গ্লোব থিয়েটার

ইংরেজি সাহিত্যের কথা ভাবলেই মাথায় আসে শেক্সপিয়রের নাম।আর এই মহান সাহিত্যিকের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে ইংল্যান্ডের গ্লোব থিয়েটারের নাম। ১৫৯৯ সালে গ্লোব থিয়েটার পত্তন করেন ‘লর্ড চেম্বারলেনস মেন’ নামে নাট্য কোম্পানিটি, যাঁরা শেক্সপিয়রের লেখা নাটককে মঞ্চস্থ করতেন। ১৬১৩ সালে এক বিধ্বংসী আগুনে এই থিয়েটার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু পরের বছরই নাটক নিয়ে উত্‌সাহী মানুষজনের সাহায্যে গ্লোব থিয়েটার নতুন করে আত্মপ্রকাশ করে।

লন্ডনে পাবলিক থিয়েটার জিনিসটা সেভাবে ছিল না। বড়লোকরা মাঝেমধ্যে আয়োজন করত, পরিবারের লোকজন মিলে দেখত। কিন্তু রিচার্ড বার্বেজের দল 'দ্য থিয়েটার' জন্মের পর চিত্রটা বদলে যেতে থাকে। নাটক পৌঁছাতে থাকে সাধারণ মানুষের কাছে। ভালো-মন্দ মিলিয়ে ভালোই চলছিল দ্য থিয়েটার। জন হেমিংস, অগাস্টিন ফিলিপস, টমাস পোপ, উইলিয়াম শেকসপিয়ার আর উইলিয়াম কেম্পের মতো মানুষের সাহচর্য পাচ্ছিলেন রিচার্ড আর তাঁর ছেলে জেমস। এত কিছুর মধ্যে রিচার্ড ভুলে গিয়েছিলেন দ্য থিয়েটারের জমিটা তাঁর নয়। তিনি সেটা কেবল ২১ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছিলেন জিলস এলেনের কাছ থেকে। তাই সময় ফুরিয়ে এলে থিয়েটারসহ জমি দাবি করে বসলেন জিল। শুনে তো বার্বেজের মাথায় হাত। কী করতে হবে কারোরই বুঝে আসছিল না!

তারপর অভিনব এক বুদ্ধি আটলেন তারা। জিল যখন ক্রিসমাসের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি গেলেন তখন এক কাঠমিস্ত্রির সহায়তায় রাতারাতি তাঁরা নাট্যশালার কাঠগুলো সরিয়ে নিয়ে গেলেন ওয়াটারফ্রন্টের কাছে ব্রিডওয়েলের ওয়্যারহাউসে। আবহাওয়া ভালো ছিল, তাই তাড়াতাড়িই সবাই মিলে দ্য থিয়েটারকে সোজা টেমসের ওপারে নিয়ে গেলেন। তারপর সবাই মিলে যত্ন নিয়ে গড়ে তুললেন নতুন থিয়েটার-গ্লোব থিয়েটার।

টমাস ব্রেন্ডের জমিতে তারা মঞ্চ সাজালেন, পরবর্তী সময় যার মালিকানা চলে যায় ছেলে নিকোলাস ব্রেন্ড ও স্যার ম্যাথু ব্রেন্ডের কাছে। জমিটা নিচু। ডুবে যাওয়ার ভয় ছিল। তাই উঁচু করে নেওয়া হয়। আগের দ্য থিয়েটারের চেয়ে অনেক বিশাল আকার নেয় গ্লোব। দ্য থিয়েটারের কাঠগুলোর সঙ্গে সঙ্গে এতে ব্যবহার করা হয় অনেক নতুন সরঞ্জাম। ১৫৯৯ সালে শেষ হয় গ্লোব থিয়েটারের কাজ। নতুন থিয়েটারের অংশীদার হন রিচার্ড হল, জেমস বার্বেজ, শেকসপিয়ার, অগাস্টিন, টমাস প্রমুখ। তবে অর্ধেকটাই ছিল বাবা-ছেলের নামে। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠল ওই গ্লোব।

গ্লোবের প্রথম নাটক হেনরি ফাইভ। অনেকে জুলিয়াস সিজারকে প্রথম নাটক ধরতে আগ্রহী ঐতিহাসিকরা। ভালোই চলছিল গ্লোব। খারাপ দিনটি এলো ১৬১৩ সালের ২৯ জুন। হেনরি এইটের আগুন লাগল গ্লোবে। মানুষ খুব বেশি আহত হয়নি, তবে কাঠের বাড়ি গেল পুড়ে।

পরের বছরই অবশ্য আবার গড়ে উঠেছিল গ্লোব। গেল আরো ২৫ বছর। বেশ রমরমা সব কিছু। ১৬৪২ সালে গোড়া পিউরিটানরা বন্ধ করে দিল গ্লোব। সে সময় সব থিয়েটারই বন্ধ করে দিয়েছিল তারা। তাদের অভিযোগ, থিয়েটার হাউসে জুয়া আর পতিতাবৃত্তি চলে। গ্লোবকে আবার খুঁজে পাওয়া যায় ১৯৮৯ সালে। পার্ক স্ট্রিটের অ্যাংকর টেরেসের গ্যারেজের নিচে। নড়েচড়ে ওঠে পুরো দুনিয়া। অনেক গবেষণার পর বের হয়, গ্লোবের অস্তিত্ব ছিল বর্তমান সাউথওয়ার্ক ব্রিজ রোডের পশ্চিম থেকে পর্টার স্ট্রিট পর্যন্ত ও পার্ক স্ট্রিটের দক্ষিণ থেকে গেট হাউস স্কয়ার পর্যন্ত।

১৯৯৭ সালে শেকসপিয়ার গ্লোব নামে নতুন ও আরো আধুনিক গ্লোব থিয়েটারের যাত্রা শুরু হয়। নতুন গ্লোব থিয়েটারও হেনরি ফাইভ দিয়ে তাদের যাত্রা শুরু করে।

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.