ঠোঙা

ঠোঙা কাগজ বা শালপাতা জাতীয় পাতলা জিনিস দিয়ে তৈরি খুব হাল্কা পাত্র বা থলি। ঠোঙা সাধারণ দৃঢ় পাত্রের মত অনমনীয় নয়, আবার থলের মতও নয়, অভিকর্ষের বিরুদ্ধে নিজের আকৃতি বজায় রাখতে পারে (যা কাপড়ের থলে পারেনা)। কাগজের ঠোঙা (পেপার ব্যাগ) সহজেই ভাঁজ করা যায়। শালপাতার ঠোঙা অপেক্ষাকৃত শক্ত এবং এর উপর কলাপাতা বা অরেকটি শালপাতার টুকরো দিয়ে তৈরি ঢাকনা থাকতে পারে। গরীব দেশে সাধারণতঃ পুরোনো খবরের কাগজ পুনর্ব্যবহার করার অন্যতম জনপ্রিয় উপায় হল তা দিয়ে ঠোঙা বানানো।

কাগজের ঠোঙা

কাগজের ঠোঙা

প্লাস্টিকের প্যাকেট আসার অনেক আগে থেকেই কাগজের ঠোঙার ব্যবহার ছিল। এবং পরিবেশ দূষণ কম করবার জন্যে প্লাস্টিকের ব্যবহারাবার কম করার চেষ্টা হচ্ছে, তাই কাগজের ঠোঙার ব্যবহার আবার বাড়ছে। কাগজের ঠোঙা নানা আয়তনের ও অন্যপাতের হয়। যেমন মুড়ির ঠোঙা বলতে সাধারণতঃ বোঝায় ৫০০ গ্রাম মুড়ি ধরতে পারে এমন আয়তনের ঠোঙা। চানাচুর বা ঝালমুড়ির ঠোঙা বলতে বোঝায় ১০০ গ্রাম ঝালমুড়ি যাতে ভরে ট্রেনে ঝালমুড়ি-ওয়ালারা বিক্রি করে সেই রকম ঠোঙা। খবরের কাগজের দৃঢ়তায় মুড়ির ঠোঙার থেকে বেশী বড় ঠোঙা বানালে সেটা তার ভেতরে জিনিস ধরবার মত মজবুত হবার সম্ভাবনা কম। কাগজের ঠোঙার সুবিধে হল একে আঠা দিয়ে সহজেই জোড়া যায়। কিন্তু অসুবিধে হল ভিজে গেলে কাগজের ঠোঙা খুব দুর্বল হয়ে ছিড়ে যায়।

কাগজের ঠোঙা বানাবার পদ্ধতি

কাগযের ঠোঙা নানা ভাবে বানানো যায়। সাধারণতঃ গঁদের আঠা বা ময়দার আঁঠা দিয়ে ভাঁজ করা কাগজের খোলা প্রান্তগুলি জুড়ে কাগজের ঠোঙা বানানো হয়। এই রকম একটি জনপ্রিয় পদ্ধতির প্রধান ধাপগুলি এখানে সংক্ষেপে বলা হলঃ

  1. প্রথমে আয়তক্ষেত্রাকার একটি কাগজের টুকরোর দুটি বিপরীত প্রান্ত আঠা দিয়ে জুড়ে চোঙা (সিলিণ্ডার) আকৃতির করে তারপর চেপ্টে দেওয়া হয়।
  2. তারপর তার যেকোন একটি খোলা দিককে নিম্ন বর্ণিত পদ্ধতিতে বন্ধ করা হয়ঃ
    1. চোঙা আকৃতির কাগজটির ভাঁজ করা প্রান্তের এই খোলা মুখের দিকের কোনাদুটিকে মুড়িয়ে চোঙার ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। ততটাই প্রবেশ করানো হয় যাতে দুই দিক থেকে প্রবেশ করানো ধারদুটি কাছা কাছি এসে যায়।
    2. একটি ছোটো আয়ত ক্ষেত্রাকার কাগজের টুকরো নীচে থেকে আঠা দিয়ে আটকে দিয়ে এই প্রান্তদুটিকে একে অপরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়।
    3. এবারে চাপ্টা থেকে আবার চোঙা আকারে নিয়ে এলে আর্ধেক বন্ধ করা মুখটির আটকানো কোণাদুটির সঙ্গে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত অন্যদুটি কোণাকে উপরোক্ত কাগজের টুকড়োর উপরে (বাইরে দিয়ে) আঠা দিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়। ঠোঙা তৈরী।

ঠোঙা বাঁধার পদ্ধতি

ঠোঙা নানা ভাবে বাঁধা যায়। কাগজের ঠোঙার বিশেষত্ব হল এর নমনীয়তার জন্য কম ভর্তি ঠোঙার খালি অংশকে সম্পূর্ণ মুড়িয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু প্রায় ভর্তি হলে ঠোঙার খোলা মুখটিকে আয়ত ক্ষেত্রাকার করে প্রায় সেই আকারের একটি কাগজের টুকরো ভিতরে ভরা জিনিসের উপরে দিয়ে দিয়ে খোলা মাথাটিকে ঢেকে দেওয়া হয়। তার পর এর উপরে জেগে থাকে ঠোঙার মুক্ত প্রান্তকে এই কাগজের উপর দিয়ে মুড়িয়ে সুতা বা পাটের দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়।

শালপাতার ঠোঙা

শঙ্কু আকৃতির ও বাটি আকৃতির শালপাতা ঠোঙা ফুচকাওয়ালা, ভেলপুরীওয়ালা ইত্যাদিরা নিয়মিত ব্যবহার করে থাকেন বিশেষ করে যখন এর মধ্যে কোন তরল খাদ্য পরিবেশন করা হয়। এগুলি আঠা দিয়ে আটকানো নয়। এগুলি ছোট কাঠি দিয়ে গাঁথা থেকে (বা অনেক সময় স্টেপ্ল করা থাকে)। শক্ত করার দরকার হলে বা বেশীক্ষণ তরল ধরে রাখবার হলে একাধিক স্তরে পাতা ব্যবহার করা হয়।

এগুলি ভাঁজ করলে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই খোলা অংশ বন্ধ করার জন্য আলাদা কলাপাতা বা শালপাতার ঢাকনা ব্যবহার করা হয়।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.