ছড়া (সাহিত্য)

ছড়া মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত ঝংকারময় পদ্য। এটি সাধারণতঃ স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত। এটি সাহিত্যের একটি প্রচীন শাখা। যিনি ছড়া লেখেন তাকে ছড়াকার বলা হয়। ‘ছেলেভুলানো ছড়া’, ‘ঘুম পাড়ানি ছড়া’ ইত্যাদি ছড়া দীর্ঘকাল যাবৎ প্রচলিত। প্রাচীনকাল থেকে ইংরেজী ভাষায় ননসেন্স রাইম প্রচলিত রয়েছে কারণ ছড়ার প্রধান দাবী ধ্বনিময়তা ও সুরঝংকার, অর্থময়তা নয়।

প্রাচীন যুগে ‘ছড়া’ সাহিত্যের মর্যাদা না পেলেও বর্তমানে সে তার প্রাপ্য সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এখনও অনেকেই ছড়াসাহিত্যকে শিশুসাহিত্যেরই একটি শাখা মনে করেন কিংবা সাহিত্যের মূলধারায় ছড়াকে স্বীকৃতি দিতে চান না। কেউ কেউ ছড়াকে কবিতা বলার পাশাপাশি আধুনিক গদ্যকবিতার যুগে এসব মিলযুক্ত কবিতা (অন্ত্যমিল) বা পদ্যের অবস্থানকে হালকা করে দেখেন। তবে পদ্য (কবিতা) এবং ছড়ার মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে- পদ্যের বক্তব্য সহজবোধ্য ও স্পষ্ট হলেও কিন্তু ছড়ায় রহস্যময়তা থাকে।

ইতিহাস

ছড়ার রয়েছে প্রায় দেড়হাজার বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাস। সাহিত্যের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে ছড়ার বিকাশ ও উতকর্ষ আমাদের বারবার চোখে পড়ছে। আদিতে সাহিত্য রচিত হতো মুখে মুখে এবং ছড়াই ছিল সাহিত্যের প্রথম শাখা বা সৃষ্টি। সাহিত্য লেখ্যরূপে পাওয়ার পূর্বে ছড়ায় মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতো। লোকসমাজে ছড়াই ছিল ভাবপ্রকাশের প্রধান মাধ্যম। গদ্যসাহিত্যের আগে তাই কেউ কেউ ছড়ারে লৌকিক সাহিত্য বলে বিবেচিত করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন—'ছড়া শিশুদের খেলামেলার কাব্য'। আধুনিক সাহিত্যিকগণ এসব অভিধান মানতে নারাজ। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন—ছড়া সাহিত্যের গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ ও নাটকের মতো একটি প্রয়োজনীয় শাখা। এই শাখাটি অন্যান্য শাখার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্যতা সহজেই ধরা পড়ে।

প্রকার

ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য তার 'লোক সাহিত্য' গ্রন্থে ছড়াকে লৌকিক ছড়া, সাহিত্যিক ছড়া ও আধুনিক ছড়া—এই তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। এছাড়াও ছড়াকে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করা হয়। যেমন- শিশুতোষ ছড়া, রাজনৈতিক ছড়া, ছড়ার ছন্দাশ্রিত কিশোর কবিতা প্রভৃতি। এর মধ্যে শিশুতোষ ছড়া তৈরি হয় কেবলমাত্র শিশু-মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে।

বাংলাসাহিত্যে ছড়া

বাংলাসাহিত্যের আদিসৃষ্টি বা নিদর্শন চর্যাগীতির প্রথম পদটি ছড়ার মূলছন্দ স্বরবৃত্তে লেখা এবং এটি ছন্দ-মিলে রচিত। এই পদটি বাংলাসাহিত্যের আদিছড়া বললেও ভুল হবে না। ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যোগীন্দ্রনাথ সরকার লৌকিক ছড়াকে প্রথম গ্রন্থভুক্ত করেন এবং গ্রন্থটির নাম দেন 'খুকুমণির ছড়া' এই গ্রন্থটির ভূমিকায় সর্বপ্রথম রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী ছড়াকে সাহিত্যের একটি অন্যতম শাখা হিসেবে স্বীকৃতি দেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থে সুকুমার রায়ের ছড়া সংকলিত করে ছড়ার গ্রহণযোগ্যতাকে মজবুত করেন। ছড়াপ্রসঙ্গে কবিগুরু বলেছেন, ‘সুদূর কাল থেকে আজ পর্যন্ত এই কাব্য (ছড়া) যারা আউড়িয়েছে এবং যারা শুনেছে তারা অর্থেও অতীত রস পেয়েছে। ছন্দতে ছবিতে মিলে একটা মোহ এনেছে তাদের মধ্যে। সেইজন্য অনেক নামজাদা কবিতার চেয়ে এর (ছড়া) আয়ু বেড়ে চলেছে।’ একসময় ছড়াকে মনে করা হতো শুধুই শিশুসাহিত্য। তবে এখন আর তা মনে করা হয় না, বাংলাসাহিত্যে ছড়া তার নিজস্ব অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে।

আরও পড়ুন

তথ্যসূত্র

    বহিঃসংযোগ

    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.