গাঁজার প্রভাব

উদ্ভিদে রাসায়নিক যৌগ থাকার কারণে প্রাথমিকভাবে এর প্রভাব পড়ে। সুনির্দিষ্ট স্থান যা ক্যানাবিনয়েড সহ, যেমন- টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিবল (THC) এর মত ১০০ টিরও বেশি বিভিন্ন উদ্ভিদে এই রাসায়নিক যৌগের উপস্থিতি রয়েছে।[1] গাঁজা মানব দেহের উপর বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরবৃত্তীয় ফেলে। গাঁজার বিভিন্ন জাতেই THC থাকে এবং অন্যান্য ক্যানাবিনয়েড ফার্মাকোলজিকাল প্রভাব আছে।[2][3] যতটুকু উদ্বেগ এর মধ্যে প্রবেশ করানো যায় এর প্রভাব ততটা বেশি হয়।[4][5]

একটি গাঁজার কুঁড়ি

গাঁজায় ক্যানাবাইডল (CBD) নামে আরেক ধরনের ক্যানাবাইনয়েড আছে যেটি ভোক্তাদের মধ্যে বিদ্রুপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। [6]

গাঁজাকে বলা হয় 'গেট-ওয়ে ড্রাগ', অর্থাত্‍ নেশায় হাতেখড়ি হয় গাঁজার মাধ্যমে।

মস্তিষ্ককে প্রভাব

গাঁজার শারীরিক প্রভাব

বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন যে, গাঁজা সেবনের পরপরই টিএইচসি ফুসফুসের মধ্যে দিয়ে শোধিত হয়ে রক্তপ্রবাহের সাথে মিশে শরীরের বিভিন্ন অংশে তথা মস্তিষ্কেও প্রবাহিত হয়। মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের কতগুলো সুনির্দিষ্ট স্থান যা ক্যানাবিনয়েড রিসেপটর নামে পরিচিত যার সাথে THC এর সংযোগের ফলে ঐ কোষগুলি প্রভাবিত হয়ে ব্যক্তির আনন্দানুভূতি, স্মৃতি, চিন্তা, মনোযোগ, সংবেদন, সময় জ্ঞান এবং চলাচলের সমন্বয়ের ক্ষেেত্র সরাসরি পরিবর্তন আনে যা ১ থেকে ৩ ঘন্টা স্থায়ী হয়। যদি গাঁজাকে খাদ্যের সংগে বা পানিতে গুলিয়ে নেয়া হয় তবে এর প্রভাব ধীরে ধীরে - সাধারণতঃ আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পরে শুরু হয় এবং তা ৪ঘন্টার অধিক স্থায়ী হয়ে থাকে৷। নিকোটিনের পরিমান ৩৭℅.

গাঁজা সেবনের কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেবনকারী ব্যক্তির হৃত্‍কম্পন বেড়ে যায়। কোমনালীগুলি শিথিল হয়ে বেড়ে যায় এবং চোখের রক্ত প্রবাহের শিরাগুলি স্ফিত হয় যার কারণে চোখ লাল হয়। হৃত্‍স্পন্দন স্বাভাবিকের (মিনিটে ৭০-৮০বার) চেয়ে বেড়ে যায় কোন কোন সময় দ্বিগুণ হয়ে যায় এবং গাঁজা যদি অন্য কোন মাদকদ্রব্যের সাথে নেয়া হয় তবে এর প্রভাব অনেক বেড়ে যায়। গাঁজা সেবনের প্রায় পরপরই THC ফুসফুসের মধ্য দিয়ে শোধিত হয়ে রক্তপ্রবাহের সাথে মিশে কোষের মেদল অংশের মধ্যে সঞ্চিত হয়। তারপর সাধারণতঃ এক সপ্তাহ বা অনুরূপ সময়ের মধ্যে তা আবার রক্ত প্রবাহের সাথে মিশে যায়। মদ এবং ফেনসিডিল এর মতো পানিতে দ্রবণীয় কোন কোন মাদকদ্রব্য শরীর থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়। কিন্তু THC এর অবশিষ্টাংশ মেদ-কোষে থেকেই যায় এবং এর প্রতিক্রিয়া শেষ না হতেই আরো গাঁজা সেবন করলে ক্রমবর্ধমান প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যত বেশী মাত্রায় গাঁজা সেবন করা হবে - যত বেশী গাঁজা মিশ্রিত মাদক ধূমপান করা হবে - ততবেশী বিভ্রান্তিকর প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে এবং ততবেশী মনশ্চালক ক্রিয়ার ঘাটতি দেখা দেবে।

