ইহুদি-বিদ্বেষ

ইহুদি-বিদ্বেষ বলতে ইহুদি জাতি, গোষ্ঠী বা ধর্মের প্রতি যেকোনো ধরনের বৈরিতা বা কুসংস্কারকে বোঝানো হয়ে থাকে। এধরনের বিদ্বেষের মধ্যে ব্যক্তিগত ঘৃণা থেকে শুরু করে এমনকি সংঘবদ্ধ জাতি-নিধনও পড়ে। ইংরেজিতে একে বলা হয় এন্টি-সেমিটিজম (Anti-Semitism) ,যার অর্থ দাঁড়ায় সেমিটীয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ। সেমিটীয় একটি বৃহৎ ভাষাভাষী গোষ্ঠী যার মধ্যে হিব্রুভাষী ছাড়াও আরবিভাষীরাও অন্তভুক্ত। তথাপি অ্যান্টি-সেমিটিজম ইহুদি-বিদ্বেষ বোঝাতেই ব্যবহৃত হয়। ইহুদি-বিদ্বেষের ইতিহাস প্রাচীন হলেও এটি চরম আকার ধারণ করে হিটলার-শাসিত জার্মানিতে

একজন ইহুদি পৃথিবীকে ঘিরে ধরেছে - ইহুদি-বিদ্বেষী কার্টুন (ফ্রান্স, ১৮৯৮)

ধর্মীয় বিদ্বেষ

উনিশ শতকের পূর্বে ইহুদি-বিদ্বেষ ছিল মূলত ধর্ম-ভিত্তিক। খ্রিস্টান ও মুসলমানরা ইহুদি ধর্মের ব্যাপারে তাদের নিজস্ব ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও দৃষ্টিকোণের আলোকে এই বিদ্বেষভাব পোষণ করতো। তৎকালীন খ্রিস্টান-শাসিত ইউরোপে বৃহত্তম সংখ্যালঘু ধর্মীয়-গোষ্ঠী হিসেবে ইহুদিরা বিভিন্নসময় ধর্মীয় বিদ্বেষ, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হত। ধর্মীয় নির্যাতনের মধ্যে ছিল - ধর্ম-পালনে বাধা, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, দেশ থেকে বিতাড়ন, ইত্যাদি।

জাতিগত বিদ্বেষ

শিল্প-বিপ্লবের পর ইহুদিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়। এসময় ইউরোপে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটলে ইহুদিদের প্রতি জাতিগত বিদ্বেষ দেখা দেয়। জাতিতত্ত্ব সংক্রান্ত অপ-বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এই বিদ্বেষে ইন্ধন যোগায়। ইহুদিরা অনার্য ও আর্যদের চেয়ে হীন, এমন মতবাদ দেয়া হয় এবং জাতিগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে অর্থলিপ্সা, শ্রমবিমুখতা, ধূর্ততা, গোত্রপ্রীতি ও দেশপ্রেমহীনতার অভিযোগ দেয়া হয়।

তৎকালীন ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবী সমাজ ধর্মভিত্তিক বিদ্বেষকে অসংস্কৃত আচরণ মনে করলেও এই বংশানুগতিক অপতত্ত্বকে 'বৈজ্ঞানিক' তত্ত্ব মনে করে এধরনের জাতিগত সংস্কারের যথার্থতা স্বীকার করে নেয়।

নাৎসিদের ইহুদি-নিধনযজ্ঞ

এই জাতিগত বিদ্বেষ ভয়াবহ চরম আকার ধারণ করে বিংশ শতকের তৃতীয় দশকে, হিটলারের নাৎসি দল-শাসিত জার্মানিতে। ইহুদি-বিরোধী এই জাতিতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের দায়ও ইহুদিদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তারা বিভিন্ন অত্যাচার এবং নিধনমূলক আইন-কানুন প্রণয়ন করে। ১৯৩৯ সালে হিটলার বিভিন্ন দেশ আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটালে ইউরোপে ইহুদি নির্যাতন ও নিধন চরমরূপ নেয়। তারা আইন করে ইহুদিদের নিজস্ব নিবাস অধিগ্রহণ করে বন্দী-নিবাসে প্রেরণ করে এবং পর্যায়ক্রমে হত্যা করে। প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয়; এ ঘটনা 'হলোকস্ট' (Holocaust) নামে পরিচিত। নব্য ইহুদি-বিদ্বেষীরা এই নিধনযজ্ঞের ঘটনাকেও সন্দেহ বা অস্বীকার করে।

বহিঃসংযোগ

This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.