গীতা দত্ত
গীতা দত্ত (জন্ম: ২৩ নভেম্বর ১৯৩০ - মৃত্যু: ২০ জুলাই ১৯৭২) একজন বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী। তিনি মূলত ১৯৫০ এবং ১৯৬০এর দশকে হিন্দি ছবিতে নেপথ্য সঙ্গীত এবং বাংলা আধুনিক গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত।

গীতা দত্ত Geeta Dutt | |
---|---|
জন্ম নাম | গীতা ঘোষ রায় চৌধুরী Geeta Ghosh Roy Chowdhury |
জন্ম | ফরিদপুর, বাংলাদেশ | ২৩ নভেম্বর ১৯৩০
মৃত্যু | ২০ জুলাই ১৯৭২ ৪১) | (বয়স
পেশা | Playback singer |
বাদ্যযন্ত্রসমূহ | Vocalist |
কার্যকাল | ১৯৪৬–১৯৭১ |
ওয়েবসাইট | http://www.geetadutt.com/ |
জন্ম ও পরিবার
গীতা দত্ত একটি ধনী জমিদার পরিবারে বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পরিচালক, অভিনেতা গুরু দত্তের সাথে বিয়ের আগে তার নাম ছিল গীতা ঘোষ রায়চৌধুরী। বিয়ের আগে গীতা রায় নামে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তার বাবা মার সাথে বোম্বের দাদারে একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে আরম্ভ করেন।[1][2]
সঙ্গীত জীবন
গীতা যখন বারো বছর বয়েসী ছিলেন । সুরকার হনুমান প্রসাদ একবার গীতার গান শুনে মুগ্ধ হন । তিনি ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে গীতাকে ভক্ত প্রহলাদ নামের একটি চলচ্চিত্রে প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ দেন । এই ছবিতে গীতা কোরাসে মাত্র দুই লাইন গান গেয়েছিলেন কিন্তু তার মধ্যেই তার কৃতিত্ব ফুটে উঠেছিল। পরের বছরে গীতা নেপথ্যগায়িকা হিসাবে দো ভাই ছবিতে কাজ পান । এবং এই ছবিতে তার গান হিন্দি ছবির জগতে গায়িকা হিসাবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রথম দিকে গীতা ভজন এবং দুঃখের গান গাওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন। ১৯৫১ সালে শচীন দেববর্মণের সুরে বাজি চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গান তার সঙ্গীতজীবনে নতুন দিক আনে। তার কণ্ঠস্বরের যৌনতা এবং পাশ্চাত্য সুরে সহজে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার জন্য ১৯৫০এর দশকে লাস্যময়ী এবং ডান্স ক্লাবের গানে তাকে প্রথম পছন্দ করে তোলে।শচীন দেববর্মন দো ভাই ছবিতে গীতার কণ্ঠের জাদু প্রথম ফুটিয়ে তুলেছিলেন। তিনি গীতার কণ্ঠের বাঙালি টানকে সুন্দর ভাবে ব্যবহার করেছিলেন দেবদাস (১৯৫৫) এবং পেয়াসা(১৯৫৭) ছবিতে। পেয়াসা ছবিতে আজ সাজন মুঝে অঙ্গ লাগা লে বাঙালি কীর্তন গানকে গীতা সফল ভাবে হিন্দিতে গেয়েছিলেন। শচীনদেব বর্মনের সুরকার হিসাবে শুরুর দিকের গানগুলিকে গায়িকাদের ভিতরে গীতাই সবথেকে ভালভাবে গেয়েছিলেন। ও পি নাইয়ারের সুরে গীতা সব ধরনের গানেই পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। তিনি এবং লতা মঙ্গেশকর ১৯৫০এর দশকে দুই প্রধান নেপথ্যসঙ্গীত গায়িকা ছিলেন।হিন্দি গান ছাড়াও গীতা দত্ত গুজরাটি ছবিতেও প্রধান নেপথ্য গায়িকা ছিলেন। তিনি গুজরাটি ভাষায় বিখ্যাত সুরকার অবিনাশ ব্যাসের সুরে বেশ কিছু গান গেয়েছিলেন। ১৯৫০ দশকের শেষ এবং ১৯৬০এর দশকের শুরুতে গীতা বেশ কিছু বিখ্যাত বাংলা গান গায়। এই সময়ে বাংলা ছবি এবং সঙ্গীতের জগৎতে স্বর্ণযুগ চলছিল । তার বেশিরভাগ বাংলা গানেরই সুরকার ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তবে তিনি নচিকেতা ঘোষ এবং সুধীন দাশগুপ্তের সুরেও কিছু গান গেয়েছিলেন।
কিছু মনে রাখার মত গান
শচীন দেব বর্মণের সুরে তাঁর কয়েকটি গান
- মেরা সুন্দর সপনা বীত গয়া (দো ভাই - ১৯৪৭)
- ও সপনেবালি রাত (পেয়ার - ১৯৫০)
- তদবির সে বিগড়ি হুয়ি তকদির (বাজি - ১৯৫১)
- আন মিলো
আন মিলো (দেবদাস - ১৯৫৫)
মান্না দের সাথে
- আজ সাজন মুঝে অঙ্গ লাগালো (পেয়াসা - ১৯৫৭)
- হাওয়া ধীরে আনা (সুজাতা - ১৯৫৯)
- বক্ত নে কিয়া কেয়া হাসিন সিতম১৯৫৯)
ও পি নাইয়ারের সুরে তাঁর কয়েকটি গান
- জরা সামনে আ (বাজ - ১৯৫৩)
- বাবুজি ধীরে চলনা (আর পার - ১৯৫৪)
- থান্ডি হাওয়া কালি ঘটা (মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফিফটি ফাইভ - ১৯৫৫)
- জব বাদল লেহরায়া (ছুমন্তর - ১৯৫৬)
- মেরে জিন্দেগী কে হামসফর (শ্রীমতি চারশোবিশ - ১৯৫৬)
- চোর লুটেরে ডাকু (উস্তাদ - ১৯৫৭)
- মেরা নাম চিন চিন চু (হাওড়া ব্রিজ - ১৯৫৮)
- ক্যায়সা জাদু বালাম তুনে দারা (টুয়েলভ ও ক্লক - ১৯৫৮)
কিছু মনে রাখার মত বাংলা গান
- তুমি যে আমার ( হারানো সুর ১৯৫৮ সঙ্গীত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)
- এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায় (হসপিটাল ১৯৬০ সঙ্গীত অমল মুখার্জী)
- নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে (পৃথিবী আমারে চায় ১৯৫৭)
- ওগো সুন্দর জানো নাকি (ইণ্দ্রাণী ১৯৫৮)
- এই মায়াবী তিথি (সোনার হরিণ ১৯৫৯)
- আমি শুনেছি তোমারি গান (স্বরলিপি ১৯৬১)
মৃত্যু
তিনি বোম্বেতে ২০ জুলাই, ১৯৭২ সালে মারা যান।
তথ্যসূত্র
- সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ১৪৬, আইএসবিএন ৯৮৪-০৭-৪৩৫৪-৬