌতুহলবশত সে খেয়ে ফেলে একটি চেরী ফল তারপর আরেকটি তারপর আরো একটি এভাবে সকাল হয়ে যায় সুমিষ্ট চেরী ফল খেতে খেতে। সকালে স্কুলগামী বাচ্চারা আসে চেরীগাছের নিচে, তাকে বলে গাছটি ঝাকিয়ে দিতে। বৃষ্টির মত চেরী ফল পড়তে থাকে তখন, বাচ্চারা খুশি হয় পেটপুরে খায়। তারপর সে লোক ভাবে শুধুমাত্র চেরীফল খাওয়ার জন্য হলেও পৃথিবীতে বাঁচা যায়! তারপর তার স্ত্রীর জন্য সে কিছু চেরীফল নিয়ে বাসায় ফিরে যায়।তারপরও আত্মহত্যা করতে চাইলে অধ্যাপক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।
বাদি অনেক সময় ধরে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে। গভীর রাতে একসময় কবরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। তখনই বজ্রপাত শুরু হয়। বাদি কবর থেকে আকাশ দেখতে থাকে। সে মারা গিয়েছে কি-না তা পরিষ্কার হয়নি। সিনেমা শেষ হয়, ভোরের দৃশ্য দিয়ে। দেখা যায়, ভোরে সেই বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকা। সিনেমার শেষ দৃশ্যে "তাম-এ গিলাস" সিনেমারই শুটিং হতে দেখা যায়।
প্রতিক্রিয়া
অধিকাংশ সমালোচকই প্রশংসা করেছেন। রিভিউ সংগ্রাহক রটেন টম্যাটোস-এ এর রেটিং ৮১% অর্থাৎ শতকরা ৮১ জন সমালোচকই প্রশংসা করেছেন। ক্রাইটেরিয়ন কালেকশন ১৯৯৯ সালের ১লা জুন এটিকে তাদের এক্সক্লুসিভ ফিল্ম কালেকশনের অন্তর্ভুক্ত করেছে।