পুনরুত্থান পার্বণ

পুনরুত্থান পার্বণ বা পূণ্য রবিবার বলতে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণের তিন দিন পরে মৃতাবস্থা থেকে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্টের বেঁচে ওঠা তথা পুনুরুত্থানের অলৌকিক ঘটনাটিকে স্মরণ করার জন্য পালিত বাৎসরিক ধর্মীয় উৎসবকে বোঝানো হয়। এটি খ্রিস্টীয় বর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। খ্রিস্টানরা ঐ দিন মৃত্যুর বিরুদ্ধে যিশুখ্রিস্টের বিজয় উদযাপন করে। খ্রিস্টে বিশ্বাসীদের কাছে এটি পুরাতন জীবনের অবসানের পরে নতুন জীবনের শুরুর প্রতীক। অত্যন্ত প্রাচীন এই অনুষ্ঠানটির সর্বপ্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় ২য় শতকে। তবে সম্ভবত তারও আগেই যিশুর পুনরুত্থানের স্মরণে অনুষ্ঠান পালন করা শুরু হয়েছিল।

পুনরুত্থান পার্বণ / পূণ্য রবিবার
যিশুর পুনরুত্থানের চিত্রণ
বের্নহার্ট প্লোকোরস্টের, ১৯ শতকে অঙ্কিত
ধরনখ্রিস্টান, সাংস্কৃতিক
তাৎপর্যযিশুর পুনরুত্থান উদযাপন
উদযাপনগির্জায় উপাসনা , উৎসবমূলক পারিবারিক ভোজ, পুনরুত্থান পার্বণের ডিম খোঁজা এবং উপহার প্রদান
পালনপ্রার্থনা, পুনরুত্থান পার্বণের রাত্রিকালীন জাগরণ, সূর্যোদয় সেবা
সম্পর্কিতইহুদীদের নিস্তারপর্ব, যিশুর পুনরুত্থান পার্বণ পর্বটি এটির অনুরূপ;

ইংরেজিতে উৎসবটিকে "ইস্টার সানডে" নামে ডাকা হয় (জার্মান উৎস থেকে আগত; জার্মান ভাষায় এর নাম "অস্টার")। প্রাচীনকালে একে লাতিন ও গ্রিক ভাষাতে পাসকা নামে ডাকা হত, সে কারণে ফরাসিতে এটিকে পাক, স্পেনীয় ভাষায় পাস্কুয়া, ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।

পুনরুত্থান পার্বণটি একটি রবিবারে পালন করা হয় বলে এর আরেক নাম পূণ্য রবিবার। কিন্তু ঠিক কোন্‌ রবিবারে এটি অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত, এ নিয়ে খ্রিস্টীয় বিভিন্ন মন্ডলীর মধ্যে ব্যাপক মতভেদ আছে, এবং তারা আজ অবধি এ নিয়ে কোনও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। পশ্চিমী মন্ডলীগুলিতে পুনরুথান পার্বণ মহাবিষুব অর্থাৎ মোটামুটি ২১শে মার্চের পরের প্রথম পূর্ণিমাকে অনুসরণকারী প্রথম রবিবারে অনুষ্ঠিত হয়। সুতরাং পশ্চিমা খ্রিস্টীয় মন্ডলীদের জন্য পুনরুত্থান পার্বণটির সবচেয়ে আগের সম্ভাব্য তারিখ হল ২২শে মার্চ এবং সবচেয়ে দেরিতে অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখটি হল ২৫শে এপ্রিল। অন্যদিকে পূর্বী প্রথানুবর্তী খ্রিস্টীয় মন্ডলীর মতানুযায়ী পুনরুত্থান পার্বণটি ৪ঠা এপ্রিল ও ৮ই মে তারিখের মধ্যবর্তী একটি রবিবারে উদযাপন করা হয়; সাধারণত পশ্চিমের পার্বণের এক সপ্তাহ বা তারও পরে। তবে কোনও কোনও বছরে কাকতালীয়ভাবে পশ্চিমী ও পূর্বী পার্বণগুলি একই তারিখে পড়তে পারে।

পুনরুত্থান পার্বণটি খ্রিস্টানদের জন্য এক দীর্ঘ ধর্মীয় পর্বের কেন্দ্রবিন্দু। পার্বণের আগে বহু খ্রিস্টান যিশুর উপবাসের অনুকরণে ৪০ দিনব্যাপী প্রার্থনা ও বাৎসরিক উপবাস করেন। পশ্চিমী মন্ডলীগুলিতে বাৎসরিক উপবাস পর্বটি (যাকে ইংরেজিতে লেন্ট Lent বলা হয়) একটি বুধবারে শুরু হয়, যাকে ইংরেজিতে অ্যাশ ওয়েন্‌সডে (Ash Wednesday) বলে ডাকা হয়। উপবাস পর্বটি একটি শনিবারে গিয়ে সমাপ্ত হয়, যার নাম পূণ্য শনিবার। উপবাসের শেষের সপ্তাহটিকে পবিত্র বা পূণ্য সপ্তাহ নাম দেওয়া হয়েছে। পবিত্র শনিবারের ঠিক পরের দিন অর্থাৎ রবিবারটিই হল পুনরুত্থান পার্বণের দিন। পুনরুত্থান পার্বণ এক দিন পালিত হলেও এর সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় পর্বটি আরও আটটি রবিবার পর্যন্ত বজায় থাকে।

পুনরুত্থান পার্বণটি ভাবগম্ভীরভাবে গির্জায় ধর্মীয় উৎসাহ-উদ্দীপনায় পালিত হলেও এর সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকগুলি রীতিনীতি বসন্তের শুরুর সাথেই বেশি সম্পর্কিত। পাশ্চাত্যের শিশুরা এসময় বিভিন্ন উজ্জ্বল রঙে ডিম রঙ করে আনন্দ পায়। পার্বণের দিন বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়। সবাই নতুন পোষাক পরিধান করে।


তথ্যসূত্র

    বহিঃসংযোগ

    স্ত্রোত্র

    ঐতিহ্য
    স্বার্থচিন্তাপর
    This article is issued from Wikipedia. The text is licensed under Creative Commons - Attribution - Sharealike. Additional terms may apply for the media files.