ডাংগুলি

ডাংগুলি বাংলাদেশউত্তর ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় গ্রামীণ খেলা। [1] সাধারণত কিশোর বয়সী ছেলেরা এই খেলা খেলে। উত্তরভারতে এর নাম গোলি ডাণ্ডাক্রিকেট আসার পর এর জনপ্রিয়তা অনেকটাই ম্রীয়মান হয়ে এসেছে। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে খেলাটি ড্যাংবাড়ি, গুটবাড়ি, ট্যামডাং, ভ্যাটাডান্ডা ইত্যাদি নামে পরিচিত।

খেলার উপকরণ দু'টি- একটি দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা লাঠি (ডাং বা ডাণ্ডা), অপরটি গুলি যা নামে গোল মনে হলেও গোল নয়, আসলে প্রায় দুই ইঞ্চি লম্বা আরেকটি ছোট লাঠি যার দুই প্রান্ত কিছুটা সূঁচালো করা থাকে।

ডাংগুলি বাংলার সর্বাঞ্চলীয় একটি জনপ্রিয় খেলা। প্রধানত কম বয়সের ছেলেরা এটি খেলে থাকে; মেয়েরা সাধারণত ডাংগুলি খেলে না। দুই থেকে পাঁচ-ছয়জন করে দুই দলে বিভক্ত হয়ে এটি খেলতে পারে। দেড় হাত লম্বা একটি লাঠি এবং এক বিঘত পরিমাণ একটি শক্ত কাঠি খেলার উপকরণ। প্রথমটিকে ডান্ডা ও দ্বিতীয়টিকে গুলি বা ফুত্তি বলা হয়। প্রথমে খোররলা মাঠে একটি ছোট গর্ত করা হয়। যারা দান পায় তাদের একজন গর্তের ওপর গুলি রেখে ডান্ডা মেরে সেটিকে দূরে ফেলার চেষ্টা করে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা চারিদিকে দাঁড়িয়ে থেকে সেটিকে লুফে নিতে চায়। তারা সফল হলে ঐ খেলোয়াড় আউট হয়, আর ধরতে না পারলে গর্তের ওপর রাখা ডান্ডা লক্ষ করে ছুড়ে মারতে হয়। ছোঁয়া গেলে সে দান হারায়, আর তা না হলে সে ডান্ডা দিয়ে তুলে গুলিকে আবার দূরে পাঠায়। তারপর গুলি থেকে গর্ত পর্যন্ত ডান্ডা দিয়ে মাপতে থাকে। সাত পর্যন্ত মাপের আঞ্চলিক নাম হলো: বাড়ি, দুড়ি, তেড়ি, চাঘল, চাম্পা, ঝেঁক, মেক। এরূপ সাত মাপে এক ফুল বা গুট এবং সাত ফুলে এক লাল হয়। ভাঙা ফুলের ক্ষেত্রে যেখানে শেষ হয়, পরের খেলা সেখান থেকে শুরু হয়। বাড়ি, দুড়ি ইত্যাদি প্রতিটি মারের পৃথক পৃথক পদ্ধতি আছে। আউট না হওয়া পর্যন্ত একজন খেলোয়াড় খেলতে পারে, আউট হলে দ্বিতীয় একজন একই পদ্ধতিতে খেলবে। এভাবে সবাই আউট হয়ে গেলে বিপক্ষ দল দান পেয়ে খেলা শুরু করে। বস্তুত এ খেলাটি বর্তমান যুগের ক্রিকেটের গ্রাম্য সংস্করণ এবং ব্যাট ও বল ডান্ডা ও গুলির সমতুল্য। এক্ষেত্রেও ক্যাচ হলে অথবা ডান্ডার আঘাত করে আউট করার বিধান আছে।

খেলার নিয়মাবলী

ডাণ্ডা দিয়ে গুলির সূচালো প্রান্তে মারলে তা লাফিয়ে ওঠে। তার পর সেই লাফানো অবস্থায় তাকে দ্বিতীয় বার ডাণ্ডা দিয়ে মেরে অনেক দূরে পাঠাতে হয়।

বিপদ

গুলিটি চোখে লেগে অনেক সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয়বার মারার পর এর তীব্র বেগ ও সূচালো প্রান্তের চোট এই খেলাকে দুর্ঘটনাপ্রবণ করেছে।

তথ্যসূত্র

  1. বাংলাদেশের খেলাধুলা, রশীদ হায়দার, বাংলা একাডেমী
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.