জাপানি এনকেফালাইটিস

জাপানি এনকেফালাইটিস (ইংরেজি: Japanes encephalitis) হল মশার দ্বারা সংক্রামিত একটি প্রাণীজনিত রোগ (Zoonotic disease)। কিউলেক্স মশাে এই রোগ ছড়ায়। এই রোগের কারক ভাইরাস টির নাম হ’ল জাপানি এনকেফালাইটিস ভাইরাস। প্রথমে জাপানে সনাক্ত হয়েছিল বলে এই রোগকে জাপানি এনকেফালাইটিস বলে নামকরণ করা হয়েছিল।[1] এই ভাইরাসটি ভাইরাসের 'Flaviviridae' পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এটি ভাইরাস৷

জাপানি এনকেফালাইটিস
শ্রেণীবিভাগ এবং বহিঃস্থ সম্পদ
বিশিষ্টতাসংক্রামক রোগ[*]
আইসিডি-১০A৮৩.০
আইসিডি-৯-সিএম০৬২.০
ডিজিসেসডিবি৭০৩৬
ইমেডিসিনmed/3158
মেএসএইচD০০৪৬৭২ (ইংরেজি)

জাপানি এনকেফালাইটিস
ভাইরাসের শ্রেণীবিন্যাস
গ্রুপ: ৪র্থ গ্রুপ ((+)ssRNA)
পরিবার: Flaviviridae
গণ: Flavivirus
প্রজাতি: জাপানি এনকেফালাইটিস ভাইরাস

গরু ও বন্য বগলীজাতীয় পাখি (herons)র দেহে এই রোগের বীজাণু সঞ্চিত (reservoir) হয়ে থাকে৷ কিউলেক্স মশার দুটা প্রধান প্রজাতি 'Culex tritaeniorhynchus' ও 'Culex vishnui'র দ্বারা মানুষের মধ্যে ছড়ায়৷ এই রোগটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়াতে সচরাচর হতে দেখা যায়।

রোগের লক্ষণ

জাপানি এনকেফালাইটিস রোগ সংক্রমণের পরে ৫-১৫ দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে৷ সাধারণত প্রতি ২৫০ সংক্রামিত রোগীর একজন আক্রান্ত হয়৷

এই রোগের প্রধান লক্ষণ জ্বর ও গায়ে ব্যথা ৷ এই লক্ষণসমূহ ১-৬ দিন পর্য্যন্ত থাকতে পারে৷ রোগের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অন্যন্য লক্ষণ যেমন ঘাড়ের জড়তা (neck rigidity), ওজন হ্রাস (cachexia), দেহের কোনো অংশের অসারতা (hemiparesis) ও দেহের উষ্ণতা ৩৮–৪১ °সে (১০০.৪–১০৫.৮ °ফা) পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণে দেখা দেয়। শেষ অবস্থায় মানসিক অনগ্রসরতা (Mental retardation) দেখা দিয়ে কোমা অবস্থাতেও নিয়ে যেতে পারে৷

এই রোগে মৃত্যুর হার বিভিন্ন হয় যদিও শিশুর ক্ষেত্রে মৃত্যুর সম্ভাবনা অধিক বলে জানা যায়৷ জন্তুর ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষণ হ'ল, গাভীর সন্তানহীনতা (infertility), গর্ভপাত (abortion), জ্বর ও আলস্যভাব৷ [2]

নিবারণ

জাপানি এনকেফালাইটিসের টীকাকরণ আজীবন এই রোগ হবার থেকে নিবারণ করতে পারে৷ বর্তমান এই রোগের ব্যবহৃত টীকাসমূহ হ'ল- SA14-14-2, IC51 (অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে JESPECT ও অন্যান্য স্থানে IXIARO নামে বাণিজ্যিকভাবে প্রচলিত) ও ChimeriVax-JE (IMOJEV নামে বাজারে উপলব্ধ)[3]

১৯৩০ র দশকে জাপানে ফর্মালিন দ্বারা নিস্ক্রিয় করা নিগনির মগজ থেকে উৎপাদন করা টীকাটি ১৯৬০ ও ১৯৮০ র দশকত ক্রমান্বয়ে তাইওয়ান ও থাইল্যান্ডে প্রচলন করা হয়েছিল৷ এই টীকার বহুল ব্যবহারে জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান ও সিংগাপুরে জাপানি এনকেফালাইটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করেছে৷ জীবন্ত নিগনির দেহে উৎপাদন করা টীকার অত্যধিক মূল্যের জন্য গরিব দেশসমূহে এখনো নিয়মিত টীকাকরণ প্রক্রিয়ায় এই রোগের টীকাটি অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি৷ [4]

চিকিৎসা

জাপানি এনকেফালাইটিস রোগের কোনো নির্দিষ্ট (specific) চিকিৎসা নেই। এই রোগে সচরাচর সহায়তাকারী চিকিৎসা (supportive) করা হয়৷ [5] এই রোগ একজন রোগীর থেকে অন্য সুস্থ লোকের দেহে ছড়ায় না৷

মহামারী বিজ্ঞান (Epidemiology)

সমগ্র এশিয়াতে বার্ষিক প্রায় ৭০,০০০ লোক জাপানি এনকেফালাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়৷[6] এর ভিতর এই রোগে মৃত্যুবরণ করা রোগীর হার প্রায় ০.৩%-৬০%৷ অনগ্রসর অঞ্চলে এই রোগ সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

