কলমি শাক

কলমি শাক (Ipomoea aquatica) এক প্রকারের অর্ধ-জলজ উষ্ণমণ্ডলীয় লতা। একে শাক হিসাবে খাওয়া হয়। এর আদি নিবাস কোথায় তা জানা যায়নি, তবে সারা বিশ্বের ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে এটি জন্মে। ইংরেজিতে একে বলে water spinach, river spinach,[1] water morning glory, water convolvulus, Chinese spinach, Swamp cabbage এবং এশিয়ার কিছু অঞ্চলে Kangkong [2]

কলমি শাক
Ipomoea aquatica
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
(শ্রেণীবিহীন): Angiosperms
(শ্রেণীবিহীন): Eudicots
(শ্রেণীবিহীন): Asterids
বর্গ: Solanales
পরিবার: Convolvulaceae
গণ: Ipomoea
প্রজাতি: I. aquatica
দ্বিপদী নাম
Ipomoea aquatica
Forssk.

বিবরন

কলমি শাক পানিতে কিংবা ভেজা মাটিতে জন্মে থাকে। এর ডাঁটাগুলো ২-৩ মিটার বা আরো বেশি দীর্ঘ হয়। ডাঁটার গিঁট বা পর্ব থেকে শেকড় বের হয়। এটি ফাঁপা বলে পানির উপরে ভেসে থাকতে পারে। কলমি শাকের পাতা অনেকটা লম্বাটে ত্রিকোণাকার বা বল্লমাকার, এবং ৫-১৫ সেমি দীর্ঘ এবং ২-৮ সেমি চওড়া হয়। কলমির ফুল অনেকটা ট্রাম্পেট আকৃতির এবং ৩-৫ সেমি চওড়া হয়ে থাকে। ফুলের রঙ সাধারণত সাদা এবং গোড়ার দিক বেগুনি। ফুলে বীজ হয়, বীজ থেকেও গাছ লাগানো যায়। [3]

চাষাবাদ

কলমি শাক

পূর্ব, দক্ষিণ, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে কলমি শাকের চাষ করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে পানিতে বা পানির ধারের ভেজা মাটিতে এই গাছ জন্মায়, আর বেশি যত্নেরও দরকার হয় না। মালয়ী ও চীনা খাবারে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বাংলাদেশে এটি শাক হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। কলমি শাক সাধারণত ভাজি হিসাবে রান্না করা হয়। এছাড়া ঝোল সহ মাছ দিয়েও রান্না করে খাওয়ার চল রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই শাকটির বিস্তার ঘটানো হয়েছে, তবে উচ্চ বর্ধনশীল হবার কারনে সেদেশে এটি 'বিরক্তিকর আগাছা' (noxious weed) রূপে গণ্য[4]

পুষ্টি তথ্য

প্রতি ১০০ গ্রাম কলমি শাকের পুষ্টিমান : পানি- ৮৯ ৭ গ্রাম,  আমিষ – ৩ ৯ গ্রাম,  লৌহ – ০ ৬ গ্রাম, শ্বেতসার – ৪ ৪ গ্রাম,  আঁশ – ১ ৪ গ্রাম,  ক্যালসিয়াম – ০ ৭১ মিলিগ্রাম,  থায়ামিন – ০ ৯ মিলিগ্রাম,  নায়াসিন – ১ ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি – ৪৯ মিলিগ্রাম,  ক্যালোরি – ৩০ কিলো ক্যালোরি।

উপকারিতা

১. কলমি শাকে ক্যালসিয়াম থেকে বলে এই শাক হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুদের কলমি শাক খাওয়ানো উচিত।

২. এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি। ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ করে।

৩. কলমি শাক বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

৪. পর্যাপ্ত পরিমানে লৌহ থাকায় এই শাক রক্ত শূন্যতার রোগীদের জন্য দারুণ উপকারি।

৫. জন্মের পর শিশু মায়ের বুকের দুধ না পেলে মাকে কলমি শাক রান্না করে খাওয়ালে শিশু পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ পাবে।

৬. নিয়মিত কলমি শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

গুণাগুণ

ফোড়া হলে কলমি পাতা একটু আদাসহ বেটে ফোড়ার চারপাশে লাগালে ফোড়া গলে যাবে এবং পুঁজ বেরিয়ে শুকিয়ে যাবে।

পিঁপড়া, মৌমাছি কিংবা পোকামাকড় কামড়ালে কলমি শাকের পাতা ডগা সহ রস করে লাগালে যন্ত্রণা কমে যায়। এছাড়া

কোষ্ঠ কাঠিন্য হলে কলমি শাকের সঙ্গে আখের গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে সকাল-বিকাল এক সপ্তাহ খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।আমাশয়ও এ শরবত কাজ করে।

গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে পানি আসে। কলমি শাক বেশি করে রসুন দিয়ে ভেজে তিন সপ্তাহ খেলে পানি কমে যায় অনেক ক্ষেত্রে।

প্রসূতি মায়েদের শিশুরা যদি মায়ের দুধ কম পায় তাহলে কলমি শাক ছোট মাছ দিয়ে রান্না করে খেলে মায়ের দুধ বাড়ে।

আরো দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. http://www.filipinofoodrecipes.net/adobong_kangkong.htm
  2. http://www.stuartxchange.org/Kangkong.html
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৯
  4. http://plants.usda.gov/java/profile?symbol=IPAQ
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.