জিন প্রকৌশল

ভিন্ন প্রকৃতির একাধিক  DNA অণু পরস্পর সংযুক্ত করে জৈব পদ্ধতিতে কোনো জীবকোষে বা জীবদেহে প্রবেশ করানোর কৌশলকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলে। প্রাকৃতিকভাবেও এই প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হতে পারে। তবে দ্রুত ও অতিরিক্ত ফলাফল লাভের জন্য কৃত্রিমভাবে এক প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়। উচ্চতর জীবের ক্ষেত্রে এই কৌশল ব্যবহারের অর্থ হচ্ছে এমন কোনো বৈশিষ্ট্য ধারক জিন প্রবেশ করানো, যা আগে উক্ত জীবের দেহে ছিল না। একে অনেক সময় (Genetic modification) বলা হয়।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering)

উদ্ভিদ প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহার করে ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদদেহের মধ্যে জিন স্থানান্তর করা সম্ভব। তবে তা কেবল  কাছাকাছি সম্পর্কযুক্ত প্রজাতির উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সম্ভবপর হয়।  এর ফলে অনেক দূর সম্পতর্কীয়  উদ্ভিদে প্রয়োজনীয় জিন প্রবেশ করানো যায় না। অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন জিন প্রবেশ করানোর জন্য এই ধরনের প্রজননন প্রতিবন্ধক কৃত্রিম উপায়ে অতিক্রম করা বিশেষ জরুরি। বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে যেসব জিন স্থানান্তর করা প্রয়োজন, সাধারণত সেগুলোর নির্বাচনযোগ্য দেহরূপ থাকে না। এজন্য এদের কোনো সংযুক্ত জিন নির্দেশকের সাহায্যে চিহ্নিত করতে হয়।

প্রাণিকোষের জিন প্রকৌশল প্রয়োগের সমস্যা অন্যরকম। অবশ্য এক্ষেত্রে কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রর্যায়ে জিন পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে। মানবদেহের নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের একটি বিশেষ জিন শনাক্ত করার জন্য কোষীয় মিলন পদ্ধতি অনেক ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণত ইঁদুরের কোষের মধ্যে মানবকোষের মিলন ঘটালে মানবকোষের ক্রোমোজোম বিলীন হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত একটি ইঁদুর কোষে  একটি মানবক্রোমোজোম থেকে যায়। এই কোষটি পরীক্ষা করে উক্ত মানবক্রোমোজোম কোন ধরনের প্রোটিন তৈরি করছে তা শনাক্ত করা যায়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জীবকোষে জিন প্রয়োগের এই প্রক্রিয়াকে Genetically Modified Organism (GMO) বলা হয়। ১৯৭৩ সালে সর্বপ্রথম ব্যাক্টেরিয়ার মধ্যে, ১৯৭৪ সারে ইঁদুরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতিতে ১৯৮২ সালে ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম ব্যাক্টেরিয়া বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয় এবং খাদ্য উৎপাদনে প্রয়োগ করা হয় ১৯৯৪ সালে।

এই প্রযুক্তির অন্তর্গত বিষয়সমূহ যেমন-জেনেটিক কোড, জেনেটিক ম্যাপিং, জেনেটিক অ্যাকশন, জেনেটিক হোমোসটাসিস প্রভৃতি গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাপকভাবে জড়িত। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও সম্পপূরক বিষয়সমূহে জিনের উপাদানসমূহ বিশ্লেষণ ও এদের রৈখিক সজ্জাবিন্যাস, ক্রোমোজোম, DNA, RNA ইত্যাদির গঠন, বৈশিষ্ট্য ও কার্যাবলি, জিনের মাত্রা বা অবস্থানের পরিবর্তন, জিনের ক্রোমোজোম বা লিংকেজ্ গ্রূপ নির্ধারণ, দেহরূপে ও বংশগতির ক্ষেত্রে তার প্রভাব, জিনের অনুলিখন ও পরিব্যাপ্তি, পলিপেপটাইড ও প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে গবেষণা ও বিশ্লেষণ, গবেষণালব্ধ তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ প্রভৃতি কাজে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও রোগপ্রতিরোধে, টিকা, ভ্যাকসিন, এন্টিবডি ও ভিটামিন তৈরিতে, এমনকি ক্যামোথেরাপি, রেডিওথেরাপি প্রভৃতি কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। উৎপাদন শিল্পে ব্যাকটেরিয়া ফারম্যানটেশন, মাননিয়ন্ত্রণে ও খাদ্যসংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতি কাজেও অনেক সময় এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। বর্তমানে কৃষি শিল্পে কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন খাদ্য ও শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ, রাসায়নিক ও জৈবসারের গুণাগুণ বিশ্লেষণ, জমির  উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য গবেষণা, ভিন্ন জাতের বা ভিন্ন সময়ে উৎপাদিত ফসল, ফলমূল সংকরায়ন করে পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি ও সারাবছর উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রভৃতি কাজে এই প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।[1]

১৯৭২ সালে পল বার্গের রিকম্বিনেন্ট আবিষ্কার করেন ডিএনএ টেকনোলজি বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর । বায়োটেকনোলজি ব্যবহার করে এক কোষ থেকে সুনির্দিষ্ট জিন নিয়ে অন্য কোষে স্থাপন ও কর্মক্ষম করার ক্ষমতাকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলে। [2]

প্রাণ রসায়ণের সবচেয়ে আধুনিক এ শাখায় জীবনকে সংজ্ঞায়িত করা হয় অণু-পরমাণু পর্যায়ে, একে বলা হয় "The Molecular Logic Of Life"। A-T-C-G এই মাত্র চারটি হরফে লেখা এ বিষয়কে বলা হয় Language of GOD। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত ট্রান্সজেনিক (উন্নত বৈশিষ্টধারী) উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টিতে কাজ করে। নামের শেষে ইঞ্জিনিয়ারিং যোগ করার কারণ হচ্ছে, জীববিজ্ঞানের কেবলমাত্র এ শাখাটিতেই নিজের ইচ্ছামত ডিজাইন করে একটি প্রাণী সৃষ্টি করা যায়, ডিজাইন করা যায় নিজের পছন্দের ই.কোলাই যে কিনা নিজের কথামত উঠবে বসবে। কাজটা অনেকটা একটা কম্পউটার প্রোগ্রাম ডিজাইন করার মতো।

উত্স

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বায়োটেকনোলজির একটি ক্ষুদ্র অংশ। বায়োটেকনলজির অন্যান্য শাখা গুলো হল মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োস্ট্যাটিসটিক, ইমিউনোলজি, ওর্গানিক কেমিস্ট্রি, এনজাইমোলজি, ইনসিলিকো (কম্পিউটেশনাল) বায়োলজি, টিস্যু কালচার ইত্যাদি।

বাংলাদেশে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং

বাংলাদেশের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হিসেবে ধরা হয় পাট এবং এর পরজীবী ছত্রাকের জিন নকশা আবিষ্কার।

তথ্যসূত্র

  1. লেখক: নরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, মনির আহমেদ, ও আলাউদ্দীন আল আজাদ (২০১৯)। উচ্চমাধ্যমিক তথ্যপ্রযুক্তি। ঢাকা: জাহান পাবলিকেশন।
  2. উচ্চ মাধ্যমিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বই by প্রকাশ কুমার দাস ও প্রকৌ. মোঃ মেহেদী হাসান (পৃষ্ঠা-৫৫)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.