এক্স-সিটু সংরক্ষণ

এক্স-সিটু সংরক্ষণ হল এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে জীবকে তার স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে দূরে এক কৃত্রিম জায়গায় নিয়ে এসে পালন করা হয়। এক্স সিটু সংরক্ষণ হল এমন একটি পদ্ধতি যার দ্বারা বিপদগ্রস্ত উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতি তার নিজস্ব বাসস্থান থেকে এনে বিপদমুক্ত ভাবে সংরক্ষণ করা হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় আলিপুর চিরিয়াখানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর পালন অথবা শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন এ বিপদগ্রস্ত উদ্ভিদ পালন। এইসব জায়গায় এই বিপদগ্রস্ত প্রাণীগুলি মানুষের সেবায় বসবাস করে। এক্স-সিটু সংরক্ষণ হল সবচেয়ে প্রাচীনতম এবং উল্লেখযোগ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি।

এক্স সিটু সংরক্ষণ কি

চিড়িয়াখানা, বাগান, নার্সারি এবং পরীক্ষাগারে বিপদগ্রস্থ প্রাণী এবং উদ্ভিদ কে রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রজনন করানোর পদ্ধতি কে এককথায় এক্স সিটু সংরক্ষণ বলে। এখানে প্রাণীদের বন্য জীবনের মত চলাফেরার সুযোগ নেই কারণ এগুলো কৃত্রিমভাবে সংরক্ষণ করার ফলে খুবই সীমিত এলাকা যুক্ত । বন্য জীবজন্তুদের খাদ্য ও বাসস্থান এর জন্য সারাক্ষণ সতর্ক থাকতে হয়, জলের জন্য হাহাকার করতে হয় এবং রোগ, ক্ষত ও তৃষ্ণার জন্য জীবন দিতে হয়। তারা অনেক সময় প্রজনন করতে ব্যর্থ হয় সঙ্গীর অভাবে। জঙ্গলে বেড়ে ওঠা উদ্ভিদগুলি একইরকম সমস্যা এর মধ্যে পড়ে। তৃণভোজী প্রাণী , রোগ, ও বনের আগুন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পূর্ণ জীবনকে ধংস করে দেয় । মানুষের যত্ন এই বিপদ থেকে ওই সব জীবকুলকে বাঁচায় ।[1]

এক্স সিটু সংরক্ষণ এর কৌশল

ইন-সিটু সংরক্ষণ এর মতই এক্স সিটু সংরক্ষণ ও হল বহু প্রাচীন পদ্ধতি । বহু যুগ আগে থেকে মানুষ উদ্ভিদ এবং প্রাণীকে পালন করে চলেছে যা হল এক্স সিটু সংরক্ষণ এর মুল ভিত্তি। কিন্তু এই বদ্ধভাবে প্রজনন করানো শুধুমাত্র বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এর জন্যই হয়েছে । আজকের দিনে বদ্ধ প্রজনন এবং প্রাণী সংরক্ষণ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি । আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ এই পদ্ধতিকে এক নতুন ধারা দান করেছে । এক্স-সিটু সংরক্ষণ এর পদ্ধতিগুলো হল - ১. প্রজাতির চিহ্নিতকরণ ২. সংরক্ষণর পদ্ধতি অবলম্বন ।

মানুষের যত্ন পদ্ধতি সমূহ

চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন হল সবচেয়ে প্রাচীনতম পদ্ধতি যেখান থেকে দরকার মত উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বন্য জীবনে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে ওইসব প্রজাতি গুলি সুবিধা পায়, তাই নয়, এর একটি এর একটি শিক্ষাগত মূল্যও আছে। এই সব কেন্দ্র গুলি তে দেশ বিদেশের বহু মানুষ ভ্রমণ করে। ওয়ার্ল্ড জু কন্সারভেশান স্ট্রাটেজি ( World Zoo Conservation Strategy ) এর মতে যেকোনো সঠিক ভাবে পরিচালিত চিড়িয়াখানায় প্রতিবছর ৬০০ মিলিয়ন মানুষ ভ্রমণ করে। বিপদগ্রস্ত উদ্ভিদ এবং প্রাণী গুলি বীজ ব্যাংক এবং জার্ম প্লাজম ব্যাংক এর মাধ্যমে সংরক্ষণ করা জেতে পারে। বীজ ব্যাংক বা সীড ব্যাংক কথাটি অনেক সময় ক্রায়োজেনিক পরীক্ষা ব্যবস্থা কে নির্দেশ করে, যার মাধ্যমে কোন উদ্ভিদ প্রজাতির বীজ কে প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট না করিয়ে কয়েকশ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যেসব উদ্ভিদ কে বীজ ব্যাংক এ সংরক্ষণ করা যায় না তাদের জন্য এক মাত্র উপায় হল ইন-ভিট্রো সংরক্ষণ যেখানে উদ্ভিদের কোন অংশ যেমন মূল কাণ্ড বা পাতার কোন অংশ কে কাচের টিউব এ রেখে কালচার মিডিয়াম এর সাহায্যে চাষ করা হয়। বিপদ গ্রস্ত প্রাণী প্রজাতি দের একইরকম কৌশলে সংরক্ষণ করা হয়। এইসব প্রাণী দের জিন গত তথ্য সংরক্ষণের জন্য জিন ব্যাংকে এদের শুক্রাণু , ডিম্বাণু অথবা ভ্রূণ সংরক্ষণ করা হয়। স্যান ডিয়েগো (San Diego) তে জুওলজিকাল সোসাইটি ফ্রোজেন জু (Frozen Zoo) প্রতিষ্ঠা করেছে যেখানে আধুনিক ক্রায়োজেনিক পদ্ধতির মাধ্যমে ৩৫৫ এর বেশি প্রাণী প্রজাতি সংরক্ষিত আছে। যার মধ্যে স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ ও পাখী বর্তমান ।

তথ্যসূত্র

  1. Environment : Problems and Solutions (BOOK)
This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.