অল্প মাত্রায় সেবন করলেও সেবনকারীর মাঝে মাঝে স্বল্প সময়ের জন্য স্মৃতিভ্রম ঘটে। গাঁজা সেবীদের এইরূপ স্মৃতিভ্রম প্রায়ই ঘটে, তারা একটি সৃজনশীল জটিল বাক্য শুরু করে কখনো তা ভালোভাবে শেষ করতে পারেন না, অসংলগ্ন বা এলোমেলোভাবেই তা শেষ হয়। দীর্ঘদিন গাঁজা সেবন করলে বিশেষ করে মাঝে মাঝে অতিমাত্রায় সেবন করলে সেবনকারীর মধ্যে 'মস্তিষ্ক বিকার' কিংবা মনোবিকাররগ্রস্ততা দেখা দেয়, যা উন্মত্ততার শামিল। ব্যক্তি ক্রমে কান্ডজ্ঞান হারিয়ে দৃষ্টি ও শ্রুতিগত হ্যালুসিনেশনে ভোগে। কখনো কখনো ব্যবহারকারীর মধ্যে দেহ নিরপে বিচ্ছিন্নতাবোধ অর্থাত্‍ নিজের পরিচিতি সম্পর্কে ধারণা হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয় ৷ 

শারীরিক ক্ষতি

কমবেশী গাঁজা সেবন করলেই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে প্রায়ই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় দীর্ঘদিন ধরে সেবন করলে। যে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তা হলো চোখ ও হাতের সমন্বয়ের দুর্বলতা, যার ফলে গাড়ি চালানো, মেশিনের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। প্রজনন অমতা, হৃত্‍স্পন্দন বৃদ্ধিতে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া এবং দৃষ্টি ও সময় অনুধাবনে বিভ্রান্তিজনিত অস্থিরতা, মানসিক বৈকল্য ও অবসাদগ্রস্ততাও দেখা দেয়।

তামাকের চেয়ে গাঁজা অধিক বিপদজনক কারণ গাঁজা সেবনের সময় সিগারেটের তুলনায় ফুসফুসে অন্তত তিন থেকে চারগুণ বেশী কার্বন-মনোঅক্সাইড ও অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ জমা হয়। সিগারেটে যে পরিমান ক্ষতিকর পদার্থ থাকে তার চেয়ে চার পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশী থাকে গাঁজায়। ফলে গাঁজা সেবীদের ফুসফুসে ও শ্বাসনালীতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। গাঁজা সেবনে রোগ প্রতিরোধ মতা কমে যাবার ফলে সেবনকারীর সংক্রামক রোগ বেশী হয় এবং ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা যায় কোন গাঁজা সেবনকারীর সেবনের প্রথম ১ ঘন্টায় হার্টর্এ্যাটাকের ঝুঁকি সাধারণ অবস্থার চেয়ে চারগুণ বেড়ে যায়, কারণ সেবনের ফলে রক্ত চাপ ও হৃত্‍কম্পন বেড়ে যায়।

এই মাদকটি গ্রহণে দৃষ্টিভ্রম, বাচালতা, মাংশপেশীর অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় সংকোচন, দিকভ্রান্ত হওয়া, মাথা ঘুরা, ক্ষুধা লাগা, গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে যাওয়া, সময়জ্ঞান হারানো থেকে শুরু করে প্রলাপ বকা, বিকার আসা এমনকি মানুষকে হত্যাকরার ইচ্ছাও জাগ্রত হতে পারে। মাত্রা বেশী হয়ে গেলে অনেক সময় হাত পা এর নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলা, হাতে পায়ে ঝি ঝি ধরা এবং অবশ হয়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যাওয়া থেকে শ্বাস কষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। 

