জোড় বাংলা মন্দির (বিষ্ণুপুর)
জোড়-বাংলা রীতির মন্দির স্থাপত্য এপার বাংলা ও ওপার বাংলায় বেশ কিছু থাকলেও বিষ্ণুপুরের জোড়বাংলা আপন স্থাপত্য রীতির বৈশিষ্ঠে সমুজ্জ্বল।[1] জোড়বাংলা ম্পন্দিরে যে ‘বাংলার ঘরের চাল’এর আদল তা সমগ্র বঙ্গে প্রচলিত ।জোড়বাংলা মন্দিরে প্রাপ্ত লিপি অনুসারীই মন্দিরটি ৯৬১ মল্লাব্দে(১৬৫৫ খ্রীস্টাব্দ) মল্ল রাজ রঘুনাথ সিংহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।দু’খানি দুচালা ‘বাংলার কুটির ঘর পাশাপাশি জুড়ে দিলে যা হয় তাই জোড়বাংলা।’বাংলার মন্দির নির্মানের অপূর্ব নিদর্শন এই ‘জোড়বাংলা’। মাটি ইট দিয়ে এর দেওয়াল তৈরী হয়েছে। ভিতরে ও বাইরে মাটির দেওয়ালের উপ ভার্স্কয্য খচিত চিত্র দিয়ে সুসজ্জিত।জোড়বাংলা মন্দিরের গঠন শৈলী বর্ণনা করে “Archaeological survey of India” রায় দিয়েছে যে এই মন্দির টি “কেষ্টরায়”মন্দির নামেও পরিচিত। দক্ষিণ মুখী মন্দির টি বর্গাকার ভিতের উপর গড়ে উঠেছে।দুটি ‘দো-চালা’ যুক্ত হয়ে চারচালা শিখরের রূপ নিয়েছে। জোড়-বাংলা মন্দির টি বহিঃ ও অভ্যন্তর দেওয়ালের সূক্ষ্য এবং অলংকৃত টেরাকোটার কাজ লক্ষ করা যায়।এই মকন্দির টির ভেতরের দৈর্ঘ ১১.৮ মিটার,প্রস্থ ১১.৭ মিটার এবং গঠনগত উচ্চতা ১০.৭ মিটার।এই মন্দিরটির সম্মুখ দ্বার এর চারপাশের তিনটি দেওয়াল চমৎকার টেরাকোটার কাজ দ্বারা সুসজ্জিত।শুধুমাত্র ছয় হাত যুক্ত শ্রী চৈত্যনের প্লাস্টার করা চিত্র এই মন্দিরের ভিতরে পাওয়ে যায়,যদিও তিনি পুজ্য নন। বিষ্ণুপুরের জোড়-বাংলা মন্দিরের পশ্চিম দেওয়ালে ভীষ্মের শরশয্যা ও বানক্ষেপনরত অর্জুনের অতি উৎকৃষ্ট একটি ভাস্কর্য নিবন্ধ আছে। অর্জুনের লক্ষ্যভেদ প্রভৃতি চির পরিচিত মেটিফ গূলির প্রচূর ব্যবহার হয়েছে।জোড়-বাংলা মন্দিরে যুদ্ধক্ষেত্রের যে অগনিত ভাস্কর্য সন্নিবিষ্ট হয়েছে সেগুলি সম্ভবত মল্লরাজাদের শৌর্যের পরিচায়ক নয়।কেননা প্রায় সর্বত্রয় চতুরঙ্গ বাহিনীর যে খন্ডচিত্র গুলি উৎকীর্ন হয়েছে তার আকার প্রকার দেখে মনে হয় – সেগুলি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের খন্ড বিচ্ছিন্ন চিত্র কল্প।প্রসঙ্গত বিষ্ণুপুরের জোড়-বাংলা মন্দিরে ও অন্য বহু ক্ষেত্রে যে চিত্রন দেখা যায় সেগুলি মল্ল- ক্ষাত্র বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা সন্দেহ।মল্লরাজগ্ণ নৌবলে বলীয়ান কিলেন এমন কোন প্রমাণ নেই।এগুলি সম্ভবত অতীত কালের বাঙ্গালীর নৌ যুদ্ধে নিপুনতার পরিচায়ক।মল্লরাজা যে নিপুন যোদ্ধা ছিলেন এবং এ বিষ্যে নিয়মিত যগ দিতেন সে বিষ্যে সন্দেহ নেই।জোড়-বাংলা মন্দিরে সে জন্য যথেষ্ট সংখ্যায় শিকারের চিত্রও সন্নিবিষ্ট হয়েছে।শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্দে বর্ণিত কৃষ্ণলীলা এখানে মন্দির টেরাকোটার মূল উপজীব্য। জোড়-বাংলা মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের গোষ্ঠলীলা অসুর বধ থেকে মথুরা যাত্রা,কংস বধ চিত্রিত হয়েছে।জোড়-বাংলা মন্দিরের দক্ষিণ দিকে কৃষ্ণলীলা আর তারই সমান্তরালে পশ্চীমের দেওয়ালে রামকথা।রাম জন্ম থেকে আরম্ভ করে তারকা বধ এবং রামের বিবাহ।এই মন্দিরে বাৎসল্য রসের অভিব্যক্তি লক্ষ্য মকরা যায়।একই ভাবে রামকথা আর কৃষ্ণকথা ব্যক্ত হয়েছে একই রস পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত করে।বাৎসল্য রসের অভিব্যক্তি পরিস্ফুট করার জন্যে ,মাতৃক্রোড়ে রাম-লক্ষণ-ভরত-শত্রুঘ্নকে যেমন (পশ্চীম দেওয়ালে)চিত্রিত করা হয়েছে,দক্ষিণের(অগ্রবর্তী দো’চালায়) প্রবেশ পথের ডানদিকে মাতৃক্রোড়ে কৃষ্ণ বলরামও উৎকীর্ণ হয়েছেন।এমনকি পশ্চীমের দেওয়ালে ভয়ঙ্কর দেবীযুদ্ধের নীচে গণেশ জননী,স্কন্দমাতার,বাৎসল্যরসাত্মক চিত্র গুলি সন্নিবেশিত হয়েছে।অষ্টমাতৃকা মূর্তিও চিত্রিত হয়েছে।এখানে সমসাময়িক ঘটনা রূপে পর্তুগীজ যুদ্ধ যেমন চিত্রিত হয়েছে,মোঘল সামন্তদের আভিজাত্য ও বিলাস ব্যসনও তেমনি চিত্রিত হয়েছে।
তথ্যসূত্র
- [(ছবি) ইতিহাসের জীবন্ত দলিল পশ্চিমবঙ্গের এই স্থাপত্যগুলিhttp://bengali.oneindia.com/travel/historical-monuments-west-bengal-006458.html (ছবি) ইতিহাসের জীবন্ত দলিল পশ্চিমবঙ্গের এই স্থাপত্যগুলিhttp://bengali.oneindia.com/travel/historical-monuments-west-bengal-006458.html]
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)।|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)