অতীতে জাপানি এনকেফালাইটিস রোগের সংহারী রূপ থেকে বর্তমান টীকাকরণের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণে আনা দেশসমূহ হল- চীন, কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান ও থাইলেণ্ড৷ অন্যান্য দেশসমূহ যেমন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মায়ানমার, ভারত, নেপাল ও মালয়েশিয়ায় এখনও এই রোগের সংক্রমণ হতে দেখা যায়৷

মানুষ, গরু ও ঘোড়া এই রোগের সংক্রমণের অন্তিম পোষক (dead-end hosts)৷ গরুর দেহে এই রোগের বীজাণুর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে ও সেজন্য গরু এই রোগ ছড়াতে এক প্রধান ভূমিকা পালন করে৷ অবশ্য জাপানি এনকেফালাইটিস ভাইরাসের প্রাকৃতিক পোষক (natural hosts) মানুষের পরিবর্তে বন্য পাখির জন্য এই রোগ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা সম্ভব নয় বলে জানা যায়৷[7]

বিবর্তন

এই ভাইরাস ১৫০০ র দশকে ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়াতে কোনো ভাইরাসের বিবর্তনের ফলে উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ পরবর্ত্তীকালে ই পাঁচটি ভিন্ন জিনোটাইপে বিবর্তিত হয়ে এশিয়া মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। [8]

ভাইরোলজি

জাপানি এনকেফালাইটিস ভাইরাস 'flavivirus' গোত্রের একটি ভাইরাস ও ওয়েস্ট নীল ভাইরাস (West Nile virus) তথা সেইন্ট লুইস এনকেফালাইটিস (St. Louis encephalitis) ভাইরাস গভীরভাবে সম্পর্কিত। [9][10]

জাপানি এনকেফালাইটিস মানুষের সিরামে এন্টিবডির সনাক্তকরণ ও cerebrospinal fluid (IgM capture ELISA) দ্বারা ধরা পড়ে ৷ [11]

তথ্যসূত্র

  1. Solomon, T. (২০০৬)। "Control of Japanese encephalitis - within our grasp?"। New England Journal of Medicine355 (9)। doi:10.1056/NEJMp058263। PMID 16943399 অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  2. Japanese Encephalitis Virus reviewed and published by WikiVet, accessed 11 October 2011.
  3. Schiøler KL, Samuel M, Wai KL (২০০৭)। "Vaccines for preventing Japanese encephalitis"। Cochrane Database Syst Rev (3): CD004263। doi:10.1002/14651858.CD004263.pub2। PMID 17636750
  4. Solomon, T. (২০০৬)। "Control of Japanese encephalitis - within our grasp?"। New England Journal of Medicine355 (9): 869–71। doi:10.1056/NEJMp058263। PMID 16943399
  5. Solomon T, Dung NM, Kneen R, Gainsborough M, Vaughn DW, Khanh VT (২০০০)। "Japanese encephalitis"Journal of Neurology Neurosurgery and Psychiatry68 (9): 405–15। doi:10.1136/jnnp.68.4.405পিএমসি 1736874
  6. Campbell GL, Hills SL, Fischer M, Jacobson JA, Hoke CH, Hombach JM, Marfin AA, Solomon T, Tsai TF, Tsu VD, Ginsburg AS (নভেম্বর ২০১১)। "Estimmated global incidence of Japanese encephalitis: a systematic review"। Bull World Health Organ89 (10): 766–74। doi:10.2471/BLT.10.085233। PMID 3209971
  7. Ghosh D, Basu A (সেপ্টেম্বর ২০০৯)। Brooker, Simon, সম্পাদক। "Japanese encephalitis-a pathological and clinical perspective"PLoS Negl Trop Dis3 (9): e437। doi:10.1371/journal.pntd.0000437। PMID 19787040পিএমসি 2745699
  8. Mohammed MA, Galbraith SE, Radford AD, Dove W, Takasaki T, Kurane I, Solomon T (জুলাই ২০১১)। "Molecular phylogenetic and evolutionary analyses of Muar strain of Japanese encephalitis virus reveal it is the missing fifth genotype"। Infect Genet Evol11 (5): 855–62। doi:10.1016/j.meegid.2011.01.020। PMID 21352956
  9. He B (মার্চ ২০০৬)। "Viruses, endoplasmic reticulum stress, and interferon responses"Cell Death Differ.13 (3): 393–403। doi:10.1038/sj.cdd.4401833। PMID 16397582
  10. Su HL, Liao CL, Lin YL (মে ২০০২)। "Japanese encephalitis virus infection initiates endoplasmic reticulum stress and an unfolded protein response"J. Virol.76 (9): 4162–71। doi:10.1128/JVI.76.9.4162-4171.2002। PMID 11932381পিএমসি 155064
  11. Shrivastva A, Tripathi NK, Parida M, Dash PK, Jana AM, Lakshmana Rao PV (২০০৮)। "Comparison of a dipstick enzyme-linked immunosorbent assay with commercial assays for detection of Japanese encephalitis virus-specific IgM antibodies"J Postgrad Med54 (3): 181–5। doi:10.4103/0022-3859.40959। PMID 18626163

আরও দেখুন

  • Clark, Michael; Kumar, Parveen J. (২০০২)। Clinical Medicine (5th সংস্করণ)। London: W B Saunders। আইএসবিএন 0-7020-2579-8।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.