রক্তরাঙা চোখ

নিয়মিত এবং বেশী মাত্রায় গাঁজা জাতীয় দ্রব্য সেবনে গাঁজা সাইকোসিস নামে একধরনের লক্ষন হয়। এতে চোখে রক্তজমে চোখ লাল হয়ে যায়, ক্ষুধামন্দা, নির্জিবতা, শরীরের মাংস-পেশী শুকিয়ে যাওয়া, অত্যাধিক দুর্বলতা, হাত-পা অনবরত কাপতে থাকা, পুরুষত্বহীনতা থেকে শুরু করে পুরোপুরি মানসিক রোগী হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। 

রানিং এমোক নামক আরেক ধরনের মানসিক বিপর্যয় ও গাঁজা সেবিদের পরিণতি হয়ে আসতে পারে। অবিরত গাঁজা সেবনের কারনে অনেক সময় এদের দৃষ্টিভ্রম, নির্যাতিত-বঞ্চিত হবার কল্পনা থেকে এরা হিংসাত্মক, আগ্রাসি সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ন হতে পারে। রানিং এমক হলে লোকটি চোখের সামনে যাকে পায় তাকে তার কল্পিত শত্রু মনে করে অস্ত্র নিয়ে হত্যা করতে পারে এবং এই মানসিক অবস্থা কেটে যাবার আগ পর্যন্ত যাকে সামনে পায় ক্রমান্বয়ে তাকেই হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এই আবেশ কেটে গেলে একসময় সে আত্মহত্যা করতে যেতে পারে অথবা আত্মসমর্পনও করতে পারে। 

গর্ভাবস্থায় গাঁজা সেবনের প্রতিক্রিয়া

যদি কোন নারী গর্ভাবস্থায় গাঁজা সেবন করে তবে সাধারণত এর প্রভাব তাদের শিশুদের উপরও পড়ে। শিশুদের জ্ঞানের ঘাটতি সহ আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়।

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Aizpurua-Olaizola, Oier; Soydaner, Umut; Öztürk, Ekin; Schibano, Daniele; Simsir, Yilmaz; Navarro, Patricia; Etxebarria, Nestor; Usobiaga, Aresatz (২০১৬-০২-০২)। "Evolution of the Cannabinoid and Terpene Content during the Growth of Cannabis sativa Plants from Different Chemotypes"Journal of Natural Products (ইংরেজি ভাষায়)। 79 (2): 324–331। doi:10.1021/acs.jnatprod.5b00949
  2. http://www.medicinalgenomics.com/wp-content/uploads/2011/12/Chemical-constituents-of-cannabis.pdf
  3. Atakan, Zerrin (১ ডিসেম্বর ২০১২)। "Cannabis, a complex plant: different compounds and different effects on individuals."Ther Adv Psychopharmacol6 (2): 241–254। doi:10.1177/2045125312457586পিএমসি 3736954
  4. Osborne, Geraint B.; Fogel, Curtis (২০০৮)। "Understanding the Motivations for Recreational Marijuana Use Among Adult Canadians1"। Substance Use & Misuse43 (3–4): 539–72। doi:10.1080/10826080701884911
  5. Ranganathan, Mohini; d'Souza, Deepak Cyril (২০০৬)। "The acute effects of cannabinoids on memory in humans: a review"। Psychopharmacology188 (4): 425–44। doi:10.1007/s00213-006-0508-y। PMID 17019571
  6. Grotenhermen, Franjo (২০০৩)। "Pharmacokinetics and Pharmacodynamics of Cannabinoids"। Clin Pharmacokinet42 (4): 327–60। doi:10.2165/00003088-200342040-00003। PMID 12648025

বহিঃসংযোগ

টেমপ্লেট:Cannabis টেমপ্লেট:Cannabinoids টেমপ্লেট:Health effects of food, drink and lifestyle টেমপ্লেট:Psychoactive substance use

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.