খান বাহাদুর শাহ্ আব্দুর রউফ
শাহ্ আব্দুর রউফ সাহেব আলীগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রী লাভ করেন এবং আইন পেশায় নিয়োজিত হন। পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হন ১৯৪০ সালে। তিনি শুধু একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা বা আইনজীবী হিসেবেই নন একজন সাহিত্যিক, সমাজসেবী এবং শিক্ষানুরাগী হিসেবেও খ্যাতির অধিকারী ছিলেন। তবে তার মূল পরিচয় তিনি একজন রাজনীতিক। পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ভারতীয় মুসলিমদের জন্য একটা পৃথক আবাস ভূমি পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছেন একজন মুসলিম লীগ আদর্শের অনুসারী হিসেবে।
জন্ম
ব্যক্তি শাহ্ আব্দুর রউফ ১৮৮৯ সালে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মকিমপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা নাম শাহ্ কলিম উদ্দিন। পিতা পেশায় জমিদার হলেও শিক্ষা ও আধুনিক মননের অধিকারী ছিলেন। যা শাহ্ আব্দুর রউফ এর উপরো প্রতিফলিত হয়েছিল। তারা নয় ভাই ও ছয় বোন ছিলেন।
রাজনৈতিক দর্শন
শাহ্ আব্দুর রউফ সাহেব আলীগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রী লাভ করেন এবং আইন পেশায় নিয়োজিত হন। পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হন ১৯৪০ সালে। তিনি শুধু একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা বা আইনজীবী হিসেবেই নন একজন সাহিত্যিক, সমাজসেবী এবং শিক্ষানুরাগী হিসেবেও খ্যাতির অধিকারী ছিলেন। তবে তার মূল পরিচয় তিনি একজন রাজনীতিক। পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ভারতীয় মুসলিমদের জন্য একটা পৃথক আবাস ভূমি পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছেন একজন মুসলিম লীগ আদর্শের অনুসারী হিসেবে।
১৯১৯ সালে রংপুরে সংঘটিত হয় রায়ত আন্দোলন। ব্রিটিশ প্রবর্তিত কুখ্যাত জমিদারী প্রথার ফলে বাংলার কৃষক ছিল শোষিত, নির্যাতিত। জমিদারদের শোষণ ও নির্যাতনের জাত থেকে কৃষকদের রক্ষা ও শোষণের বিরুদ্ধে রংপুরে রায়ত সমিতি গড়ে উঠলে শাহ্ আব্দুর রউফ সাহেব সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন, সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন রংপুর অঞ্চলের আরেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব বর্তমান লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার শেখ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। ১৯১৯ সালের শাসন সংস্কার আইন অনুযায়ী বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। ১৯২০ সালে সেই নির্বাচনে তিনি রংপুর সদর ও নীলফামারী মহকুমার (বর্তমান জেলা) মুসলিম ভোটারদের ভোটে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য (এম.এল.সি) নির্বাচিত হন। দেশ বিভাগের পরে ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিভাগীয় কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন সরকার কর্তৃক। ১৯৬২ সালে "মৌলিক গণতন্ত্র" প্রথা চালু হলে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য পদপ্রার্থী হয়েছিলেন। ১৯৬৩ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে তিনি সম্মানসূচক "তঘমায়ে কায়েদে আযম" উপাধি লাভ করেন।
সংক্ষিপ্ত জীবন
শাহ্ আব্দুর রউফ সাহেবের দ্বিতীয় কর্মক্ষেত্র ছিল জেলা পরিষদ। ১৯২২ সালে প্রথম জেলা বোর্ডের সদস্য হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। পরে ১৯৩৩ সালে সদর লোকাল বোর্ড কর্তৃক আবারও জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর নভেম্বরে তিনি জেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ নয় বছর তিনি উক্ত পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
তার তৃতীয় কর্মক্ষেত্র ছিল রংপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক। ১৯২৯-৩৪ সাল পর্যন্ত তিনি রংপুর কো-অপারেটিভ ব্যাংকের অনানারী সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপরে নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্যাংকের ডেপুটি চেয়ারম্যান। জনসাধারণকে উপকৃত হবে এই মানসে তিনি সমবায় আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। এই সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে জনসেবার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৩৫ সালে তিনি জুবিলী মেডেলসহ জুবিলি কো-অপারেটিভ সার্টিফিকেট লাভ করেন। জনকল্যাণে আজীবন কাজ করে যাওয়া এ্যাডঃ শাহ্ আব্দুর রউফ সাহেব প্রশংসনীয় জনহিতকর কাজের জন্য ১৯৩৭ সালে তৎকালীন বড় লাট বাহাদুরের কাছে থেকে করোনেশন মেডেল এবং এর দুই বছর পরে ১৯৩৯ সালে তিনি সরকার কর্তৃক খাঁন বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হন।
একজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি হিসেবে দেশ ও জাতি গঠনে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বিপুল জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দেশ বিভাগের পরে ১৯৪৭ সালে জেলা বিদ্যালয় বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সুনামের সাথে এই দায়িত্ব পালন করেন। খান বাহাদুর শাহ্ আব্দুর রউফ উপলব্ধি করেছিলেন রংপুরে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক অনেক কম। চিকিৎসার সু ব্যবস্থার জন্য রংপুরে একটি মেডিকেল বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিলেন। সেই লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে জেলা বোর্ড হতে নিজে আহবায়ক হয়ে একটা সভা আহ্বান করেছিলেন। তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব সি.এ আলীর সভাপতিত্বে সেই সভায় রংপুরের সুধী ব্যক্তিদের সমাবেশ ঘটেছিল। সকলেই মেডিকেল স্কুল স্থাপনের ব্যাপারে খান বাহাদুর সাহেবের প্রচেষ্টাকে অভিনন্দিত করেন এবং সেই সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে একটি মেডিকেল স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে কোন সাড়া না পাওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। মৃত্যুর আগে তিনি দেখে যেতে পারেননি ২৪ বছর আগে তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হতে। তার মৃত্যুর পরেই রংপুর মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
সাহিত্য সাধনা
তিনি নিজেকে সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত রেখেছিলেন। ১৯৩৭ সালে তার কাব্যগ্রন্থ "চতুর্দশী" ও ১৯৪০ সালে "আমার কর্মজীবন" নামে তার আত্মজীবনীমুলক বই প্রকাশিত হয়।
মৃত্যু
তিনি ০১ জানুয়ারী ১৯৬৯ সালে রংপুর শহরের লিচু বাগান এলাকায় (সালেক পাম্প) তার নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। শহীদ শংকু সরণীস্থ (স্টেশন রোড) আলমনগর পানামা মোড়ে ধলা পীর সাহেবের "বরকতিয়া দরবার শরীফ" সংলগ্ন এলাকায় তাকে দাফন করা কয়।
স্বরচিত বিশেষ উক্তি
"দুনিয়ার চাকচিক্যে ভুলো নারে মন
অতীব অস্থায়ী ইহা রাখিও স্মরণ,
জীবন ক্ষণস্থায়ী ও মৃত্যু সুনিশ্চিত
বৃথা নষ্ট করা জীবন নয়ে কো উচিৎ"।
(এই লাইন কয়টি তার নিজ কবরের এপিটাফে লেখা রয়েছে)